ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বাঁচতে বাঁচাতে মানতেই হবে নিয়ম

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ৭ এপ্রিল ২০২০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বাঁচতে বাঁচাতে মানতেই হবে নিয়ম

কারও অধিকার নেই দেশ ও মানুষকে বিপদে ফেলার। আপনি বুঝতে পারেন আর না পারেন অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকে না। বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ এক বাস্তবতায় আজকের বিশ্ব। যুদ্ধ সাধারণত এক বা একাধিক দেশের মধ্যে হয়। বাকিরা থাকে নিরাপদ দূরত্বে। এই যুদ্ধটা এমন সর্বগ্রাসী আর ভয়ঙ্কর যে, দেবালয়, উপাসনালয়ও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বা দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার ও প্রশাসন। এমন বাস্তবতা দুনিয়ায় আগে কেউ কখনও দেখিনি। সামান্য এক ভাইরাস নামে এর প্রাদুর্ভাব হলেও আজ এ এক মরণব্যাধি। ধর্ম-সম্প্রদায়, ধনী-গরিব নির্বিশেষে এর আতঙ্কে দুনিয়া প্রায় অচল। ইউরোপের সম্ভ্রান্ত আর ধনী দেশ নামে পরিচিত দেশগুলো আজ ঘোর বিপদে। ইতালি, স্পেন এক মৃত্যুপুরী। যেখানে সামরিক বাহিনীর ট্রাক বা কনভয় করে মাঝরাতে মানুষের মরদেহ নিয়ে গিয়ে কোথায় যে সৎকার করা হচ্ছে কেউ জানে না। এমনকি মৃত্যুর আগে আত্মীয়-স্বজনও দেখতে পারছে না কাউকে। চীনের এক বয়স্ক রোগী তার মৃত্যু নিশ্চিত জেনে একবার শুধু জন্মভূমির সূর্যাস্ত দেখতে চেয়েছিলেন গোধূলির আলোয়। তাকে চলন্ত খাটে করে হাসপাতালের বাইরে এনে সেই ইচ্ছে পূরণ করেছে হাসপাতাল কর্মীরা। এমন বেদনা আর মন খারাপের ছবিতে আজ বিশ্ব কাঁদছে। কিন্তু এর ভেতরেও চলছে ব্যাপক অসঙ্গতি আর নিয়ম না মানার উল্লাস। এমন না যে, মানুষ বুঝতে পারছে না। কিন্তু তাদের মনের ভেতর কি আছে ঈশ্বরও জানে না। তারা কি কেবল বাংলাদেশেই নিয়ম ভাঙছে? মোটেও না। এমন না যে, বাংলাদেশের সরকার কিছু করছে না। আজ খবরে দেখলাম দেশগুলো হচ্ছে- ভারত, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ওমান ও সিঙ্গাপুর। এর মধ্যে কয়েকটি দেশ এর আগে সে দেশের সঙ্গে অন্য দেশের বিমান চলাচল বন্ধ করেছিল নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে। এই সিদ্ধান্ত সঠিক। ভারত, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কাকে স্যালুট জানাতেই হবে। ভারতে জন কার্ফু, কুয়ালালামপুর লকডাউন, ম্যানিলা বন্ধ, কলম্বো আছে কার্ফুতে। এর মানে এই সরকার বুঝতে পেরেছে কতটা মারাত্মক হতে পারে আগামী দিনগুলো। বাংলাদেশ কেন এখনও এমন কিছু করতে পারছে না বুঝতে পারছি না। এটা মানতেই হবে যে, দেশ যত জনবহুল তার সমস্যা ও তত বেশি। আমরা যারা চিকিৎসা বিজ্ঞান জানি না বুঝি না, তারাও জেনে গেছি এটি সংক্রমণ হয় মানুষে মানুষে। তা হলে কেন এই অবাধ মেলামেশার সুযোগ? এটা কে না জানে ভাইরাস ঠেকাতে মানুষ লোশন হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাবান দিয়ে হাত ধুতে ধুতে হাতে ঘা করে ফেলছে। আমাদের দেশে এসবের বালাই নেই। তাই ভয় হয়। জানি কিভাবে সামাল দয়া হবে এই বিরূপ পরিস্থিতি। আজ সারা দুনিয়া কাঁদছে। বারবার বলা হচ্ছে এটি একা ঠেকানোর রোগ নয়। একে ঠেকাতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আপনি একা একা ভাল থাকতে পারবেন না। শুধু আপনি নন, কেউই ভাল থাকতে পারবে না। আল্লাহকে স্মরণ করুন ঠিক আছে; কিন্তু কেউ আপনাকে নিয়ম ভাঙতে বলেনি। আপনাকে বুঝতে হবে সবকিছু আবেগ বা অন্ধত্ব দিয়ে চলে না। বিজ্ঞানও কাজ করে। তাকে স্পেস দিতে হয়। মানবসভ্যতার এই সঙ্কটকালে আমরা দেখছি পুরো বিশ্ব একে অপরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই বৈশ্বিক বিপর্যয় থেকে উত্তরণের জন্য চেষ্টা করছে। আরব থেকে আফ্রিকা হয়ে ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া সর্বত্র আজ একই হাহাকার, একই সতর্কতা। এমন বিপর্যস্ত অবস্থা আগে আসেনি। বাংলাদেশকেও এই সঙ্কট উত্তরণের জন্য আরও তৎপর হতে হবে। আত্মসন্তুষ্টি বা যে কোন ধরনের ঘাটতি কিংবা অলসতার পরিণাম হবে ভয়াবহ। আমরা সতর্ক হব, ভয়ার্ত হব না। আমরা নিয়ম মানব, নিয়ম ভাঙব না। আমরা নিষ্ঠাবান হব, কিন্তু কাউকে বিপদে ফেলব না। তবেই আমরা আবার স্বাভাবিক সুন্দর জীবনে ফিরে গিয়ে বলতে পারব- করোনা তুমি এমন আর কোনকালেও করো না, করতে পার না। [email protected]
×