ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারণার অফিস!

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ২৫ জুলাই ২০২০

প্রতারণার অফিস!

রীতিমতো প্রতারণার অফিস খুলে বসেছিল এক ডজন নাইজিরিয়ান। রাজধানীর পল্লবীর একটি ভবনের এক ফ্লোরে ছিল তাদের অফিস, অন্য ফ্লোরে বাসা। ওই ভবনে তাদের একমাত্র নারী সহযোগী থাকতেন অন্য আরেকটি তলায়। এই মহিলা আবার বাংলাদেশী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রীধারী হলেই যে মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হয় না তার উদাহরণ তো আমাদের সমাজে কম নেই। রাহাত আরা খানম নামের ওই মহিলা অবশ্য নাইজিরীয় প্রতারকচক্রের অন্যতম সহযোগী প্রতারক হিসেবে ‘ফারজানা মহিউদ্দিন’ নাম গ্রহণ করেছিলেন। নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে তিনি ভুক্তভোগীদের বিদেশ থেকে আসা উপহার নেয়ার জন্য লাখ লাখ টাকা জমা দিতে বলতেন। ওই অফিসের কাজ শুধু ফেসবুকে বিভিন্ন জনের সঙ্গে চ্যাট করা। এভাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতারণার জাল বিছিয়ে বন্ধু তৈরি করে অভিনব পদ্ধতিতে দুই মাসে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। সিআইডি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হওয়া নাইজিরিয়ানদের মধ্যে মাত্র তিনজনের পাসপোর্ট থাকলেও ভিসা নেই। এ জাতীয় প্রতারণার বিষয়টি এদেশে অবশ্য নতুন নয়। চলতি মাসেই তিনজন নাইজিরিয়ান প্রতারক ধরা পড়ে। তবে কোন দেশী প্রতারক ধরা পড়েনি। এরপর আরেক দফা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় বেশ ক’জন বিদেশী প্রতারক, তবে সেবার দুজন বাংলাদেশী প্রতারকও ধরা পড়ে। আর এরার ১২ জন বিদেশী প্রতারকের সঙ্গে ধরা পড়ল একজন দেশী নারী প্রতারক। আমরা আগেও বলেছি, ধারাবাহিকভাবেই এমন অপরাধ ঘটছে, বিদেশী প্রতারকরাও ধরা পড়ছে। কিন্তু প্রতারণা থামছে না। জামিনে বেরিয়ে এসে অপরাধীরা আবারও একই ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে এমনটা কেন হচ্ছে? কেন এদের মূলসুদ্ধ উপড়ে ফেলা যাচ্ছে না। তাছাড়া আইন প্রয়োগে কোন শিথিলতা আছে কিনা যে কারণে অপরাধীরা বেরিয়ে আসছে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যেটা সামনে চলে এসেছে সেটি হলো বিদেশীরা ধরা পড়লেও এদের দেশীয় সহযোগীরা খুবই কম সংখ্যায়ই ধরা পড়ছে। অথচ দেশী সহযোগীদের সক্রিয় তৎপরতা ছাড়া বিদেশী প্রতারকরা তেমন সুবিধাই করতে পারত না। প্রতারকচক্র চাপ দিয়ে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ভিকটিমদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে বেসরকারী ব্যাংক এ্যাকাউন্ট। একটি বড় প্রশ্ন হলো, এখন আমাদের দেশের সাইবার ক্রাইম দমন ও অনুসন্ধানে প্রয়োগ হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্র ও সরঞ্জাম। তাই এ জাতীয় প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইলের দেশী সিম ব্যবহারকারীকে তার সর্বশেষ অবস্থানের সূত্র ধরে গ্রেফতার করা সহজ হয়ে উঠেছে। তবু দেশী সহযোগীদের খুব কমই আমরা আইনের হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। অনুমোদনহীনভাবে বিদেশী অপরাধীরা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বছরের পর বছর, কেন ও কিভাবে সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। বিদেশী নাগরিক, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোর নাগরিকদের ব্যাপারে সতর্কতার আবশ্যকতা দেখিা দিয়েছে। তাদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করার একশন প্রোগ্রাম হাতে নেয়া যায়। তাহলে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানকারী নাগরিকদের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। আশা করব এবার থেকে প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে কঠোরতার পরিচয় দেখা যাবে। তবে সবার আগে বিদেশী প্রতারকদের দেশী সহযোগীদের পাকড়াও করা চাই। দেশবাসীর প্রত্যাশা বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টম ডিপার্টমেন্ট এবং পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা আরও বেশি দায়িত্বশীলতা এবং পেশাদারিত্বের পরিচয় রাখবেন।
×