ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নভরা চোখের তরুণরা যেন ভুল না করে

প্রকাশিত: ২২:২৪, ১৬ অক্টোবর ২০২০

স্বপ্নভরা চোখের তরুণরা যেন ভুল না করে

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তরুণ সম্প্রদায়ই সর্বাগ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জাতির বিনির্মাণ থেকে আরম্ভ করে যখনই কোন কালবৈশাখীর ঝড় দেশকে উথাল-পাতাল করে দিয়েছে, তখনও তরুণ সম্প্রদায় সর্বাগ্রে ছিল ন্যায়ের পথে। এবার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকার সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে। এ দেশের অর্থনীতি জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশে সীমিত পরিসরে হলেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। যে কর্মী ছাঁটাই বেসরকারী খাতে শুরু হয়েছিল, তা অনেকাংশে কমে এসেছে। আমাদের দেশে যুব সমাজের সংজ্ঞা অনুসারে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়স উপযোগী প্রায় পাঁচ কোটি যুবক-যুবতী রয়েছে। করোনাকালে তাদের অনেকের ওপরই চাপ পড়েছে। কারও কারোর মানসিক প্রশান্তির বদলে বিকার ঘটেছে। যেখানে করোনা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সবার উচিত ছিল মানুষের হিত সাধনার্থে কাজ করে যাওয়া, একটি পক্ষ কিন্তু ঠিকই তা করে যাচ্ছে। আরেকটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী নানাভাবে সামাজিক অসঙ্গতি ও অন্যায়কে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। হঠাৎ করে ধর্ষণ নিয়ে সমাজে একটি শ্রেণী তোলপাড় করতে চাচ্ছে। এমনকি অন্যায়ভাবে সংবাদ পরিবেশনকালে ঘৃণ্য ধর্ষকদের একটি বিশেষ গ্রুপের বলে চিহ্নিত করতেও চেষ্টা করছে। অথচ ধর্ষক কিংবা পরসম্পদ লুণ্ঠনকারী কোন দলের হয় না। এরা হায়েনা, মানবতার শত্রু। হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানাবো, তারা ৬ থেকে ৮ বছর বয়সী চারজন নিরীহ শিশুকে বরিশালের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যিনি ধর্ষক চিহ্নিত করেছিলেন, সেটি স্থগিত করা এবং গত রবিবার তাদের খাস কামরায় জবানবন্দীর ব্যবস্থা নেয়াসহ ছেড়ে দেয়া- অত্যন্ত ধন্যবাদের কাজ করেছে। আমার কেন জানি মনে হয়, ধর্ষণের মতো একটি ঘৃণ্য সামাজিক ও নরপৈশাচিকমূলক ঘটনার ক্ষেত্রেও কিছু সাবোটাজও থাকতে পারে। একমাত্র গোয়েন্দা বাহিনী পারে যেগুলো প্রকৃত ধর্ষণ নয় সেগুলো উদ্ঘাটন করে যারা মিথ্যা অভিযোগ করছে, আবার যারা এদের আইনের আওতায় এনে সোপর্দ করছে এবং ভুল শাস্তি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির উদ্যোগে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেয়া। এদিকে যারাই এ ধরনের ধর্ষণমূলক ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের অবশ্যই মৃত্যুদ-ের যে বিধান সরকার করেছে তা প্রশংসনীয়। পাশাপাশি আশা করা আমাদের সুস্থ বিবেক জেগে উঠুক যেন শিশু-নারী নির্বিশেষে কেউ যাতে ধর্ষিত না হয়। করোনাকালে হঠাৎ করে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়াটা যেমন দুঃখজনক, তেমনি বাঙালী জাতি হিসেবে লজ্জাকর। যারা আইন প্রয়োগকারী তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করছেন। কিন্তু যে সমস্ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তা যদি না ঘটত তবে মানুষ হিসেবে ভাল লাগত। নিজের প্রতি নিজের ধিক্কার জন্মাচ্ছে। এজন্য কেবল আইনের প্রয়োগ নয়, বরং সামাজিক প্রতিরোধও দরকার। আবার যারা রাস্তা বন্ধ করে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানাচ্ছে সেখানেও নানা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রশ্ন জাগছে মনে, কারা এদের অর্থের জোগান দিচ্ছে? কারোর প্ররোচনায় এমনটি করছে কিনা, শিশু ও নারীকে মানুষের যথার্থ সম্মান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কি না সেটি খুঁজে দেখা দরকার। প্রকৃত ধর্ষণকারীদের শাস্তি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। গত সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। মঙ্গলবার অধ্যাদেশ জারির পরপরই এটি কার্যকর করা হয়েছে। একজন ধর্ষক যে দলেরই হোক তার পরিচয় জানোয়ার ও হায়েনা হিসেবে। অন্যদিকে ছেলে শিশুরাও কোথাও কোথাও নির্যাতিত হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। বস্তুত বিশ্বব্যাপী ধর্ষণ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। আজ বিশ্বায়নের যুগে লোভ-লালসায় মত্ত এক শ্রেণীর মানুষ নরপিশাচ হয়ে উঠেছে। এদের তৃণমূল পর্যায় থেকে নিবৃত্ত করতে হবে। ইংরেজী প্রবচন ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর।’ -এটি করতে হলে দোষারোপের রাজনীতি ছেড়ে, অন্যায়কে প্রশ্রয় বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন না করে, বরং সেলফ কারেক্টিভ মেজার্স গ্রহণ করতে হবে। বস্তুত ধর্ষণ কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং ধর্ষককে অবশ্যই সমাজ-সংসার থেকে এক ঘরে করার পাশাপাশি মৃত্যুদ- দেয়ার প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হতে হবে। একইভাবে এ ঘৃণ্য কীটদের সমাজ থেকে উৎপাটিত করতে হবে। আবার অন্যায়ভাবে যারা মিথ্যা অভিযোগ আনবেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য সরকারপ্রধান কঠোর পরিশ্রম করছেন। কতগুলো বিচ্ছিন্ন ধর্ষণ কাহিনী বিচার-বিশ্লেষণ করলে মনে হয় ইহলোক কেবল নয়, পরকালের ভয়ও নেই। প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে ধর্ষণ, মাদক, সন্ত্রাসবিরোধী বক্তব্য রাখা যেতে পারে। ধর্ষকদের ধরতে আবার কেউ কেউ অতিরঞ্জিত সংবাদ সম্প্রচার করছে কিনা সেটিও দেখা দরকার। যেমন, রবিবার সকালে একটি পত্রিকা লিখেছে যে, ১৭ বছরের এক কিশোরী ভুল স্থানে নামায় দশজন ধর্ষণ করে, যার মধ্যে একজন হচ্ছে পথশিশু। এ জায়গাটায় একটু খটকা জন্মায়। পথশিশুর পক্ষে কি ১৭ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ করা সম্ভব? একমাত্র আল্লাহ মাবুদ জানেন। বিএনপি-জামায়াতীরা এখন যে কার ঘাড়ে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে শামিল হয়েছে জানি না। কেননা যে কোন মূল্যে ধর্ষকদের শাস্তি হতে হবে এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বসে নেই। তথাকথিত এ্যাকটিভিস্টদের উচিত প্রকৃত ঘটনা প্রকাশে বিশ্বায়নের এ যুগে সহায়তা করা এবং দোষীরা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেন শাস্তি পায়। খুব খারাপ লাগল, যখন একজন সাংবাদিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বললেন যে, পানশালা, পতিতালয় এগুলো চালু করা যায় কিনা। এ ধরনের কথা বলার আগে তার নিজের ওজনটি সমাজে কোথায় বোঝা উচিত ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাতে হয় এ কারণে যে, এদেশের সাধারণ মানুষ ওই উজবুক সাংবাদিকের মতো পানশালা-পতিতালয় চালু করলে মেনে নেবেন না বলে জানিয়েছে। আসলে সমাজে নানা শ্রেণীর মধ্যে আজ বিদেশী অনুচর ঢুকে গেছে বলে অবস্থাদৃষ্টে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মনে হয়। আমাদের দেশে অবাধ আকাশ সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া উচিত। আবার ছেলে-মেয়েদের যে বিয়ের বয়স আছে ২১ এবং ১৮ বছর সে সময়ে যাতে বিয়ে হয়, সেটি যদি সামাজিকভাবে পালন করা সম্ভব হয়, তাহলে তা দেশ এবং জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে। কেননা, এতে কিছুটা হলেও ধর্ষণ হ্রাস পেতে পারে। তবে তরুণ-তরুণীরা যাতে মাদকমুক্ত থাকেন এবং বাস্তবতার ধারায় শুদ্ধ বাঙালী চরিত্রের উন্মেষ ঘটাতে সক্ষম হন সেটি আরও বেশি করে শিক্ষণীয় হতে হবে। নৈতিক বলে বলীয়ান হতে হবে। স্নেহময় সম্পর্কের যে ব্যাপ্তি পূর্বে ছিল এখন তা বিলীন হতে বসেছে। সারাক্ষণ ইন্টারনেটে ব্রাউজিং করে আর যাই হোক প্রকৃত ও বিশুদ্ধ মস্তিষ্কের পরিচয় দেয়া সম্ভব হয় না। আধুনিকতার নামে বেলাল্লাপনা, মাদক সেবন, সন্ত্রাস করা, যুবা শ্রেণীর স্বপ্ন নষ্ট করা এবং অস্ত্র হাতে দিয়ে বিপথগামী করা উচিত নয়। বিশ্বায়নের কুপ্রভাবের ফলাফল আমাদের যুবা শ্রেণীর মস্তিষ্কে ধারণ করা ও পরসম্পদ আত্মসাতকারীরা সমাজ, রাষ্ট্র ও দলের বোঝা এবং পঞ্চম স্তম্ভ হতে বাধ্য। নারী পাচারকারীদের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। আমাদের দেশের অনেক দানবীর, শিক্ষাবিদ ও মানবকল্যাণমুখী মানুষ ছিলেন এবং এখনও আছেন। তাদের প্রকৃত সম্মান জানানো দরকার, যাতে করে আমরা এগিয়ে চলতে পারি। আমরা গুণীর কদর জানানোর ক্ষেত্রে ইদানীং যেন বড় কৃপণ হয়ে পড়েছি। ছেলেবেলায় কুমিল্লা বাগিচাগাঁও বসবাস। শহরে থাকার সুবাদে মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকানের সঙ্গে ছিল নিবিড় সখ্য। আবার কুমিল্লায় ঈশ্বর চন্দ্র পাঠশালা, যেটি বর্তমানে একটি উন্নতমানের বিদ্যালয়। মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য কুমিল্লায় ১৯১২ সালে রামমালা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। বাবার সঙ্গে সেই রামমালা লাইব্রেরিতে যখন ছেলেবেলায় যেতাম মনে হতো এক অপার্থিব ভুবনের বাসিন্দা। বস্তুত মহেশ বাবু তার মায়ের নামে রামমালা লাইব্রেরি ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন, যা দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের আকর ছিল। ঈশ্বর চন্দ্র পাঠশালা ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছেলেদের জন্য রামমালা হোস্টেল ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এবং মেয়েদের জন্য নিবেদিতা গার্লস হোস্টেল ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য তার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিটঘরে সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি কসবায় সেতুসহ নানাবিধ সেবামূলক কর্মকা- করেছিলেন। সম্প্রতি মহেশচন্দ্রের নামে ‘বিটঘর মহেশচন্দ্র কলেজ’ মোঃ মুনতাসির মহিউদ্দিন (অপু) প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানে মোস্তফা কামাল, অধ্যক্ষ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিটি মডেল কলেজের সঙ্গে তরুণদের নিয়ে আলাপ হলো। অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে প্রভাষক, অফিস সহকারী এবং এমএলএসএস পদে নিয়োগের জন্য আমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন অধ্যাপক মোট তিনজন সেখানে বহিস্থ পরীক্ষক হিসেবে যাই। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, ৭ জন অধ্যক্ষ পদপ্রার্থীর কেউই যোগ্যতা পূরণ করতে পারলেন না। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা বিভাগে প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেখা সত্ত্বেও স্বল্পসংখ্যক পদপ্রার্থী। এমনকি উৎপাদন ব্যবস্থাপনাতেও প্রার্থী সংখ্যা খুব কম। আজকাল ছাত্রছাত্রীরা মৌলিক বিষয়ে বেশি পড়তে চায় না বলে প্রতিভাত হলো। এ বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবিদদের গবেষণা করা দরকার। বিটঘরে মহেশ বাবুর নামে কলেজ হয়েছে দেখে খুব ভাল লাগল। তার নিজের জায়গায় নয় বরং অন্য আরেকজন জায়গা কিনে অনেক সম্মানের সঙ্গে মহেশ বাবুর নামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আসলে যে জাতি গুণীর কদর জানে না সে জাতির উন্নয়নে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি হয়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের জায়গা-জমি দখলে একদল ব্যস্ত থাকে। এদের দল নেই, এরা নব্য রাজাকার। এরা আইনের আওতায় থাকলে দেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গল হবে, মানুষের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হবে। এদিকে কুমিল্লা শহরে অবস্থিত বাগিচাগাঁওতে পৈত্রিক সম্পত্তি আছে। এটি বেদখলের চেষ্টা করে যাচ্ছে একদল দুষ্কৃতকারী। তারা সেখানে আমার জমিতে লাগানো গাছপালা ধ্বংস করা, জায়গার নেমপ্লেট ভেঙ্গে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকায় দিনে দিনে সম্পত্তি বেদখলের পাঁয়তারা করছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রশ্রয়ে থেকে পেশীশক্তিও দেখাচ্ছে। অথচ জীবনভর আমাদের পরিবার দেশের শিক্ষা বিস্তারে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আমার পিতা মরহুম প্রফেসর মোবাশ্বের আলী একুশে পদক এবং বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত। যিনি ভাষাসৈনিক, গবেষক এবং অনুবাদক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। তার রচিত ‘বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করেছেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ছিল সাতচল্লিশ। তিনি বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার ইতিহাস গ্রন্থেরও প্রধান সম্পাদক ছিলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজসহ দেশের বহু নামকরা প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করেছেন ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে। তার সন্তান হিসেবে আমিও দেশের শিক্ষার প্রসারে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ এ সময়েও আমার নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষা করতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে যথাযথ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। আসলে করোনাকালে অন্যের জমির ওপর যারা অবৈধ দখল ঘটাতে চায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। দেশে যে প্রায় পাঁচ কোটি তরুণ-তরুণী রয়েছে তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটাতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এদেশের যুব সম্প্রদায়ের একটি অংশ, যারা টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালাতেন, এমনকি পরিবারে তাদের উপার্জিত অর্থ প্রেরণ করতেন, তারা আজকাল বেকার হয়ে পড়েছেন। এদের সংখ্যা দশ লাখের মতো হবে। তবে অনলাইনে পড়াশোনা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে ৯৯%-এর বেশি গৃহশিক্ষকতা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার তরুণ সম্প্রদায়কে সহায়তা দিতে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু এ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা টার্গেট গ্রুপ তরুণ-তরুণীদের কাছে নানাভাবে সময়মতো বাস্তবায়নে বাধা পাচ্ছে। আবার একটি চক্র কিশোর গ্যাং তৈরি করতে ব্যস্ত আছে। অবস্থা হচ্ছে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করবে। আমাদের দেশের মতো এত বেশি পরশ্রীকাতর জাতি বোধ হয় খুব কমই আছে। তাই তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা অভিধানে থাকা পরশ্রীকাতর শব্দটি নিয়ে দুঃখ পেতেন। দেশে করোনাকালে অনেক তরুণ-তরুণী গ্রামে ফেরত গেছে। তাদের যদি যথার্থ অর্থে স্থানীয় প্রশাসন ও নেতৃবৃন্দ সঠিক পন্থায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত গ্রামকে স্মার্ট শহর বানানোর উদ্যোগে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হতেন, তবে প্রধানমন্ত্রীর যে করোনাকালে অর্থনৈতিক অগ্রগতির কর্মকা- বেগবান হচ্ছে, তাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করত বলে বিশ্বাস করি। যথার্থ অর্থেই ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ মন্তব্য করেছেন যে, বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণ ম্লান করে দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত অর্থনীতির গতি-প্রকৃতিকে বলিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তাদের নতুন করে তৈরি করা কলেটারাল ফ্রি ল্যান্ডিং এবং প্রশিক্ষণের জন্য উদ্যোগ দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে গ্রহণ করতে হবে। এমন ধরনের ব্যবস্থা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে যা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দেখানো পথ ধরে তরুণ গোষ্ঠীকে, যারা তারুণ্যের জোয়ারে দেশের উন্নয়নে ‘সিনার্জি’ সৃষ্টি করতে পারবে এবং তাদের উদ্ভাবনী ও ধীশক্তির প্রায়োগিক কলাকৌশলকে বাস্তবায়নের শক্তিমত্তা জাতির বিকাশকে সমৃদ্ধতর করতে সক্ষম হবে। এদিকে তারুণ্যকে যাতে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় সেজন্য ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনে স্বাভাবিক পন্থায় অনলাইনের মাধ্যমে সুযোগ হলেও শহর এবং গ্রামাঞ্চলের মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য ক্রমশ সৃষ্টি হচ্ছে। আবার এক শ্রেণীর যুবক-যুবতী এবং বয়স্কও ইন্টারনেটের অপব্যবহার ঘটাচ্ছে। অশ্লীল কর্মকা-ে ব্যবহার করছে। এদিকে করোনাকালে আশঙ্কাজনক হারে তালাকের আবেদন বাড়ছে বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনীতি আসলে কখনও নৈতিকতা এবং দুর্নীতিকে বিবেচনায় আনে না। কিন্তু আচরণগত অর্থনীতির মাধ্যমে তরুণ গোষ্ঠীর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ সাধন করা দরকার। তরুণদের একটি শ্রেণী আবার মাদক সেবন, হিংস্রতা এবং অপশক্তির ধারা লালন-পালন করছে। এদের তাদের পিতা-মাতা এবং শিক্ষকম-লী কর্তৃক কাউন্সিলিং করা দরকার। টিভি প্রিন্ট এবং অনলাইন মিডিয়ায় হিংস্রতার চেয়ে বরং মানসিক প্রশান্তিতে তরুণ সম্প্রদায় কেমন করে ভাল থাকতে পারে তার বিকাশ ঘটাতে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। তরুণরা দেশের ভবিষ্যত জাতি গঠন এবং অর্থনীতির নেতৃত্ব দেবেন। মাদক সেবন, ধর্ষণবিরোধী এবং পরসম্পদ লুণ্ঠনকারীদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। আত্মঘাতী তারুণ্য যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন থাকবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজকে ভার্চুয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে তরুণ-তরুণীদের স্বকর্ম সংস্থানের পথপ্রদর্শক হিসেবে তৈরির ব্যবস্থা করার। দেশের সকল তরুণ-তরুণীকে জাতির পিতার আদর্শ ধারণের ও মনোজগতে অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তরুণ-তরুণীদের সুস্থ চিন্তা-চেতনা এবং মনোবিকাশের পাশাপাশি জাতি গঠনে কর্মদক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। একটি সুন্দর রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সহযোগী হতে হবে তরুণ গোষ্ঠীকে। কোন ধরনের হঠকারিতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে যুবাদের। লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট ও আইটি এক্সপাট [email protected]
×