ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী দিন ঝুঁকিপূর্ণ

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১৬ মে ২০২০

আগামী দিন ঝুঁকিপূর্ণ

সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের সর্বগ্রাসী আক্রমণে নাজেহাল, বিপর্যস্ত। স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়া প্রাণ সংহারের আতঙ্কে বিশ্ব মানব এক চরম অস্বস্তিকর সময় অতিক্রম করছে। সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থানেও এসেছে এক দুর্যোগ পরবর্তী মহাসঙ্কট। সংক্রমণ এড়াতে দফায় দফায় সরকারী ছুটি বাড়ালেও তেমন সুফল দৃশ্যমান হতে দেখা যায়নি। ‘ছুটি’ শব্দটিই কোনভাবে অবরুদ্ধতার পর্যায়ে পড়ে না। বরং আনন্দযোগ, প্রমোদ ভ্রমণ এবং সময় কাটানোর এক অনবচ্ছেদ আমেজ। ফলে প্রথম দিকে দেখা গেছে করোনা সংক্রমণের শুরুতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণায় সংশ্লিষ্টরা সেখানে বেড়ানোর আনন্দকেই বেছে নেয়। সমুদ্র সৈকতে পর্যাপ্ত সময় কাটানোর এক বিলাসবহুল সফর বললেও বেশি বলা হয় না। তাই অবরুদ্ধতার মানে বুঝতেই জনগণের দীর্ঘসময় লেগেছে। অনাকাক্সিক্ষত সঙ্কটের দুঃসময়ে সাধারণ মানুষ ঘরে বসে থাকেনি প্রাতিষ্ঠানিক ছুটি পাওয়ার পরও। ক্রমে ক্রমে ঘোষণা দিতে হয়েছে গণপরিবহনের যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। কিংবা অকারণে অপ্রয়োজনে যেন কেউই ঘরের বাইরে বের না হয়। অত্যাবশ্যকভাবে বের হতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরও কঠোর নজরদারি আরোপ করা হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা থেকে মাস্ক কিংবা গ্লাভস পরাকেও বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা আসে। ততদিনে যা হওয়ার তা হয়েই চলেছে। প্রয়োজনে সড়কে নামানো হয়েছে সামরিক বাহিনীর জোয়ানদের। তাদের নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি নিয়ত কর্মপ্রচেষ্টায়ও মানুষের আর ঘরে আটকে রাখা সম্ভব হলো না। সময় দ্রুত গড়িয়ে গেল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকহারে সম্প্রসারিত হতে লাগল। এরই মধ্যে পোশাক শিল্প-কারখানার মালিক পক্ষ শ্রমিকদের কাজে যোগদানে আহ্বান জানালে তা হয়ে দাঁড়ায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। ছুটি পাওয়ার পর তারা যেমন দলে দলে স্ব স্ব জেলায় গমন করে পরবর্তীতে কারখানা খোলার সংবাদে পুনরায় তাদের কর্মস্থলে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। ফলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এসব পোশাক শিল্পকারখানার এলাকা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। মোট আক্রান্তের সিংহভাগই ঢাকা জেলা তথা পুরো বিভাগে। পরবর্তীতে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হলে কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ারও ঘোষণা আসে সরকারের পক্ষ থেকে। বিচক্ষণ কিছু ব্যবসায়ী এই নির্দেশনাকে মানেনি। ফলে ঢাকা শহরে মূল শপিং মলগুলো খোলা হয়নি। তবে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী তাদের জীবন ও জীবিকার তাড়নায় দোকানপাট খোলেন। সেখানে ক্রেতা সাধারণের উপচেপড়া ভিড়। সামাজিক দূরত্বকে তোয়াক্কা না করা ছাড়াও অনেকের মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। সেটা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তার ওপর কাঁচাবাজারে নৈমিত্তিক চাহিদায় ভোক্তা গোষ্ঠীর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কেনা এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে। যখন অবরুদ্ধতার মধ্যেই কাউকে কিছু মানানো সম্ভব হয়নি তখন খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আর তো ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা একেবারে দুঃসাধ্য। এছাড়া রমজান মাসে অতিরিক্ত চাহিদায় কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। সিয়াম সাধনা আর সংযমের মাসে মানুষ নিজেকে সংযত করবে তা কিন্তু নয়। বরং অত্যধিক ক্রয়ে বাজার ব্যবস্থাও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এবার করোনার মহাদুর্যোগে বাজার ব্যবস্থাপনার তেমন সঙ্কট দৃশ্যমান না হলেও অসংখ্য ক্রেতার ভিড় দৃষ্টিকটুভাবে লক্ষণীয়। সেখানেও সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই নেই। রোজার পরেই আসে ঈদের আমেজ। এই ঈদের রমরমা বাণিজ্যের প্রতীক্ষায় দিন গোনে যেমন ব্যবসায়ীরা একইভাবে সাধারণ ক্রেতারাও। কিন্তু এবার তেমন সম্ভাবনা দৃশ্যমান হয়নি করোনার নিষ্ঠুর ছোবলে। যৎসামান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও সেখানে স্বাস্থ্যবিধিকে একেবারে উপেক্ষা করা হচ্ছে। অথচ এই পুরো মাসটি করোনা সংক্রমণের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। যেহারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে আর মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানানো সম্ভব হচ্ছে না সেখানে আশঙ্কা থেকেই যায় বৃহত্তর এশিয়ায় বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় সামাজিক দূরত্ব থেকে ব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতা সঙ্গ নিরোধ, উপযুক্ত চিকিৎসা সামগ্রী ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কোন রাস্তা সামনে নেই।
×