
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গুলি খেলেও রাজপথ ছাড়েননি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিন রেজা শিশির।
তিনি বলেন, মোহাম্মদপুরে আমার হাতের ওপর দু’জন আন্দোলনকারী মারা গেছে। কিন্তু আমার যে অন্তত কিছুক্ষণের জন্যও পিছু হটতে হবে, একবারের জন্যও সেই চিন্তা মাথায় আসেনি। সেই পরিস্থিতিতে আমার রাজপথের সহযোদ্ধারা পরে আমাকে বলতে গেলে জোর করে একপাশে নিয়ে গিয়েছিল। এক মতামতে ছাত্রদলের এই নেতা এসব কথা জানান।
শাহিন রেজা শিশির জানান, জুলাইয়ে কী এক মোহে পড়ে গিয়েছিলাম। স্বৈরাচার হটানোর মোহ। সেসময় একটা বিষয়ই মাথায় ছিল, আমাদের যেসব সহযোদ্ধারা রাজপথে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, তাদের জীবন ও রক্তের সাথে কোনোভাবেই বেঈমানি করা যাবে না। সেই মোহ শেখ হাসিনাকে পলায়ন করতে বাধ্য করে আমাদেরকে ঘরে ফিরিয়েছে।
তিনি বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমান আমাদেরকে নিয়মিত নির্দেশনা দিতেন। তারেক রহমানের নির্দেশনায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে ছাত্রদের সাথে মিশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। আমি রাজধানীর অন্যতম হটস্পট মোহাম্মদপুরে ছিলাম। প্রতিনিয়ত আন্দোলন করছিলাম। দিনে আন্দোলন করলেও রাতে মোহাম্মদপুর-বছিলা-কেরানীগঞ্জ-দিয়াবাড়ি ইত্যাদি এলাকায় পালিয়ে বেড়াতাম। কারণ, ডিবি পুলিশ আগে থেকেই আমাকে আটক করার জন্য খুঁজছিল। এরমধ্যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তারা আমাদের উপর ক্ষুব্ধ ছিল। ফোন ওপেন করা মাত্রই তারা লোকেশনে চলে আসতো। সেজন্য ফোন এক জায়গায় রেখে আরেক জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে থাকতে হতো।
শিশির বলেন, জুলাইয়ে এমনও সময় গেছে কয়েকজন সহযোদ্ধাকে সাথে নিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে ফেলেছি। পুলিশকে বলেছি আমাদের নতুন করে হারানোর কিছু নেই। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীকে অনেকবারই আমরা অবরুদ্ধ করে ফেলেছিলাম।
তিনি জানান, মোহাম্মদপুরের রাজপথে সহ-যোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ সারিতে থেকে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। পুলিশ ছাত্রলীগ-যুবলীগের অস্ত্রধারী বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছে। আন্দোলনস্থলে থাকা সহ-যোদ্ধারা আমাকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছিল। সেসময় সব হাসপাতালে চিকিৎসাও নেওয়া যায়নি। চিকিৎসা দিতো না সব হাসপাতালে। পরে একটি হাসপাতালে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে পেরেছিলাম। আমাদের আন্দোলনের সেই হটস্পট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পলায়ন পর্যন্ত ছাত্র-জনতা দখলে রেখেছিল।
ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, মোহাম্মদপুর ছিল গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান হটস্পট। সেসময় মুহুর্মুহু গুলির মুখেও ছাত্রজনতাসহ আমরা পিছু হটিনি। বরং আমরাই প্রথমে ছাত্রজনতাকে সাথে নিয়ে গণভবনের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। এরপর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে গণভবন এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছিল। সেসময় নিরস্ত্র জনতার উপর বেপরোয়া গুলি করেছিল আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা। আমার সাথে থাকা বেশ কয়েকজন অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন। দু’পাশ থেকে দু’জন গুলিতে লুটিয়ে পড়েছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি বেঁচে গেছি। এক দুঃসহ সময় পার করে শেষ পর্যন্ত আমাদের ছাত্রজনতার বিজয় হয়েছে।
শিশির জানান, শুধু জুলাই অভ্যুত্থান নয়, দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের সংগ্রাম ছিল বহু বছরের। তবে শেষ পর্যন্ত ছাত্রজনতা রাস্তায় নেমে আসায় গণঅভ্যুত্থান পরিপূর্ণতা পেয়েছে। স্বৈরাচার পালিয়েছে। এ অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট আমাদের ধরে রাখতে হবে। গণতন্ত্রের দিকে আমরা সম্মিলিতভাবে এগিয়ে গেলে, জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হলে এ অভ্যুত্থান পরিপূর্ণ হবে।
ছাত্রদল নেতা শাহিন রেজা শিশির বলেন, কী এক দুঃসহ সময় গিয়েছে আমাদের। ২৮ অক্টোবরের আগে-পরে ডিবি পুলিশ আমাকে এমন কোন দিন নাই, যেসময় খুঁজে বেড়ায়নি। ডিবি হারুন নিজে এ বিষয়টি তদারকি করত। আমার অপরাধ ছিল দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনায় গণতন্ত্রের পক্ষে কার্যক্রম করা। দিনের পর দিন পালিয়ে থেকেছি। কষ্ট করেছি। তবে এখন স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ায় সেসব কষ্ট দূর হয়ে গেছে। জনগণ নির্বিঘ্নে কথা বলতে পারছে দেখে সেসব এখন আর কোন কষ্ট মনে হয় না। এখন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনাকে আমাদের ধারণ করতে হবে, জনগণের দুয়ারে গিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই।
মিরাজ খান