ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অনলাইন সেমিনারে মোস্তাফা জব্বার

শিক্ষার্থীদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট দিতে হবে

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ১০ জুলাই ২০২০

শিক্ষার্থীদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট দিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষার্থীদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট তুলে দেয়ার এখনই সময়। শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ডিভাইস ও ইন্টারনেট শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন শেষেও কাজে লাগবে। ইন্টারনেট ও ডিভাইসের ব্যবহার দিন যত যাবে তত বৃদ্ধি পাবে। শুধু করোনাকালে অনলাইন ক্লাসের জন্য ডিভাইস ও ইন্টারনেট প্রয়োজন, তা-ই নয়। শিক্ষা জীবনজুড়েই এ দুটো জিনিসের দরকার হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট অত্যাবশ্যক উপকরণ। এক্ষেত্রে এটি ব্যয় নয়, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির জন্য সঠিক বিনিয়োগ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, ব্লকচেন, আইওটি ইত্যাদি ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে পারলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সহজ হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ডিজিটাল এডুকেশন ফর বেটার বাংলাদেশ’ বিষয়ক অনলাইন সেমিনার ও ‘নর্দান ডিজিটাল ক্যাম্পেন-২০২০’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ কথা বলেন। সেমিনারে উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ বোর্ড অব ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ও বিশেষ অতিথি ছিলেন উপউপাচার্য (ডি) প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার মোঃ হুমায়ুন কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. হাফিজ হাসান বাবু। সেমিনারে মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ৬৫ ভাগ হচ্ছে তরুণ। এদের মধ্যে ৪ থেকে ৫ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার চলমান অগ্রগতি বেগবান করার জন্য শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে। তা না হলে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব হবে না। তাই শিক্ষার্থীদের হাতে এখনই তাদের উপযোগী ডিভাইস ও ইন্টারনেট তুলে দিতে হবে। বর্তমান করোনাকালকে পৃথিবীর জন্য একটি অস্বাভাবিক সময় উল্লেখ করেন তিনি। আমরা আকস্মিকভাবে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু ডিজিটাল জীবনধারা আকস্মিকভাবে উপস্থিত হয়নি। ১৯৭৩ সালে আইটিইউ ও ইউপিইউর সদস্য পদ অর্জন এবং ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় ভূউপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বীজ বপন করে গেছেন। সেই পথ ধরেই বাংলাদেশ আজ এমন একটি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি শিক্ষার্থীদের ফ্রি ইন্টারনেট দেয়ার জন্য। ৫ শ’র ওপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াইফাই জোন চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াইফাই জোন করা হবে। সেমিনারে মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী ২১ বছরের পশ্চাৎপদতার জঞ্জাল অপসারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন সাধারণের নাগালে পৌঁছে দেন। সীমিত পরিসরে বিদ্যমান ডায়াল আপ ইন্টারনেটের পরিবর্তে ভিসেটের মাধ্যমে ইন্টারনেট চালু করেন। উদ্যোগ নেন সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের। ১৯৯২ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার বিনা টাকায় সাবমেরিন সংযোগ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেশকে পিছিয়ে দেয়। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সাল থেকে গত ১১ বছরে বিশ্বে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এখন বাংলাদেশের তরুণ প্রজম্ম বিভিন্ন ধরনের এ্যাপ তৈরি করছে। মোবাইল ও ল্যাপটপসহ নানা ধরনের প্রযুক্তি পণ্য দেশেই তৈরি হচ্ছে। আমাদের তৈরি ডিজিটাল পণ্য বিদেশের বাজারেও রফতানি হচ্ছে। খোদ আমেরিকাতেও আমাদের তৈরি মোবাইল যাচ্ছে। গত ১১ বছরে দেশ তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে চলতে আর বেশিদিন সময় লাগবে না। শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডিভাইস ও কনটেন্ট। গত ৯ বছরে প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত বিজয় ডিজিটালের মাধ্যমে কনটেন্টের বিষয়টি সমাধান করতে পেরেছি। বর্তমানে অনলাইনে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে তা বিনা মূল্যে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। সেমিনারে আলোচকরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে এই ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ইন্টারনেট এখন জীবনের সব ক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজন রয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এক কোটির ওপর ইন্টারনেট গ্রাহক বেরেছে। জানুয়ারি মাস শেষে দেশে মোবাইল ফোন, ব্রডব্যান্ড ও অন্যান্য মাধ্যমভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৯ কোটি ৯২ লাখ ৪৬ হাজার। এই সংখ্যা মার্চের শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজারে। বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। মানুষ ফোনে কল করে কথা বলা কমিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওভার দ্য টপ (ওটিটি) ভিত্তিক মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলছে। এর মধ্যে রয়েছে হোয়াটসএ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো, ফেসবুক, মেসেঞ্জারসহ নানা মাধ্যম। এখন ইন্টারনেট মানুষের নিত্যদিনের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট এখন মানুষের মৌলিক অধিকার। জীবনযাপনের লাইফলাইন হচ্ছে ইন্টারনেট। অফিস করতে হচ্ছে ইন্টারনেটে। ব্যবসা ইন্টারনেটে। বিচার কাজও ইন্টারনেটে শুরু হয়েছে। সমাজের সব ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে। উল্লেখ্য, ‘নর্দান ডিজিটাল ক্যাম্পেন-২০২০’র উপলক্ষে সকল শিক্ষার্থী যাতে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেজন্য ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে ফ্রি মোবাইল ডাটা প্রদান করা হয়। মন্ত্রী ‘নর্দান ডিজিটাল ক্যাম্পেন-২০২০’ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
×