ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাস্ক বিতর্ক ও আড়াই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ২২:১৭, ২১ মে ২০২০

মাস্ক বিতর্ক ও আড়াই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

নানা বিধি নিষিধের বেড়াজালে এক সময় যে প্রকল্পের বিদেশী বিনিয়োগ ফেরত যাবার উপক্রম হয়েছিল সেই প্রকল্পটিই আজ জেএমই গ্রুপ হিসাবে দেশে মহিরুহে পরিণত হয়েছে। আশা-নিরাশার দোলাচলে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি আজ দেশে সাত হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আর চট্টগ্রাম বিম্ববিদ্যালয়ে অর্থশা¯্রে যে ছেলেটি সব সময় প্রগতিশীল চেতনা বুকে ধারণ করে গান গেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত¡র মাতিয়ে রাখার দায়ে একাধিকবার জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের রোষানলে পড়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছে, সেই আব্দুর রাজ্জাকই আজ এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের এই বিপদে নির্ঘুম অবস্থায় দেশের সেবা দিয়ে চলেছেন। অথচ জামায়াত-শিবির আখ্যায়িত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার চরিত্রহনন করা হচ্ছে। তবে সত্য যে কোন দিন চাপা থাকে না, তা আবারো প্রমাণ করে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরই এই বিপদে তার পাশে এসে দাড়িয়েছে। এই মিথ্যা অপপ্রচারে বিস্ময় প্রকাশ করে তারা বলছেন, জেএমআই গ্রুপের সাফল্যে ইর্শান্বিত হয়েই এমন প্রচার চালাচ্ছে একটি স্বর্থান্নেষী গ্রুপ। অথচ প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে বিভিন্ন সময় ধর্মভিত্তিক দলের রোষানলে পড়তে হয়েছে ছাত্রজীবনে। একবিংশ শতকের গোড়ার দিকে যাত্রা শুরু করে জেএমআই গ্রুপ। জেএমআই-বাংলা লিমিটেড নামে একটি সিরিঞ্জ কারখানা প্রতিষ্ঠার উষালগ্নে বার বার হোচট খেতে হয়েছে ওই কারখানা উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাককে। দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে এই কারখানা প্রতিষ্ঠার শুরুতে তাকে বার বার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। নানা শর্তের বেড়াজালে এক পর্যায়ে ওই কোরিয়ান বিনিয়োগ ফেরত যাবার উপক্রম হয়। তখন দৈনিক জনকণ্ঠ তার পাশে এসে দাড়িয়েছিল। ওই বিদেশী বিনিয়োগ বাস্তবায়ন ও এদেশের বেকার যুককদের কর্মসংস্থানের স্বার্থে এবং দেশে একটি আমদানি বিকল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল দৈনিক জনকণ্ঠে। এতে অবশ্য তার উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে বাধাগুলো সহজেই দূর হয়ে যায়। দেশের নীতি নির্ধারকরা শর্ত তুলে নিয়ে দেশে একটি আমদানি বিকল্প পণ্যের কারখানা স্থাপনের পথ করে দেন। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আব্দুর রাজ্জাককে। কঠোর পরিশ্রম আর শ্রম দিয়ে গড়ে তুলেছেন একের পর এক কারখানা। এরমধ্যে জাপান, কোরিয়া, চীন ও তুরস্কর এই চারটি দেশের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে তার কারখানার সংখ্যা দাড়িয়েছে ২২টিতে। জেএমআই দেশের স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অপরিহার্য আমদানি বিকল্প, রফতানিযোগ্য পন্য ও সেবা উৎপাদনের একটি মানসম্পন্ন, নির্ভরশীল ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটিতে ফার্মাসিস্ট, কেমিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সহ মোট ৭,০০০ জনেরও বেশি একদল চৌকশ পেশাদার কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যক্ষভাবে কর্মরত আছেন। এছাড়া যৌথ বিনিয়োগে নতুন আরও ৫টি কারখানার প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এরমধ্যে দুটি কারখানা করোনার আগে পরীক্ষামুলক চালু হলেও অপর তিনটি কারখানা করোনার কারণে আকটে গেছে। এই তিনিটি কারখানা চালু হলে নতুন করে আরও দুই হাজার মানুষের কাজের সুযোগ সৃস্টি হবে। ব্যাংকে জমানে সাড়ে তিন কোটি টাকা এবং কোরিয়ার একজন পার্টনার নিয়ে কুমিল্লার দৌদ্দগ্রামে মেডিক্যাল ডিভাইস দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৫০ জনের ক্ষদ্র জনবল এবং মাত্র তিনটি পণ্য দিয়ে এই শিল্প গ্রæপের যাত্রা শুরু। এখন এই শিল্প গ্রুপের উৎপাদিত পণ্য সংখ্যা ৪০০টি। ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিশ্বের ৩৬টি দেশে পণ্য রফতানি হচ্ছে। এরমধ্যে কিছু পণ্য বিশ্বে কেবল এই শিল্প গ্রুপই তৈরি করে। দেশি-বিদেশী মিলিয়ে মোট বিনিয়োগ দাড়িয়েছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ৩০টিরও বেশি তার ব্যবসায়িক ক্ষেত্র। এরমধ্যে এক হাজার কোটি টাকা বিদেশী বিনিয়োগ। মধ্যবিত্ত ঘরের একটি ছেলের অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এই সাফল্যগাথা। এ কারণেই বোধহয় মাস্ক বিষয়ক একটি ভ‚লের কারণে তার এভাবে চরিত্রহণন চলছে। কিন্তু করোনা মোকাবেলায় ভূলক্রমে এন ৯৫ মাস্ক’ সরবরাহকে কেন্দ্র এখন এই বিপুল পরিমান বিনিয়োগ হুমকির মুখে। কোম্পানির ভাষ্য অনুযায়ী, কর্মচারীদের ভূলে এই মাস্ক কারখানায় না পাঠিয়ে সরবরাহ করা হয়। আর এতেই বিপত্তি ঘটে। সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে গণমাধ্যমে এই সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করার ঘটনা ফলাও করে প্রচারা করে রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতাল। ফলে করোনার এই দুর্যোগের সময়ে একটি উত্তপ্ত ইস্যু পেয়ে যায় গণমাধ্যম এবং প্রতিপক্ষরা। ঘটনা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমেও। উল্লেখ্য, দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমান চাহিদা থাকায় দেশেই এন-৯৫ মাস্ক উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করেছে জেএমআই গ্রুপ। যেটিতে এখন উৎপাদন শুরু হয়েছে। এই ঘটনার জানার সঙ্গে সঙ্গে ভূল স্বীকার করে সরবরাহকৃত সকল মাস্ক ফেরত নিয়ে আসে সরবরাহকারী কোম্পানি। কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির কাজ চলছে।জেএমআই কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে নিয়মিত তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের মেডিক্যাল ডিভাইস বিপুল পরিমাণে সরবরাহ করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এই সরবরাহের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই সংকটময় মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী মাস্ক ও গ্লাভস সহ অন্যান্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায়, জরুরি সরবরাহকালীন ২০,৬০০ পিস ফেইস মাস্ক ভুলবশত জেএমআই স্টোরে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য সংরক্ষিত এন-৯৫ কার্টুনে সরবরাহ করা হয়। এ বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং কেন্দ্রীয় ঔষধাগার তাৎক্ষনিক মাস্কগুলো জেএমআইকে ফেরত দেয় এবং কেন এমন মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা জানতে চায়। জেএমআই তাৎক্ষনিক তাদের ভুল স্বীকার করে নিয়ে যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদান করার পর বিষয়টি এখানে সুরাহা ও ইতি ঘটে। সর্বোপরি এতে কেউ কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়া সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে একটি বিশেষ মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অপ-প্রচার চালিয়ে আসছে, যা দেশের এই আপৎকালীন সময়ে সম্পূর্ণরূপে অনাকাক্সিখত ও অনভিপ্রেত। এরপরও যদি কেউ এই বিষয়ে অহেতুক চিন্তায় ভোগেন বা মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে জেএমআই গ্রুপের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও থেমে নেই অপপ্রচার। অপপ্রচার থামাতে একাধিকবার ভূল স্বীকার ও দু:খ প্রকাশ করে প্রিন্ট মিডিয়ায় একাধিকার বিজ্ঞাপন প্রচার করা সত্ত্বেও চলছে অপ-প্রচার। বরং কোম্পানিকে বাদ দিয়ে শুরু হয় এই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে চরিত্রহণন। তাকে এবার শিবির বানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগে যায় স্বার্থান্নেষী মহল। এক শ্রেণীর গণমাধ্যম এই দ্বিতীয় ইস্যুটি তৈরি করে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও লুফে নেয়। সুকৌশলে তার চরিত্র হণনের ইস্যুটি এবার ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। যা এখনও চলছে। এতে উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাকের শুধু সুনামই ক্ষন্ন হয়নি, পরিবার পরিজন নিয়ে সমাজে তার চলাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ও সাত হাজার কর্মসংস্থাকারী আব্দুর রাজ্জাককে গ্রাস করেছে চরম হতাশা। তাহলে কি তিনি এইদেশে এই বিপুল পরিমার্থ অর্থ বিনিয়োগ করে ভূল করেছেন? হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘গত ২০ বছরে আমি দেশে ২০-২২টি কারখানা করেছি। আমার যদি টাকার লোভ তাকতো তাহলে দু’একটি কারখানা করেই শেয়ার বাজার থেকে টাকা বানাতে পারতাম। কষ্ট করে ঝুকি নিয়ে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে কারখানা করার ঝামেলায় যেতাম না। আমার ভূল হয়েছে, সেই ভূলের জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদেন্তে যা শাস্তি হয় আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু একটি ভূলকে কেন্দ্র করে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করার ক্ষতি আমি কিভাবে কাটিয়ে উঠব।’ অবশ্য এই চরিত্রহননের প্রতিবাদে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠিরা, যারা তাকে চেনেন ও জানেন তারা প্রতিবাদি হয়ে উঠেছেন। তারাও তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবর হয়েছেন। এই রাজনৈতিক মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, জেএমআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টা মন্তব্য করে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা মিথ্যাচার। ছাত্রবীবনে প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় বিভিন্ন সময়ে তাকে ধর্মভিত্তিক দলের রোষেও পড়তে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। কিন্তু ছাত্রলীগের সঙ্গে তার মেলামেশা ছিল। এ কারণে তাকে শিবিরের তান্ডবের মুখে পড়তে হয়েছে। আবদুর রাজ্জাকের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র বোষ্টন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমান গণি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ১৮তম ব্যাচের ছাত্র আবদুর রাজ্জাক, আমার ছোট ভাই লোকামানের সহপাঠি এবং রুমমেট ছিল। রাজ্জাক আমার ছোট ভাইয়ের মতো এবং আমাদের পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ছাত্র জীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আসা যাওয়া আছে। রাজনীতির সঙ্গে তার সংশ্লিষতা ছিল না। কিন্তু চিন্তা চেতনায় সব সময় প্রগতিশীল ও স্বধীনতার স্বপক্ষে ছিল। রাজণীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও মৌলবাদী ছাত্র সংগঠন শিবিরের হাতে সে অনেক হয়রানির শিকার হয়েছে। ১৯৮৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের ক্যু’র সময় আমার ভাই লোকমানের সঙ্গে পালিয়ে এসে আমাদের গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। কারণ সে শিবিরের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল সব সময়। ওই সময় আমি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলাম। তিনি আরও বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কিছু সাংবাদিক ও পত্রিকা তাকে শিবির বলে অপবাদ দিচ্ছে, যা ষড়যন্ত্রমুলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি তৃণমুল থেকে একাধারে ৪৪ বছর ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগের একজন নির্যাতিত কর্মী হিসাবে, এতবড় মিথ্যা অপবাদ ও অপপ্রচার কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আমি ঘৃণা ও জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কারণ তার কোম্পানিতে কমপক্ষে সাবেক ৫০ জন ছাত্রলীগ কর্মী কাজ করে, অথচ একজনও শিবির কর্মী নেই। একই কথা বলেছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শাখার (১৮১-৮৭) সাবেক সভাপতি ম ইকবাল কবীর। সকলের পরিচিত জেএমআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আবদুর রাজ্জাক সাহেবের বিরুদ্ধে কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন জানিনা। কিন্তু ছাত্রজীবনে বন্ধুদের অনুরোধে মাঝে মধ্যে প্রগতিশীল চিন্তায় ¯^াধীনতার পক্ষে নিজের মতামত প্রকাশ করার অভিপ্রায় ছিল প্রখর। যা আজও বিদ্যমান। আবদুর রাজ্জাকে নিয়ে নিজের ফেসবুকে স্মৃতিচারণ করেছেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমমেট লোকমান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্টতা বাড়ে। একসঙ্গে শাহজালাল হলে থাকতাম। আমার একটা পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয় ছিল। বড় ভাই রাজনীতি করতেন, উত্তর চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন, মেঝভাই এখনও সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তাই আমার চিন্তু চেতনা রাজ্জাকের মতের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় সে আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে যায়। তিনি বলেন, আবদুর রাজ্জাক সব সময় অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম চিন্তা করেছেন। অর্থনীতির ছাত্ররা ভাল চাকরি করে বটে, কিন্তু ভাল উদ্যোক্তা কয়জন? আবার মুনাফার জন্য অন্য শিল্প না করে তিনি জীবন রক্ষাকারী মেটিক্যাল সরাঞ্জামাদি দেশে তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছেন। যার মাধ্যমে প্রতিবছর সরকারের বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা তিনি সাশ্রয় করছেন। চাকসুর সাবেক সদস্য তারিকুল হক লিখেছেন, ‘এ লড়াই বাচার লড়াই, এ লড়াই জিততে হবে, এ লড়াই মরণজয়ী করতে হবেরে’ ক্যাম্পাসে এই সাম্প্রদায়িকতা বিরোধ গান গাওয়া রাজ্জাককে শিবির বানিয়ে দিল গণমাধ্যম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ভাবাদর্শ থেকে গড়ে ওঠা এক্সস্টুডেন্ট ক্লাবগুলোতে সব সময় সব ধরণের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণ করে আসছেন রাজ্জাক। পর পর দুবার সিআইপি হয়েছে সরকার কর্র্তৃক। সরকার পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই এই সিআইপি ঘোষণা করে থাকে। এই সরকারের আমলে শিবির হয়ে সিআইপি হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। মেডিক্যাল ডিভাইস উৎপাদনে দক্ষতা অর্জন স্বল্প মেয়াদে সম্ভব না। মূলতঃ এর জন্য দরকার ব্যাপক অভিজ্ঞতা ও পুঞ্জিভূত দক্ষতা। বিষয়টি মাথায় রেখে জেএমআই দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ ও বিদেশের স্বনামধন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত পেশাদারগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পরামর্শক্রমে Auto Disable Syringes, Nerve Block Needle, Disposable Dental Syringe, Autoclave সহ অনেক মেডিক্যাল ডিভাইস উদ্ভাবন ও বাজারজাত করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া, Catheter for Preventing Post-Partum Hemorrhage, Dialysis Solution Mixer Machine উদ্ভাবন পর্যায়ে আছে। ডিভাইস দুটি বাজারে আসলে প্রসূতি মৃত্যুহার এবং দেশে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা ব্যয় কমবে। বাংলাদেশে মেডিক্যাল ডিভাইস উৎপাদন শিল্পে ধারাবাহিক অগ্রগতি ও উদ্ভাবনের অগ্রজ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্প্রতি JMI SUTURE নামীয় ঐরমযষু Highly Technical একটি Clinic পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করেছে, যা দেশের স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আমদানি বিকল্প হিসেবে দেশে Auto Disable Syringes (AD) উৎপাদন শুরু করে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে বিগত ১৩ বৎসর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করে আসছে, যা বাংলাদেশকে একটি দুরূহ চ্যালেঞ্জ সম্ভব করতে সক্ষম হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে আরও উল্লেখ্য যে, বিগত নবেম্বর ২০১৯ মাসে গণচীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গণচীন সরকারকে আপৎকালীন সহায়তার জন্য সিএমএসডি এর মাধ্যমে জেএমআই থেকে সংগ্রহ করে ১০ লক্ষ পিস গ্লোভস এবং মাস্কসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মেডিক্যাল ডিভাইস প্রদান করেন। বিষয়টির স্বীকৃতিস্ব রূপ মহাপরিচালক-ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, জেএমআই এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুর রাজ্জাক সিআইপিকে বিশেষ সম্মাননা পদকে ভূষিত করেন। অনুসন্ধ্যানে দেখা যায়, জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাকে শিবির বানানোর পেছনে কাজ করছে ৪৫০ কোটি টাকার একটি টেন্ডার। কিডনী ডায়ালাইসিসের যন্ত্রপাতি সরবরাহ সংক্রান্ত এই টেন্ডারের একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি জেএমআই গ্রুপ। ফলে তাকে শিবির বানিয়ে কালো তালিকাভূক্ত করতে পারলে প্রতিপক্ষের জন্য সুবিধা হয়। অবশ্য স্বার্থান্নেষী মহলের পক্ষে শেষ পর্যন্ত সেটি আর সম্ভব হয়নি।- কাওসার রহমান
×