ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে সিঙ্গুলারিটি প্রচণ্ড তাপ সৃষ্টি করে, উজ্জ্বল বিকিরণ ছড়ায়

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ১৬ অক্টোবর ২০২০

ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে সিঙ্গুলারিটি প্রচণ্ড তাপ সৃষ্টি করে, উজ্জ্বল বিকিরণ ছড়ায়

অনলাইন ডেস্ক ॥ উনিশশ' চৌষট্টি সালের কথা। রজার পেনরোজ আর আইভর রবিনসন - দুই বন্ধু, দুই ইংরেজ বিজ্ঞানী - একজন পদার্থবিদ, আরেকজন মহাকাশবিজ্ঞানী। সেপ্টেম্বর মাসের একদিন। রবিনসন তখন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের ডালাসে কাজ করতেন, সেখান থেকে ইংল্যান্ডে ফিরেছেন। তিনি রজার পেনরোজের সাথে দেখা করতে এলেন। তাদের দু'জনের যখনই দেখা হতো তারা অনর্গল কথা বলতেন, বিষয়ের কোন অভাব হতো না। সেদিনও কথা বলতে বলতে দুজন হাঁটছিলেন লন্ডনের বার্কবেক কলেজে রজার পেনরোজের অফিসের দিকে। পথে তারা ফুটপাতের ওপর এক জায়গায় দাঁড়ালেন, রাস্তায় চলমান যানবাহনের স্রোতে একটা ফাঁক পাবার জন্য । রাস্তা পার হবার ওই সময়টুকুতে দু'জনেরই কথায় একটা বিরতি পড়লো। আর ঠিক সেই নিরবতার মধ্যেই রজার পেনরোজের মনটা যেন আড়াইশ' কোটি আলোকবর্ষ দূরের মহাশূন্যে কোথায় চলে গেল। সেখানে তিনি যেন দেখতে পেলেন একটা কোয়াসারের বস্তুকণা পাক খেতে খেতে ঘুরছে, মহাকর্ষের শক্তির টানে একটি পুরো ছায়াপথ যেন সংকুচিত হতে হতে তার নিজের কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে, যতই সংকুচিত হচ্ছে - ততই তা আরো জোরে ঘুরছে। পুরো ব্যাপারটা রজার পেনরোজ যেন স্পষ্ট দেখতে পেলেন ওই কয়েকটা মুহূর্তে। সেখান থেকেই তার মনে একটা উপলব্ধির জন্ম হলো - যা ৫৬ বছর পর তাকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার এনে দেবে। উনিশশ' ষাটের দশকে রজার পেনরোজ ছিলেন রিলেটিভিস্ট ঘরানার একজন পদার্থবিদ। তারা আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বকে পরীক্ষা এবং অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়ে আরো সম্প্রসারিত করার কাজ করছিলেন। বিশেষ করে পেনরোজ কাজ করছিলেন একটি বিশেষ দিক নিয়ে - যাকে বলে সিঙ্গুলারিটি প্রব্লেম। 'সিঙ্গুলারিটি' আর 'ব্ল্যাক হোল' বা কৃষ্ণবিবর: এটা পদার্থবিদদের জন্য একটি অদ্ভূত এবং জটিল সমস্যা। আইনস্টাইন তার জেনারেল থিওরি প্রকাশ করেছিলেন ১৯১৫ সালে, যা এতদিন বিজ্ঞানীরা স্থান, কাল, মহাকর্ষ, বস্তু এবং শক্তি - এই জিনিসগুলোকে যেভাবে বুঝতেন - তা বৈপ্লবিকভাবে পাল্টে দেয়। উনিশশ' সাল নাগাদ আইনস্টাইনের তত্ত্ব ছিল খুবই সফল, কিন্তু তার ভিত্তিতে যেসব পূর্বাভাস করা হচ্ছিল তার অনেকগুলোই ছিল অনিশ্চিত এবং সেগুলো পরীক্ষা করে দেখাও সম্ভব ছিল না। যেমন, আইনস্টাইনের সমীকরণগুলোতে দেখা যাচ্ছিল যে মহাকর্ষ শক্তি এমনভাবে ভেঙে পড়তে পারে যে তা বিপুল পরিমাণ বস্তুকে খুব ছোট একটা জায়গায় সংকুচিত করে ফেলতে পারে - যেখানে বস্তুকণাগুলো এত 'ঘন' হয়ে যাবে যে সবকিছু মিশে একাকার হয়ে 'সিঙ্গুলারিটি'র অবস্থা তৈরি হবে - এমনকি আলোও তার হাত থেকে পালাতে পারবে না। এটাই পরিচিত হয় 'ব্ল্যাক হোল' বা কৃষ্ণবিবর নামে। কিন্তু সেই সিঙ্গুলারিটির মধ্যে পরিবেশটা এমন হবে যে পদার্থবিজ্ঞানের যেসব নিয়ম আমরা জানি - তার কোনটিই আর কাজ করবে না, এমনকি আইনস্টাইনের যে থিওরি অব রিলেটিভিটি দিয়ে এর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে - তাও না। ব্ল্যাক হোলের কি সত্যি অস্তিত্ব আছে? এই কারণেই সিঙ্গুলারিটি নিয়ে গাণিতিক পদার্থবিদদের এত আগ্রহ। কিন্তু বেশির ভাগ পদার্থবিজ্ঞানীই মনে করতেন যে আমাদের এই মহাবিশ্ব এতটাই সুশঙ্খল এবং পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম দিয়ে বাঁধা - যে এর কোথাও সিঙ্গুলারিটির মতো কোন অবস্থা থাকতেই পারে না। অনেকে বলতেন, সিঙ্গুলারিটি যদি থেকেও থাকে আমাদের পক্ষে তা দেখতে পাওয়াও সম্ভব নয়। রজার পেনরোজ বলছেন, "এ নিয়ে বিরাট সংশয় ছিল। লোকে মনে করতো যে সিঙ্গুলারিটির মধ্যে কোন বস্তু পড়ে গেলে তা কোন দুর্বোধ্য উপাায়ে ঘুরতে থাকবে তার পর আবার সেটা হুশ করে বেরিয়ে আসবে। আকাশে নতুন ধরণের কিছু বস্তু: খুব ছোট, কিন্তু খুব উজ্জ্বল: উনিশশ পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে যারা রেডিও এ্যাস্ট্রনমির জগতে কাজ করতেন তাদের কিছু পর্যবেক্ষণের ফলে পদার্থবিজ্ঞানীদের এসব চিন্তাভাবনায় নানা রকমের গোলমাল সৃষ্টি করলো। এই বিজ্ঞানীরা মহাকাশে নতুন ধরণের কিছু বস্তু দেখতে পেলেন। এগুলো খুব উজ্জ্বল, খুব ছোট, এবং তাদের অবস্থানও বহু দূরে। এদেরকে প্রথমে বলা হতো কোয়েজাই-স্টেলার অবজেক্টস সংক্ষেপে কোয়াসার। অর্থাৎ এগুলো প্রায় তারার মতোই কিছু জিনিস, কিন্তু ঠিক তারা নয়। দেখা গেল এদের মধ্যে যেন অতিমাত্রায় শক্তি পুঞ্জীভূত হয়ে আছে - কিন্তু খুব ছোট জায়গার মধ্যে। বিজ্ঞানীদের কাছে ব্যাপারটা অসম্ভব মনে হলো। কিন্তু প্রতিটি নতুন পর্যবেক্ষণ থেকেই কেবল একটি সিদ্ধান্তেই পৌঁছানো যাচ্ছিল - আর তা হলো, এই কোয়াসারগুলো আসলে অতি প্রাচীন কিছু গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ যা ভেঙেচুরে যাচ্ছে এবং একটা সিঙ্গুলারিটিতে পরিণত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এবার নিজেদেরকে একটা প্রশ্ন করতে বাধ্য হলেন। তাহলে কি সিঙ্গুলারিটি কোন দিনই দেখতে পাওয়া যাবে না বলে আগে যে ধারণা করা হতো - তা সঠিক নয়? রিলেটিভিটির তত্ত্ব থেকে এই যে পূর্বাভাস জন্ম নিয়েছিল - এটা কি তাহলে শুধুই একটা গাণিতিক কল্পনামাত্র নয়? অস্টিন, প্রিন্সটন, মস্কো, ক্যাম্ব্রিজ, আর অক্সফোর্ডের মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে ভারত পর্যন্ত নানা দেশের মহাকাশবিজ্ঞানী আর গণিতবিদরা একটা তত্ত্বের অনুসন্ধানে লেগে পড়লেন - যা দিয়ে এই কোয়াসারগুলোর প্রকৃতি আর আচরণকে ব্যাখ্যা করা যাবে। বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই চেষ্টা করলেন: যে বিশেষ মহাজাগতিক পরিস্থিতিতে একটা সিঙ্গুলারিটি জন্ম নিতে পারে - সেই পরিস্থিতিটাকে চিহ্নিত করতে। একটি তত্ত্বের সন্ধানে বিজ্ঞানীরা রজার পেনরোজ তখন লন্ডনের বার্কবেক কলেজের রিডার। তিনি এগুলেন ভিন্ন একটা পথে। তার সব সময়ই লক্ষ্য ছিল কিভাবে এর অন্তর্নিহিত সূত্র এবং মূল গাণিতিক কাঠামোটা খুঁজে বের করা যায়। রজার পেনরোজ বার্কবেকে একটা বিরাট বোর্ডে নানা রকম রেখা, অংক আর ডায়াগ্রাম নিয়ে মশগুল হয়ে থাকতেন ঘন্টার পর ঘন্টা - নানা রকমের ডিজাইন আঁকতেন।এর পর ১৯৬৩ সালে আইজাক খালাৎনিকভের নেতৃত্বাধীন এক দল রুশ তাত্ত্বিক একটা গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন যা বিপুলভাবে প্রশংসিত হলো। বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই যা ধারণা করতেন - তা এতে নিশ্চিত করা হলো। ধারণাটা হলো - এই সিঙ্গুলারিটিগুলো আমরা মহাবিশ্বকে যেভাবে জানি তার অংশ নয়। মহাবিশ্বে কোন তারা ভেঙে পড়তে পড়তেও সিঙ্গুলারিটির অবস্থায় যাবার আগেই আবার সম্প্রসারিত হতে থাকবে। তাই কোয়াসারের ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ভিন্ন কোন ব্যাখ্যা আছে। রুশ বিজ্ঞানীরা কি ঠিক বলেছেন? রজার পেনরোজের মনে সন্দেহ রয়েই গেল। "আমার সব সময়ই মনে হচ্ছিল যে তারা যে পদ্ধতি ব্যবহার করছে তাতে হয়তো কোন নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। আমার মনে হচ্ছিল সমস্যাটাকে ভিন্ন ভাবে দেখতে হবে।" কিন্তু তাদের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করলেও পেনরোজ নিজে এই সিঙ্গুলারিটি সমস্যার কোন সমাধান বের করতে পারছিলেন না। সেই সময়ই তার সাথে রবিনসনের দেখা হয়।রবিনসন নিজেও সিঙ্গুলারিটি সমস্যা নিয়ে গবেষণা করছিলেন। কিন্তু ১৯৬৪ সালে লন্ডনে হেমন্তের সেই দিনে তারা কিন্তু এটা নিয়ে কোন আলোচনা করেননি । হঠাৎ আলোর ঝলকানি: কিন্তু রবিনসনের সাথে রাস্তা পার হবার সময় হঠাৎ পেনরোজের মাথায় একটা ভাবনা খেলে গেল। তিনি বুঝলেন, রুশ বিজ্ঞানীরা ভুল করেছেন। যখন একটা তারা বা ছায়াপথ তার সকল শক্তি, গতি এবং ভর নিয়ে এক সঙ্গে সংকুচিত হতে থাকে - তখন এত উচ্চ তাপমাত্রার সৃষ্টি হবে যে চারদিকে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ ছড়িয়ে পড়বে। বস্তুকণার মেঘটা যত ছোট হতে থাকবে, ততই তা আরো বেশি উজ্জ্বল আভা ছড়াতে থাকবে। এবার তিনি তার বোর্ডে করা ড্রইং আর জার্নালের স্কেচগুলো মনে মনে মিলিয়ে দেখে ভাবতে চেষ্টা করলেন, কোন্ বিন্দুতে পৌঁছার পর রুশ বিজ্ঞানীদের কথামতো সেটা আবার সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। পেনরোজ সেরকম কোন বিন্দু দেখতে পেলেন না। তিনি তার মনের চোখ দিয়ে দেখতে পেলেন, তারাটি যে ভেঙে পড়ছে তা আসলে অব্যাহত থাকবে। এর অতি ঘন কেন্দ্রটির বাইরে যে আলো তৈরি হবে তা আমাদের ছায়াপথে যত তারা আছে তাদের মোট উজ্জ্বলতার চেয়েও বেশি হবে। আর কেন্দ্রের ভেতরে আলোর গতিপথ নাটকীয়ভাবে বেঁকে যেতে থাকবে, স্থান-কাল দুমড়ে-মুচড়ে যাবে। সব দিক এসে এক জায়গায় মিলে যাবে, এমন একটা মুহূর্ত আসবে যেখান থেকে আর পেছন ফেরা যাবে না। আলো, স্থান এবং কাল সবকিছু থেমে যাবে। তৈরি হবে এক ব্ল্যাক হোল - কৃষ্ণবিবর। সেই মুহূর্তে পেনরোজ অনুভব করলেন - সিঙ্গুলারিটির কোন বিশেষ পরিস্থিতির দরকার নেই, আমাদের মহাবিশ্বে এটা অসম্ভব কিছু তো নয়ই, বরং অবধারিত একটা ব্যাপার। সেই নিরব মুহূর্তগুলোতেই মাথায় খেলে গেল সমাধান: পেনরোজ আর রবিনসন রাস্তা পার হলেন, অন্য পারে গিয়ে আবার তাদের মধ্যে কথা শুরু হলো। আর সাথে সাথেই, পেনরোজ যা চিন্তা করছিলেন - সব ভুলে গেলেন। কিন্তু পরে বন্ধুকে বিদায় দিয়ে তার অফিস ঘরে ফিরে আবার বোর্ড আর কাগজের তাড়া নিয়ে বসলেন পেনরোজ। বাকি বিকেলটুকু স্বাভাবিকভাবে এবং খোশমেজাজেই কাটলো তার। তিনি বুঝতে পারছিলেন না কেন তার মনটা এত ভালো লাগছে। তিনি পুরো দিনটায় কি কি হয়েছে তা মনে করার চেষ্টা করলেন। একসময় তার মনে পড়লো সেই রাস্তা পার হবার সময়কার নিরব মুহুর্তটার কথা। এবং সাথে সাথে তার আবার সব মনে পড়ে গেল। তিনি বুঝলেন, তিনি সিঙ্গুলারিটি প্রবলেমের সমাধান পেয়ে গেছেন তিনি। তিনি তখন লিখতে শুরু করলেন তার সমীকরণগুলো বার বার সেগুলো পরীক্ষা করলেন, সম্পাদনা করলেন, নতুন করে সাজালেন। যুক্তিগুলো তখনও সম্পূর্ণ পরিশীলিত হয় নি কিন্তু সবই খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াটা রজার পেনরোজ এমনভাবে দেখতে পেলেন যে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল - এই মহাবিশ্বে আসলে শত শত কোটি সিঙ্গুলারিটি ছড়িয়ে আছে। এটা ছিল এমন এক ধারণা যা বিশ্বজগৎ সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে পাল্টে দেবে এবং বর্তমানে আমরা যা জানি তাকে প্রভাবিত করবে। দু'মাসের মধ্যে রজার পেনরোজ তার তত্ত্ব নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে শুরু করলেন। ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স নামের জার্নালে তার এক নিবন্ধ প্রকাশিত হলো ডিসেম্বরের মাঝামাঝি - আইভর রবিনসনের সাথে রাস্তা পার হবার ঠিক চার মাস পর। বিতর্ক, প্রত্যাখ্যান আর বিরোধিতা: তার এই নিবন্ধের প্রতিক্রিয়া যা হলো - তা হয়তো তিনি আশা করেননি। "পেনরোজ সিঙ্গুলারিটি থিওরেম" নিয়ে বিতর্ক হলো, অনেকে একে প্রত্যাখ্যান করলেন, এর বিরোধিতা করলেন। রুশ বিজ্ঞানীরাও ক্ষুব্ধ হলেন। কিন্তু তার কিছু দিন পর প্রকাশ পেলো, রুশ বিজ্ঞানীদের গবেষণায় কিছু গুরুতর গাণিতিক ভুল ছিল, এবং তাদের তত্ত্ব আর যৌক্তিক নয়। উনিশশ' পঁয়ষট্টি সালের শেষ দিক নাগাদ পেনরোজের উপপাদ্য লোকের নজর কাড়তে শুরু করলো। মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও গঠন নিয়ে এর পর থেকে যত কিছু গবেষণা হয়েছে তাতে এই সিঙ্গুলারিটির ধারণা গৃহীত হতে লাগলো। মানুষের মনেও সিঙ্গুলারিটির ধারণা ঢুকে যেতে লাগলো। অবশ্য "ব্ল্যাক হোল" এই নতুন নামে - যা প্রথম ব্যবহার করেছিলেন আমেরিকান বিজ্ঞানবিষয়ক সাংবাদিক এ্যান ইউয়িং। আরেক বিজ্ঞানী স্টিভেন হকিং মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে তার নতুন তত্ত্বকে বিকশিত করেছিলেন রজার পেনরোজের উপপাদ্য থেকেই। তারা দু'জন সিঙ্গুলারিটি নিয়ে একসাথে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন রজার পেনরোজ ছাড়াও রেনইনহার্ড গেনজেল এবং আন্দ্রেয়া গেজ। এ দুজন আমাদের পৃথিবী যে ছায়াপথের অংশ - সেই মিল্কিওয়ের কেন্দ্রস্থলে এক বিশাল ব্ল্যাক হোলের সন্ধান পেয়েছেন। মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে যে বিগ ব্যাং থিওরি বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব প্রচলিত আছে - তার বিকল্প আরেকটি তত্ত্বও প্রস্তাব করেছেন রজার পেনরোজ, যার নাম কনফর্মাল সাইক্লিক কসমোলজি। হয়তো প্রাচীন কোন ব্ল্যাক হোল থেকে কোন সংকেত পাওয়া গেলে তার প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। ব্ল্যাক হোলের ছবি: এক সময় ব্ল্যাক হোলের ধারণাটা ছিল আইনস্টাইন আর পেনরোজের বিতর্কিত তত্ত্ব। কিন্তু এখন ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলাও সম্ভব হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী ক্যাটি বোম্যানের নেতৃত্বে ২০১৩ সালে একদল গবেষক এমন একটি অ্যালগরিদম তৈরি করেন - যাতে আশা সৃষ্টি হয় যে হয়তো এবার ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা সম্ভব হবে। সেই অ্যালগরিদম ব্যবহার করেই ২০১৯ সালে ইভেন্ট হরাইজন নামে একটি টেলিস্কোপ প্রথমবারের মত ব্ল্যাক হোলের ছবি তুলতে সক্ষম হয়। এক সময়কার বিতর্কিত তত্ত্বের নাটকীয় চাক্ষুষ নিশ্চয়তা পাওয়া গেল সেই ছবিতে। রজার পেনরোজের বয়স এখন ৮৯ বছর । তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত, কিন্তু তার মনে এখন অন্য আরো অনেক ভাবনা কাজ করছে, একসাথে তিনটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখছেন তিনি। "এটা বিরাট সম্মান। কিন্তু এখন সবসময়ই ফোন বাজছে - লোকে অভিনন্দন জানাচ্ছে, সাংবাদিকরা সাক্ষাৎকার চাইছে। আমি চেষ্টা করছি এর সাথে মানিয়ে নিতে" - বলছেন তিনি। তার নবতম তত্ত্বের কাজে এ কারণে বিঘ্ন ঘটছে, কিন্তু পেনরোজই সবচাইতে ভালো করে জানেস, নিরবতার শক্তি কতখানি, আর কীভাবে তা আলোর ঝলকানির মত নতুন ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×