ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নেইমারের গোলে চ্যাম্পিয়ন পিএসজি

প্রকাশিত: ০০:১৬, ২৬ জুলাই ২০২০

নেইমারের গোলে চ্যাম্পিয়ন পিএসজি

জিএম মোস্তফা ॥ আবারও নিজেদের জাত চেনালো প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি)। ফ্রেঞ্চ লীগ ওয়ানের পর এবার ফরাসী কাপের শিরোপাও নিজেদের শোকেসে তুললো প্যারিস জায়ান্টরা। শুক্রবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে তারা ১-০ গোলে পরাজিত করে ১০ জনের দল সেইন্ট এতিয়েনকে। সেইসঙ্গে এযাবতকালের ইতিহাসে ১৩তম ফ্রেঞ্চ কাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলো পিএসজি। করোনাভাইরাসের কারণে ফুটবল স্থগিত হওয়ার পর ফ্রান্সে এটাই আনুষ্ঠানিক কোন ফুটবল ম্যাচ। স্বস্তির খবর হলো ফ্রেঞ্চ কাপের এই ফাইনাল ম্যাচের মাধ্যমেই সীমিত পরিসরে দর্শকদের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। ৮০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই স্টেডিয়ামে প্রায় ৫০০০ ফুটবলপ্রেমীরা পিএসজি-এতিয়েনের ফাইনাল দেখার সুযোগ পায়। তবে পিএসজি শিরোপা জয়ের উল্লাসে ভাসলেও এদিন বিশাল এক ধাক্কাও খেয়েছে। এই ম্যাচেই যে মারাত্মক ইনজুরির কবলে পড়ে তাদের অন্যতম সেরা তারকা কিলিয়ান এমবাপে। প্রতিপক্ষের এতটাই বাজে টেকলের শিকার হয়েছেন যে, ফরাসী ফরোয়ার্ডের কান্না চ্যাম্পিয়ন শিবিরে ফেলেছে বিষাদের ছায়া। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ নামক ভয়ঙ্কর ভাইরাসের কারণে ফ্রান্সে ফুটবল স্থগিত হওয়ার পর এদিনই প্রথম কোন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামে পিএসজি। এর আগে অবশ্য তিনটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে নেইমার-এমবাপেরা। কিন্তু সেখানে প্রতিপক্ষের নামগুলো সমীহ জাগানিয়া না হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ ছিল থমাস টাচেলের কপালে। যে কারণেই কোন রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষায় যাননি পিএসজির এই জার্মান কোচ। এতিয়েনের ৪-২-৩-১ ফরমেটের জবাবে প্রথাগত ৪-৪-২ ফরমেটেই ভরসা রাখেন তিনি। এমবাপের সঙ্গী হিসেবে ফরোয়ার্ড ছিলেন ইকার্দি। আর উইং থেকে বল যোগানের দায়িত্ব ছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দুই তারকা নেইমার ও ডি মারিয়ার কাঁধে। তবে শুরুটা যে খুব ভাল করেছে তা বলা যাবে না পিএসজির। বরং শুরুতেই গোল হজম করতে বসেছিল তারা। ম্যাচ শুরুর ৫ মিনিটেই ডেনিস বানগারের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসলে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে পিএসজি। করোনার কারণে বিরতিতে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছন্দ ফিরে পাচ্ছিলেন না যেন ফুটবলাররা। ধীরে ধীরে অবশ্য ছন্দ পেতে থাকে খেলোয়াড়রা। সেই সুযোগে ১৪ মিনিটেই এগিয়ে যায় পিএসজি। প্রথমে কিলিয়ান এমবাপের শট ফিরিয়ে দিলেও গোলমুখে করা নেইমারের কিকের জবাব জানা ছিলা না প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক মৌলিনের। যার ফলে নেইমারের গোলেই প্রথম এগিয়ে যায় প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন। সেইসঙ্গে নিজেকে আরও একবার মেলে ধরলেন পিএসজির ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। প্রমাণ করলেন কেন তিনি বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে দামী তারকা। সাবেক বার্সিলোনার এই তারকা প্যারিস যাত্রার পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে। বিতর্কেও তার নাম বলা যেতে পারে ফুটবলারদের তালিকায় শীর্ষ সারিতে। গোল করেই যেন সেসবের জবাব দিলেন সময়ের সেরা প্রতিভাবান এই তারকা। প্রমাণ করলেন তিনিই বড় খেলার বড় মাপের ফুটবলার। তবে পিছিয়ে পড়েও হাল ছাড়েনি সেতিয়েন। নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিয়েই খেলতে থাকেন সফরকারী দল। কিন্তু প্রথমার্ধের ২৭ মিনিটেই দুঃসময় চলে আসে পিএসজির। ফরাসী ডিফেন্ডার লোয়িচ পেরিনের সাইড ট্যাকেলের শিকার হন এমবাপে। প্রথমদিকে বিষয়টা তেমন গুরুতর মনে হয়নি। কিন্তু ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী তারকা ফুটবলারের গড়াগড়িতে ভয় পেয়ে যান সকলেই। ভিএআরের মাধ্যমে পেরিনকে লালকার্ড দেখাতে বাধ্য হন ম্যাচ রেফারি। কিন্তু তাতেও ফেরানো যায়নি দুর্ভাগ্যকে। কান্না ভেজা চোখেই মাঠ ছাড়তে হয় পিএসজির ফরাসী ফরোয়ার্ডকে। এরপর ১০ জনের দল নিয়েও লড়াই চালিয়ে যায় এতিয়েন। প্রথমার্ধে কোন গোল হজম করেনি তারা। বিরতির পরও আক্রমণে যায় দুই দল। তবে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী তারকা কিলিয়ান এমবাপেকে ছাড়া যেন বর্ণহীন হয়ে পড়ে থমাস টাচেলের দল। তেমন কোন শক্তিশালী আক্রমণ করতে পারেনি নেইমার-ডি মারিয়ারা। অন্যদিকে ১০ জন হয়ে পড়ায় কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি এতিয়েনও। প্রকৃতপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধটা হয়ে পড়ে ম্যাড়ম্যাড়ে। করোনাভাইরাসের কারণে ফুটবল স্থগিত থাকায় খেলোয়াড়দের মধ্যেও দেখা যায় একরকমের ক্লান্তি। তাই পরের সময়টাতে আর কোন গোল না হলে জয়ের আনন্দ নিয়েই মাঠ ছাড়ে প্যারিস জায়ান্টরা। তবে এমবাপের চোটের কারণে পিএসজির কোচ থমাস টাচেলের কপালে দেখা যায় চিন্তার ভাঁজ। ম্যাচশেষে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকেই চিন্তিত। যে ফাউলটা দেখেছে প্রত্যেকেই ভয় পেয়ে গেছে। এমনকি আমি নিজেও। এখন অবশ্য ধৈর্য ধরা ছাড়া আমাদের আর কোন বিকল্প নেই।’ অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা বলেন, ‘আশাকরি কিলিয়ান খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবে। কেননা সে আমাদের দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।’ আগামী ৩১ জুলাই ফ্রেঞ্চ লীগ কাপের ফাইনালে অলিম্পিক লিঁওর বিপক্ষে আবারও মাঠে নামবে পিএসজি। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের লড়াই। আগস্টে তাদের প্রতিপক্ষ আটালান্টা।
×