ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজের বিশ্বরেকর্ড

ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ২১:২৪, ২২ জুন ২০২০

ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ একটা ম্যাচে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখাতেই পারে যে কেউ। অভিষেকে অতীতে অনেক ক্রিকেটার অভূতপূর্ব পারফর্মেন্স করে তাক লাগিয়েছেন। মুস্তাফিজুর রহমান তাই ব্যতিক্রম ছিলেন না। সবমিলিয়ে ১০ বোলার ওয়ানডে ইতিহাসের অভিষেকে ৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ২০১৫ সালের ১৮ জুন ভারতের বিরুদ্ধে ঘরের মাটিতে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেট শিকার করে বিস্ময় ছড়ান এ বাঁহাতি পেসার। ২১ জুন সেই একই ভেন্যু- মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুস্তাফিজকে আবারও রুখতে ব্যর্থ ভারতের শক্ত ব্যাটিং লাইনআপ। আরও দুর্ধর্ষ মুস্তাফিজ তার বিস্ময়কর স্লোয়ার আর কাটারের জাদুতে ভারতকে ভরাডুবি উপহার দিয়েছেন। ৪৩ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচে ১১ উইকেট, ওয়ানডে ইতিহাসে নতুন বিশ্বরেকর্ড। বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচে ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে ৬ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ ৩৮ ওভারে ৪ উইকেটে ২০০ রান তুলে। ফলে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। ভারতের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত এটিই একমাত্র সিরিজ জয়। বিম্বের সেরা ব্যাটিং লাইনআপকে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৯ বছর বয়সী তরুণ বাঁহাতি দুমড়ে দিয়েছিলেন। যেই ব্যাটিং লাইনে আছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, সুরেশ রায়না, শিখর ধাওয়ানের মতো ধারাবাহিক পারফর্মাররা, তারা এই অচেনা বোলারের কাছে নতি শিকার করেন। তাই মাত্র এক ওয়ানডে খেলা মুস্তাফিজের বোলিং নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন বিশ্বের খ্যাতনামা ভিডিও এ্যানালিস্টরা। ২১ জুন দ্বিতীয় ম্যাচে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েই নামে ভারত। বৈরী প্রকৃতির মধ্যেও এদিন টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামে। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আঘাত মুস্তাফিজের, ফিরিয়ে দেন রোহিতকে (০)। তবে দ্বিতীয় উইকেটে কোহলি ও ধাওয়ান ৭৪ রানের জুটি গড়ে সেই বিপদ সামাল দেন। অনিয়মতি অফস্পিনে নাসির হোসেন ১৩তম ওভারে কোহলিকে (২৩) এবং ২১তম ওভারে ধাওয়ানকে (৫৩) সাজঘরে ফেরানো ছাড়া এর মধ্যে কোন সাফল্য আসেনি। পেসার রুবেল হোসেনও আঘাত হেনে আম্বাতি রাইডুকে (০) সাজঘরে ফেরালে নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। ধোনি ও রায়না চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভাল কিছু করার। কিন্তু ৩৬তম ওভারে মুস্তাফিজ বোলিংয়ে ফিরেই বিভীষিকাময় আতঙ্কের সৃষ্টি করেন। একে একে মুস্তাফিজের বোলিংয়ে অসহায় হয়ে সাজঘরে ফেরেন রায়না (৩৪), ধোনি (৪৭), অক্ষর প্যাটেল (০), রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৪) ও জাদেজা (১৯)। ৪৭ ওভারে নির্ধারিত হওয়া ম্যাচটিতে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং গুটিয়ে যায় ৪৫ ওভারে মাত্র ২০০ রানে। ওয়ানডেতে অভিষেকের পর টানা দুই ম্যাচে ৫ উইকেট শিকারের ঘটনা এর আগে ছিল একটি। জিম্বাবুইয়ের পেসার ব্রায়ান ভিটোরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে অভিষেকে ৫টি এবং পরের ম্যাচেও ৫টি উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু মুস্তাফিজ অভিষেকে ৫ ও পরের ম্যাচে ৬- দুই ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ৪৭ ওভারে মাত্র ২০০ রানেরই লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। প্রথম উইকেটে ৩৪, দ্বিতীয় উইকেটে ৫২ রানের জুটিই দলকে ঐতিহাসিক এক লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে নেয়। তবে তামিম ইকবাল ১৩, সৌম্য সরকার ৩৪ ও লিটন দাস ৩৬ রানে সাজঘরে ফেরার পর কিছুটা সতর্ক হয়ে খেলে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩৮ ওভারেই ৪ উইকেটে ২০০ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় স্বাগতিকরা। মুশফিকুর রহিম ৩১ করে রানআউট হলেও সাকিব আল হাসান ৬২ বলে ৫ চারে ৫১ ও সাব্বির রহমান ২৩ বলে ৩ চারে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন। ৬ উইকেটের জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজ ১ ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় বাংলাদেশ। এর ফলে প্রথমবার আইসিসি র্যা ঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হটিয়ে ৭ নম্বরে উঠে আসা নিশ্চিত হয়। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জন করে টাইগাররা।
×