ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয় ফুলে মুগ্ধ প্রকৃতি

সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা বিষ, হার না মানা নীলকণ্ঠ

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা বিষ, হার না মানা নীলকণ্ঠ

মোরসালিন মিজান ॥ ভারি মিষ্টি নাম অপরাজিতা। যেমন মিষ্টি তেমনই অর্থপূর্ণ। আগে না হয় অর্থটাই খুঁজে দেখা যাক। প্রতিনিয়ত লড়াই। অহর্নিশ সংগ্রাম। এ সংগ্রামে বিজয়ী হতেই হবে, না, এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে পরাজয় ঠেকানো চাই। পরাভব পরাজয় যে মানে না অপরাজিতা নাম তারই এবং এ নামে আছে একটি ফুলও। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ফুল বা গাছের আবার জয় পরাজয় কী? জবাবে বলি, অপরাজিতা ফুলের গাছ নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে তবেই নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। বাধা-বিপত্তি যতই আসুক বহু বছর বাঁচে। এর বেঁচে থাকা বৃদ্ধি কেউ তেমন ঠেকাতে পারে না। এ কারণেই ফুলটির নাম অপরাজিতা। কয়েকটি রঙের হয়। তা হোক। নীল অপরাজিতাই বেশি নজর কাড়ে। গাঢ় নীল রঙের ফুল একইসঙ্গে নীলকণ্ঠ নামে পরিচিত। অনেকেই জানেন গল্পটা, শিবের আরেক নাম নীলকণ্ঠ। সমুদ্র মন্থনে উঠে আসা ভয়ানক বিষ পান করেছিলেন তিনি। সৃষ্টিকে রক্ষায় তার এমন সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিষের জ্বালায় শিবের গলা নীলবর্ণ ধারণ করে। একই বর্ণ ধারণ করায় নীল অপরাজাতিকাকে নীলকণ্ঠ বলে ডাকা হয়। নীলকণ্ঠ বছরের বিভিন্ন সময় ফুটে। বিশেষ করে বর্ষা এবং শরতে। এখন সেই শরতের কাল। একই সময় কোভিডের প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকায় মানুষ এখন কিছুটা ঘরমুখো। প্রকৃতিজুড়ে এক ধরনের স্বস্তি বিরাজ করছে। একই কারণে প্রিয় ফুলটি আরও বেশি নীল, আরও বেশি সুন্দর হয়ে ধরা দিয়েছে। মিষ্টি ঘ্রাণ নেই। শুধু নীল রঙে মুগ্ধ করে রেখেছে সবাইকে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে দেখা হলো নীলকণ্ঠ। মূল মিলনায়তনের বামপাশের খোলা জায়গায় ছোট্ট বাগান। বাগানের একপাশে কাঁটা তারের বেড়া। বেড়ার ওপরে একটা ঝোপ-জঙ্গলের মতো হয়ে আছে। সবুজ লতাপাতা। তার ফাঁকে ফাঁকে ফুল। দেখতে অনেকটা মেয়েদের কানের দুলের মতো। কোথাও নিঃসঙ্গ একাকী। কোথাও কাছাকাছি দূরত্বে দুটি ফুল। নীল ফুলের ওপর কড়া রোদ এসে পড়তেই রংটা মনে হচ্ছিল গলে গলে পড়ছে। ছুঁয়ে দিলে আঙ্গুলের ডগায় উঠে আসবে নাকি? না, তেমন কিছু হলো না। প্রখর রোদে রংটাকে বেগুনি মনে হলো কিছুটা। আর ছায়ায় পড়তেই মনে হলো কালছে নীল। এভাবে খুঁটিয়ে দেখারও মজা আছে। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা অনুযায়ী, নীলকণ্ঠ ফ্যাবাসিয়াই প্রজাতির ফুল। বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। যৌগ এবং বিজোড়পত্রী। একটি পাপড়ি বড়। প্রায় ৪ সে.মি. লম্বা। অন্যগুলো ছোট পুটলির মতো। অপরাজিতার ভেষজ গুণ নিয়েও প্রচুর কথা শোনা যায়। পৌরাণিক কাহিনী তো বলছে, অপরাজিতার লতা বা শেকড় হাতে বেঁধে নিতে পারলে পরাজয় ধারে কাছে আসতে পারবে না আপনার। উদাহরণও আছে। বলা হয়ে থাকে দেবরাজ ইন্দ্র অসুর দমনের লক্ষ্যে স্বীয় হস্তে অপরাজিতা ধারণ করেছিলেন। আর সর্বশেষ যে খবর সে অনুযায়ী নীল অপরাজিতায় চমৎকার চা হয়। গরম পানিতে কয়েকটি পাপড়ি ছেড়ে দিলেই হলো। পানিটা নীল হয়ে যায়। স্বচ্ছ কাপে দেখা যায় সে রং। তারপর চিনি মিশিয়ে কিংবা না মেলালেও চলে পান করা যায়। পান করেই বলছি, স্বাদটা মন্দ না। তাই বলে চা পানের নামে ফুলের সৌন্দর্য গিলে খাওয়া চলবে না। সমুদ্র মৈথুনে উঠে আসা বিষ, হার না মানা নীলকণ্ঠ তার সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে ফুটে আছে। এর সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করুন।
×