ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাগ্যের জোরে সেমিফাইনালে পিএসজি

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১৪ আগস্ট ২০২০

ভাগ্যের জোরে সেমিফাইনালে পিএসজি

জিএম মোস্তফা ॥ বলা হয়ে থাকে ফুটবল নিষ্ঠুর। আর এই নিষ্ঠুরতাই ফুটবলের চিরাচরিত সৌন্দর্য। বুধবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালেও দেখা গেল তা। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর (পিএসজি) বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে ম্যাচের ৮৯ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল আটালান্টা। স্বাভাবিকভাবেই শেষ চারে উঠার স্বপ্নে বিভোর তখন ইতালিয়ান ক্লাব আটালান্টার ভক্ত-অনুরাগীরা। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনও বাকি। ম্যাচের ৯০ মিনিটে গোল করে পিএসজিকে সমতায় ফেরায় মারকোইনহোস। উত্তেজনা বেড়ে যায় ম্যাচের। মরিয়া হয়ে ওঠে দুই দল। তবে ৯২ মিনিটে চুপো-মোটিং গোল করে প্যারিস জায়ান্টদের ইউরোপ সেরার এই টুর্নামেন্টের শেষ চারে নিয়ে যায়। আর দারুণ স্বপ্ন দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় আটালান্টা। লিসবনের এস্তাদিও দা লুজের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় পিএসজি-আটালান্টা। করোনা মহামারীর কারণে উয়েফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল লিসবনে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল এইটের সবগুলো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে প্রতিটি ম্যাচই হবে সরাসরি নকআউট পদ্ধতিতে। যে কারণে পিএসজি জানতো দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আটালান্টার বিপক্ষে তারা দ্বিতীয় কোন সুযোগ পাবে না। কোচ থমাস টাচেলও তাই কোন ধরনের দ্বিতীয় চিন্তা মাথায় আনেননি। যদিও ইনজুরি আক্রান্ত এমবাপেকে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নামাতে বাধ্য হয়েছিলেন টাচেল। তার অনুপস্থিতি প্রথমার্ধে বেশ অনুভূত হয়েছে। তার ওপর এক গোল হজম করায় টাচেল আর কোন ঝুঁকি নিতে চাননি। গত ২৪ জুলাই ফরাসী কাপের ফাইনালে সেইন্ট এতিয়েনের বিপক্ষে গোড়ালির ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এমবাপে। শেষ ৩০ মিনিট খেলার জন্য টাচেল তাই তাকে যথেষ্ট ফিট মনে করেছেন। তার আগেই ইনজুরির কারণে মার্কো ভেরাত্তি ও নিষেধাজ্ঞার কারণে এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন। শুরু থেকেই নেইমার বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছে। আটালান্টার গোলরক্ষক মার্কো স্পোর্টিয়েলোকে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন নেইমার। তার পরিবর্তে আটালান্টা তাদের সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগায়। ২৬ মিনিটে ১৫ গজ দূর থেকে পাসালিচের জোরালো শট আটকানোর সাধ্য ছিল না পিএসজি গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের। ৫৮ মিনিটে আলবেনিয়ান ডিফেন্ডার বেরাত ডিমসিটি ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারেননি। অন্যদিকে এমবাপেকে পেয়ে পিএসজি যেন নতুন রূপ ফিরে পায়। ইনজুরির কারণে নাভাসের পরিবর্তে পিএসজির গোলবার সামলানোর দায়িত্ব পান সার্জিও রিকো। ৯০ মিনিটে নেইমারের এ্যাসিস্টে মারকুইনহোস পোস্টের খুব কাছে থেকে পিএসজিকে সমতায় ফেরান। এরপর চুপো-মোটিং নাটকীয় ম্যাচটির ইতি টানেন। ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে নেইমারের কাছ থেকে পাওয়া বলে এমবাপের লো ক্রসে চুপো-মোটিং কোন ভুল করেননি। সেইসঙ্গে ২৫ বছর পর পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শেষ চার উপহার দেন। ক্যামেরুনের ৩১ বছর বয়সী এই এ্যাটাকারের সঙ্গে জুনেই পিএসজি’র বর্তমান চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল এইটের কারণে আরও দুই মাস তার সঙ্গে চুক্তি বৃদ্ধি করা হয়। ম্যাচশেষে চুপো-মোটিং বলেন, ‘আমি যখন মাঠে নামি তখন নিজেকে একটি কথাই বলেছি আমাদের পরাজিত হলে চলবে না। আমরা এভাবে বাড়ি ফিরতে পারি না। বাকিটা এখন ইতিহাস।’ ১৯৯৫ সালের পর এই প্রথমবারের মতো ইউরোপের এলিট ক্লাব প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালের টিকেট পেল ফরাসী চ্যাম্পিয়নরা। কাতারী মালিকের অধীনে প্রায় এক দশক আগে পুনর্গঠিত পিএসজি এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শেষ আটের বাধা পেরোতে সক্ষম হলো। ম্যাচের শেষে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার নেইমার বলেন, ‘বাড়ি ফিরে যাওয়া কখনই আমার মাথায় আসেনি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, ওয়ার্মআপ শুরুর সময় থেকেই আমার মাথায় একটিই চিন্তা ছিল সেমিফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করা। এখন আমি ফাইনালে খেলতে চাই। কেউ আমাকে এই চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে আনতে পারবে না।’ নেইমার যতই বলুক সে কখনই হারের কথা ভাবেননি। পিএসজির কোচ থমাস টাচেল বলছেন ভিন্ন কথা। ম্যাচশেষে তার সোজাসাপটা মনের কথাই বলে দেন তিনি, ‘দেখুন আমি বাস্তববাদী। কখনই ভাবিনি ম্যাচের ৮৯ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর আমরা ২ গোল করে জিতে যাব।’ পিএসজির জয়ের দিনে এই ফলাফলটা আটালান্টার জন্য ছিল খুবই হতাশার। অন্তত আরও কয়েকটি দিন তারা রূপকথার এই যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। চলতি বছরের শুরুতেই উত্তর ইতালিয়ান এই শহরটিতে করোনা মহামারী আকারে হানা দেয়। কোভিড-১৯’এ আক্রান্ত হয়ে সেখানে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মার্চে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ভ্যালেন্সিয়াকে দুই লেগ মিলিয়ে আট গোল দিয়েছিল আটালান্টা। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে ফুটবল বন্ধ হয়ে যাবার ঠিক আগে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এরপর তৃতীয় স্থানে থেকে আটালান্টা এবারের সিরি’এ মৌসুম শেষ করেছে। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায় ২০১৭ সালে ২৪৪.২ মিলিয়ন ডলার খরচ করে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সিলোনা থেকে নেইমারকে কেনে পিএসজি। পরের বছর এমবাপেকে মোনাকো থেকে ১৪৮.৫ মিলিয়ন ডলারে কেনার প্রক্রিয়া শেষ করে ক্লাবটি। এ দুটি দলবদলে পিএসজির মোট খরচ ৩৯২.৭ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গত ১৯ বছরে দলবদলের বাজারে আটালান্টার খরচ ৩৮৫.৩ মিলিয়ন ডলার।
×