ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ১১ জুলাই ২০২০

স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্যর্থতার দায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণসহ ৪ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। আজ শনিবার সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। কর্মসূচীতে আরোও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধন শেষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত সাহারা খাতুন এমপির স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুন বক্তব্যে বলেন, "করোনা ভাইরাস সংকট এখন বৈশ্বিক মহামারীতে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশে অনেক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। গত ২৬ মার্চ লকডাউন শুরু হওয়ার পর "আর্ত মানবতার সেবায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ"-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সমগ্র দেশে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। প্রায় ১০ হাজার মানুষকে টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মেডিকেল টীম। করোনা সংকট মোকাবিলার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা সংকট মোকাবিলার জন্য দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে সামনের সারির করোনা যোদ্ধাদের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। অতীব দুঃখের বিষয় এই যে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি বর্তমানের সরকারের সফল অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। পিপিই-মাস্ক কেলেঙ্কারী, আরটি পিসিআর মেশিন কেলেঙ্কারী, হিসাবরক্ষকের টেন্ডার কেলেঙ্কারী, জিকেজি কেলেঙ্কারী ইত্যাদি ঘটনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে। সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিই প্রমাণ করে স্বাস্থ্যখাত এখন মাফিয়াদের দখলে। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারীতেও এনাদের অপকর্ম থেমে নেই। স্বাস্থ্য খাতে পরিকল্পিত ভাবে এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম সংঘটিত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের সফল অর্জনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু ব্যক্তির এহেন গভীর ষড়যন্ত্র কখনোই বরদাশত করবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোন দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবে না। সঠিক নজরদারির অভাবে একের পর এক এসব কেলেঙ্কারী স্বাস্থ্য খাতকে বিতর্কের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দায়িত্বশীল পদে থাকার পরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির দায়িত্বহীন বক্তব্য মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। নিজেদের ব্যর্থতা লুকানোর চেষ্টা জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল। কারণ যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সাধারণ জনগণের বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সামর্থ্য নেই। দেশে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া তাদের মৌলিক অধিকার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের সকল জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার প্রকৃত পরিবেশ কতটা নিম্নমানের তা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। যথাসময় চিকিৎসক না পাওয়া, সরকারী ঔষধ বাহিরে বিক্রি, বাহিরে রমরমা ক্লিনিক ব্যবসা, বিভিন্ন টেস্টের নামে রোগীর পকেট কাটা, হাসপাতালগুলোর পরিবেশ অপরিষ্কার ও নোংরা ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্তারা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বাস্থ্য খাতের সম্প্রতি বিতর্কিত ঘটনাগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারপরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি বহাল তবিয়তে চেয়ারে বসে আছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সরকারের কাছে জানতে চায় যে, এতো বিতর্ক ও সমালোচনার পরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির খুঁটির জোর আসলে কোথায়? দায়িত্বশীল পদে থাকার কারণে তারা দুজন স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অনিয়মের দায়ভার কখনোই এড়াতে পারেন না। ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অনেক আগেই তাদের পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে অবিলম্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির অপসারণ দাবি করছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। জনস্বার্থে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাদের অপসারণ না করলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দেশব্যাপী সকল শহীদ মিনারের পাদদেশে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী পালন শুরু করবে। " মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর ৪ দফা দাবিসমূহ: ১। ব্যর্থতার দায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। ২। স্বাস্থ্য খাতের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ৩। দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ ইউনিট স্থাপন করে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ৪। দেশের সকল জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে চিকিৎসার মানসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি উন্নতমানের আইসিইউ বেড স্থাপন করতে হবে।
×