ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভৈরবে মাদকদ্রব্য অফিসারের কান্ড! দিল ৬ মাসের সাজা

গাঁজা খায় স্বামী, আটক করল কোলের শিশুসহ স্ত্রীকে

প্রকাশিত: ১১:২৭, ৩১ জুলাই ২০২০

গাঁজা খায় স্বামী, আটক করল কোলের শিশুসহ স্ত্রীকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব ॥ ভৈরবে স্বামী গাঁজা খাওয়ার অপরাধে আটক করল কোলের শিশুসহ স্ত্রী শিরিনা বেগমকে(৩৩)। ভৈরব থানা হাজতে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে কথাগুলি বলছিল গৃহবধূ শিরিনা বেগম। বুধবার রাতে গৃহবধূকে কয়েক পুরিয়া গাঁজাসহ তার বাসা থেকে আটক করে ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সার্কেলের পরিদর্শক মাসুদুর রহমান। গৃহবধূর কোলে রয়েছে এক বছরের শিশু সন্তান লোহান। এছাড়াও তার রয়েছে আরও দুটি সন্তান। গৃহবধূর স্বামীর নাম খোকা মিয়া (৪৫)। পেশায় আখেঁর রস ফেরি করে শহরে বিক্রি করে। পরিদর্শক মাসুদের অভিযোগ গৃহবধূর বাসায় এক কেজি গাঁজা পাওয়া গেছে। গৃহবধূ বলছে মিথ্যা ও সাজানো নাটক। তাকে আটক করার আজ ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও তিনদিনের কারাদন্ড প্রদান করে ভ্রাম্যমান আদালত। গৃহবধূ শিরিনা বেগমের বাড়ী ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ছনছাড়া গ্রামে। এলাকাবাসী বলছে খোকা মিয়া গাঁজা সেবন করলেও তার স্ত্রী কখনও গাঁজার ব্যবসা করেছে এমন কথা কখনও শুনেনি গৃহবধূ শিরিনা বেগম কোলের শিশু নিয়ে রাতে থানা হাজতে কাঁদতে কাঁদতে এই প্রতিনিধির নিকট অভিযোগ করে বলেন , ঘটনার সময় সাদা পোষাকধারী দুইজন ও একজন মহিলা বাসায় ঢুকে আমার স্বামীকে খোঁজতে থাকেন। এসময় আমার স্বামী বাসায় ছিলনা। পরে ঘর তল্লাশি করে ডিব্বার ভিতর কয়েক পুরিয়া গাঁজা পায়। এস গাঁজা আমার স্বামী সেবন করে। আমি জানতাম না ডিব্বার ভিতর গাঁজা আছে, তবে স্বামী গাঁজা সেবন করে একথা সত্য । পরে তারা আমাকে কোলের শিশুসহ আটক করে নিয়ে আসে। তারপর ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আমাকে ৬ মাসের সাজা প্রদান করে। দুদিন পর ঈদ। আমার তিনটি সন্তান। স্বামী গাঁজা খায় সত্যি কিন্ত আমিতো গাঁজার ব্যবসা করিনা। এখন আমি কি করব, একথা বলে থানা হাজতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন গৃহবধূ। ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিসের পরিদর্শক মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে এধরনের আরও অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েকমাস আগে উপজেলার দুটি গ্রাম থেকে শেফালী বেগম ও নার্গিস বেগম নামের দুই মহিলাকে আটক করে একইভাবে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। কয়েকমাস আগে সম্ভুপুর এলাকায় কালা মিয়া নামের এক মাদক সেবনকারীর বাড়ীতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার মেয়ে শান্তা বেগমের বেতনের ১১ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে আসে। ঘটনাটি শান্তা বেগম তখন তার বিরুদ্ধে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করে। এর আগে কালিকাপ্রসাদ এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করার পর তার গরু বিক্রির ১০ হাজার টাকা মাসুদর রহমান নিয়ে আসে। অভিযোগ রয়েছে স্হানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পরিদর্শক মাসুদুর রহমানের রয়েছে মাসিক চুক্তি। আর চুক্তির টাকা নিয়মিত না দিলেই তিনি ক্ষেপে গিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। শিরিনা বেগমের বৃদ্ধ বাবা হেলিম মিয়া জানান, আমার জামাই গাঁজা সেবন করে কিন্ত কোলের শিশুসহ মেয়েটিকে গ্রেফতার করে সাজা দিল মাদকের অফিসার। ঘটনার সময় তিন পুরিয়া গাঁজা পায় ঘরে কিন্ত এক কেজি গাঁজার অভিযোগ আনা হয় যা সম্পূর্ন মিথ্যা বানোয়াট বলে তিনি দাবী করেন। ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সার্কেলের পরিদর্শক জানান, শিরিনা বেগমের ঘরে এক কেঁজি গাঁজা পাওয়া যায়। তারা মাদকের ব্যবসা করে বলেই তাকে আটক করে সাজার ব্যবস্হা করেছি। এলাকাবাসীর কেউ বলছেনা শিরিনা গাঁজার ব্যবসা করে, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, স্বামী গাঁজার ব্যবসা করে বলেই ঘরে গাঁজা পেয়েছি। ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মোঃ শাহিন জানান, মাদকদ্রব্য অফিসের কর্মকর্তারা শিরিনা বেগমকে আটক করার পর ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা দিয়ে তাকে থানায় সোপর্দ করেছে। বিষয়টির ব্যাপারে আমাদের কিছুই বলার নেই।
×