ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নেদারল্যান্ডস-নিউজিল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আসছে

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

নেদারল্যান্ডস-নিউজিল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আসছে

এম শাহজাহান ॥ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে নেদারল্যান্ডস-নিউজিল্যান্ড থেকে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বেসরকারী খাতের শতাধিক আমদানিকারক পেঁয়াজের বিকল্প বাজার হিসেবে এই দুটি দেশকে বেছে নিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ডের পেঁয়াজের জাত ভাল, ঝাঁজালো এবং দ্রুত পচনশীল নয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় দামও অপেক্ষাকৃত কম। এছাড়া এ দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দেশের তৈরি পোশাক রফতানি হয়। এর পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের গুঁড়োদুধ এদেশে খুব জনপ্রিয়। যতদিন নিজস্ব উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয়, ততদিন পেঁয়াজের বিকল্প বাজার হিসেবে এ দুটি দেশ থেকে আমদানি করা যাবে। এছাড়া উৎপাদনে শীর্ষ চার জেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণে সরকারী উদ্যোগে হিমাগার তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে সবধরনের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জানা গেছে, গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতায় এবার আগে-ভাগে ‘পেঁয়াজ কূটনীতি’ নিয়ে কাজ শুরু করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত রফতানি বন্ধের আগেই সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি তুরস্ক থেকে ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আনার দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এছাড়া বিকল্প বাজার হিসেবে মিয়ানমার, চীন, মিসর, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামকে বিবেচনায় রাখা হয়। এরই মধ্যে সাতটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে, এবার রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। ভারতের বিকল্প বাজার হিসেবে অন্তত সাতটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা সম্ভব। ইতোমধ্যে অন্যতম ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস আলম ও মেঘনা গ্রুপের পাশাপাশি দেশের ৫ শতাধিক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করেছে। অনুমতি নেয়াসাপেক্ষে আমদানি হলে পেঁয়াজে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আমদানিকৃত সাত দেশের পেঁয়াজ দেশে ঢুকলে দেশে আর কোন পেঁয়াজের সঙ্কট থাকবে না। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফরউদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, চাহিদা মেটাতে এবার রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। টিসিবি তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আনবে। আর বেসরকারী খাত আরও ছয়টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এরমধ্যে প্রথমবারের মতো নেদারল্যান্ডস এবং নিউজিল্যান্ডের পেঁয়াজ আসবে দেশে। তিনি বলেন, এ দুটি দেশের পেঁয়াজের জাত ভাল, আমদানি খরচও কম। এ কারণে এখানকার পেঁয়াজ আনা গেলে তা সাধারণ মানুষের জন্য ভাল। তিনি বলেন, বিকল্প বাজারের পাশাপাশি সরকার নিজস্ব উৎপাদনেও জোর দিচ্ছে। আশা করছি, সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে দেশে পেঁয়াজের দাম কমবে। ভবিষ্যতে পেঁয়াজের কোন সঙ্কট হবে না। জানা গেছে, এস আলম গ্রুপ নেদারল্যান্ডস থেকে এক চালানে ২২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহ করেছে। অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মেটাতে দ্রুততম সময়ে এই পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে আমদানির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া মেঘনা গ্রুপ মিসর থেকে পেঁয়াজ আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এবারই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। ভারতের বিকল্প দেশগুলো থেকে প্রায় ছয় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এত কম সময়ে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহে এটি রেকর্ড বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর থেকেই এ মাসের শুরুতে ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেয়া শুরু করেন। এ মাসের শুরু থেকে ভারত রফতানি বন্ধের দিন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা দুই লাখ ২৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন। রফতানি বন্ধের পর আরও চার লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন তারা। এ সপ্তাহেই আমদানি অনুমতির পরিমাণ সাড়ে ছয় লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা গেছে। এদিকে পেঁয়াজ আমদানিতে সবধরনের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আমদানির ওপর থেকে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এছাড়া আমদানিতে বাকিতে এলসি বা ঋণপত্র খোলার সুযোগ, ঋণ সুবিধা এবং বন্দরে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ছাড়করণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণে এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে টিসিবি ৩৬ টাকা কেজি দরে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এর বাইরে টিসিবি ট্রাকসেলে ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এতে করে এবার পেঁয়াজ আমদানি বাড়বে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেয়া হয়েছে তা রেকর্ড। এই পেঁয়াজ আমদানি হলে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে। দেশে কোন সঙ্কট থাকবে না। ভোক্তারা ন্যায্যদামে পেঁয়াজ কেনার সুযোগ পাবেন। পেঁয়াজ সংরক্ষণে হিমাগার করা হবে ॥ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণে হিমাগার তৈরি করা হবে। বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফরউদ্দীন ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলা সফর করছেন। মঙ্গলবার এই দুই জেলার জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজ নিয়ে বৈঠকের পর তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ সংরক্ষণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় উৎপাদনে শীর্ষ জেলাগুলোতে পেঁয়াজের জন্য হিমাগার তৈরি করে দেয়া হবে। এতে পেঁয়াজ নষ্ট বা পচবে না। পরে সচিব সরাসরি পেঁয়াজের মজুদ দেখতে কৃষকের ঘরে ঘরে যান। বাণিজ্য সচিব রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বেমকোলা গ্রামের কৃষক নিশিথ কান্তি সিকদারের সংরক্ষিত পেঁয়াজ দেখতে যান। ওই সময় তিনি বলেন, দেশী পেঁয়াজ মাচায় সংরক্ষণ করা হয়েছে। এতে পচে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অথচ এই পেঁয়াজ বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ করা হলে নষ্ট হওয়ার পরিমাণ অনেক কমে যেত। আজ বুধবার সচিব মানিকগঞ্জ জেলা সফর করবেন। এদিকে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বাজারভেদে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৯০-১০০ এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। তবে সরবরাহ বাড়ালেও দাম কমার তেমন কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
×