ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মসজিদে বিস্ফোরণ॥ তিতাসের প্রতিবেদন নিয়ে মসজিদ কমিটি ও নিহতের স্বজনদের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

মসজিদে বিস্ফোরণ॥ তিতাসের প্রতিবেদন নিয়ে মসজিদ কমিটি ও নিহতের স্বজনদের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের পশ্চিমতল্লা বাইতুস সালাত জামে মসজিদের বিস্ফোরণের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিতাসের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনসহ এলাকাবাসী এবং মসজিদ কমিটি সদস্যরা। নিহতদের পরিবার, এলাকাবাসী এবং মসজিদ কমিটি দাবি, তিতাস তাদের দায় এড়ানোর জন্য নিরেপেক্ষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঁচানোর জন্যই তদন্ত প্রতিবেদনে নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছেন তারা। এতে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। নারায়ণগঞ্জের মসজিদের বিস্ফোরণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার তিতাসের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মসজিদের ভেতরে তিতাসের গ্যাস লিকেজের কারণে বিস্ফোরণে নিহত এবং আহত হওয়ার কারণ হিসেবে মসজিদ কমিটির অবহেলা করেছে এ মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। এ বিষয়ে শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর তদন্ত প্রতিবেদনের উপর অসস্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তিতাস কর্তৃপ্ক্ষ নিজেদের দায় এড়ানোর জন্য মসজিদ কমিটির উপর দোষ চাপিয়েছেন। তিতাস ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করে এমন প্রতিবেদনে আমরা হতাশ হয়েছি। তিনি বলেন, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তিতাস গ্যাস লিকেজ মেরামত করার জন্য তিতাস গ্যাস অফিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সাধারণ সম্পাদকের কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনের টাকার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এতেই বুঝা যায় তিতাস কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তা শুধু নিজেদের আত্মরক্ষার কৌশল নিয়েছেন মাত্র। তিনি আরো বলেন, মসজিদের ভেতরে কোন গ্যাসের লাইন নেই। মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল মালেক নেসারীর ছেলে নাইমুল ইসলাম জানান, তিতাস নিহতদের পরিবারের প্রতি যাতে ক্ষতিপুরণ দিতে না হয় এজন্য তারা পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে তিতাস দায় এড়ানোর জন্য মসজিদ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে। তিতাস তার দায় এড়ানোর চেষ্টা করলে নিহতরে পরিবার প্রয়োজনে আন্দোলনে যাবে। এ তদন্ত প্রতিবেদন পুণরায় পর্যবেক্ষন করে আবারও তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার দাবি জানান তিনি। তিতাসের তদন্ত প্রতিবেদনে অসন্তোষ নিহত অন্যানা পরিবারের সদস্যরাও। তাদের অভিযোগ, তিতাদের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনটি সঠিক নয়। নিহত সাব্বির ও জুবায়ের বাবা মোহাম্মদ নুর উদ্দিন জানান, নামাজ পড়তে গিয়ে আমার দুই ছেলে নিহত হয়েছে। কিন্তু কাদের কারণে আমার দুই ছেলেকে এভাবে জীবন দিতে হলো। তদন্ত প্রতিবেদন স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। তিনি অবিলম্বে এই ঘটনার জন্য কারা দায়ী কাদের গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তা চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সাথে তিনি বলেন, তিতাস গ্যাসের লিকেজ থেকে গ্যাস নির্গত হয়। মসজিদের ভেতর গ্যাস জমাট বেঁধে ছিল বিদ্যুতের স্পার্ক বিস্ফোরণ ঘটেছে অথচ তিতাস ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি পুণরায় তদন্ত করে প্রতিবেদনটি পুণরায় দেয়ার দাবি জানান। গত ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় এশার নামাজ আদায়ের সময় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বাইতুস সালাত মসজিদে বিস্ফোরণের ৩৮জন দগ্ধ হয়। এদের মধ্যে মারাত্মক দগ্ধ ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধিন অবস্থায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়। এখনো শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউটে ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুত, ফায়ার সার্ভিস ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন পৃথক ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির মধ্যে বৃহস্পতিবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
×