ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাসুমা সিদ্দিকা

ত্যাগের ঈদে সুসংবাদ

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ২৩ জুলাই ২০২০

ত্যাগের ঈদে সুসংবাদ

ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি কোরবানির ঈদের জন্য কোরবানির পশু কিনতে সবাই পশুর হাটে যাচ্ছে। একটা গরু আনবার জন্য অন্তত দুই থেকে তিনজন যাচ্ছে হাটে। আর আমরা ছোটরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন কোরবানির পশু আসবে, কি রঙের হবে, কেমন দেখতে হবে। অথচ যুগে যুগে কত পরিবর্তন এসেছে সমাজের সর্বক্ষেত্রে; বাদ যায়নি এ পশুর হাটেও। দেশে এই প্রথম বৃহৎ পরিসরে হতে চলেছে ডিজিটাল কোরবানির হাট। এর প্রথম এবং প্রধান উপকারিতা আমরা পাব করোনা মোকাবেলায়। এই গরুর হাটগুলোর ব্যবস্থা করেছে দেশের বিভিন্ন অনলাইন শপ। এসব অনলাইন শপে বিভিন্ন দামের গরু বিক্রি ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এই ‘ডিজিটাল হাট’ নামের প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যার সঙ্গে যুক্ত সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং ডেইরি ফার্ম এ্যাসোসিয়েশন। এই করোনার সময় কোরবানির হাট ডিজিটালভাবে হচ্ছে এটি একটি খুবই ভাল উদ্যোগ। এতে অনেক মানুষকে আর করোনার ঝুঁকি নিয়ে হাটে যেতে হবে না। বাসায় বসেই নিজ পছন্দ মতো, নিজ বাজেট মতো পশু ক্রয় করতে পারবেন। আর এই ডিজিটাল পশুর হাটের কারণে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হবে বলে আমি মনে করি। অনলাইনে যারা পটু তারা বিভিন্ন কাজ পেতে পারেন, এই ডিজিটাল হাটে, আশা করা যায় বাণিজ্য মেলা বা বই মেলার সময়ের মতো কিছু মৌসুমী কর্মসংস্থানের। আগে কোরবানির ঈদের কাছাকাছি সময়ে মানুষ প্রচ- জ্যামে নাজেহাল হয়ে, ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরত। কারণ বেশিরভাগ হাটগুলো বসত রাস্তার পাশে স্কুল-কলেজের মাঠে। এতে স্কুল-কলেজের মাঠগুলোও নোংরা হতো, স্কুলের পরিবেশও দূষিত হয়ে যেত। তাই এই ডিজিটাল পশুর হাট হলে ট্রাফিক জ্যাম অনেক কম হবার কথা এবং মানুষের সময়ের অপচয় কমে যাবে। কোরবানির পশুর হাটে অনেক জায়গায় চাঁদাবাজির খবর পাওয়া যেত প্রায়শই। আর এবার ডিজিটাল হলে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে বলে আশা করা যায়। এবার ডিজিটাল হাট ঢাকাসহ সারাদেশে হতে চলেছে। কোরবানির পশুর জন্য অনলাইনে টাকা পরিশোধ করতে হবে সেটিও একটি ইতিবাচক দিক। পশু পছন্দ হলে প্রথমে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করতে হবে। ক্রেডিট কার্ড অথবা অনলাইন ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমেও টাকা দেওয়া যেতে পারে। তাহলেই হয়ে যাবে গরুর বুকিং। এরপর ঈদের দুই-একদিন আগে পশুটি সরবরাহ করা হবে। তখন নগদ বা ক্রেডিট কার্ড যার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই বাকি টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। তাই আগে যেমন ঈদের হাটে নগদ টাকা দিতে হতো, যার জন্য অনেক জায়গায় ছিনতাই, চুরি, প্রতারণা, জাল টাকার ব্যবহার ইত্যাদি হতো তা থেকে আশা করা যায় এবার অনেকটা মুক্তি মিলবে। আর নগদ টাকার ব্যবহার কমার ফলে দুর্নীতিও কিছুটা কমতে পারে। এবার ডিজিটাল হাট ঢাকাসহ সারাদেশে হতে চলেছে। তাই দেশের সব অংশের মানুষই এই সুবিধা পাবে। একটা বাসায় আমরা একেকজন একেকরকমের পশু কিনতে আগ্রহী থাকি। বাচ্চারা যে রঙের পশু নিতে চায়, অভিভাবকরাও তাকে সেটা দেখিয়ে তার পছন্দমতো কিনতে পারবেন, এটাও একটা বড় সুবিধা। আর প্রয়োজন মনে করলে ক্রেতা ভিডিও কলে পশুটি দেখতে পারেন এবং পশুর পালনকারীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আবার আগে পশু বাড়ি আনতে প্রচুর বেগ পেতে হতো আর এখন ডিজিটাল হওয়ায় বিক্রেতা তার পশুটি ঈদের আগে বাড়িতে দিয়ে যাবেন ফলে যাতায়াতের কষ্ট থেকে ক্রেতারা বেঁচে যাবেন। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল হাট থেকে ক্রয়কৃত পশুর মাংস প্রক্রিয়াকরণ করেও বাসাতে ডেলিভারি করা হবে। ফলে গৃহিণীদের কষ্ট কমে যাবে। যত্রতত্র পশু কোরবানি কমার ফলে পরিবেশ দূষণও কমতে পারে। বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুতেই ডিজিটালের ছোঁয়া। তাই এই যুগে কোরবানীর হাটেও যে ডিজিটালের ছোঁয়া পড়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তাই আসুন আমরা এই নতুন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই এবং জীবনকে আরও গতিশীল ও নিরাপদ করে তুলি। তাই বোধহয় করোনাকালীন এই প্রথম কোন বিষয়ে ভাল ছাড়া মন্দ কিছু দেখছি না। কল্যাণপুর, ঢাকা থেকে
×