ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ নতুন মেয়রদ্বয়ের কাছে প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ নতুন মেয়রদ্বয়ের কাছে প্রত্যাশা

২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ১০টি স্বাস্থ্যঝুঁকি চিহ্নিত করে। এর মধ্যে এক নম্বর ঝুঁকি হলো বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন। আর ২০১৮ সালে সংস্থাটির হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা ছিল তৃতীয়। ঢাকার বায়ুদূষণের এই চিত্র সরকারী সংস্থা পরিবেশ অধিদফতরের পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে ঢাকার বায়ুমান মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বাসযোগ্যতার একটি তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিবছরই স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা, ভৌত অবকাঠামো এবং স্থিতিশীলতা বা শৃঙ্খলা- এই পাঁচটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ তালিকা করা হয়। তালিকায় প্রতিবছরই বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় প্রথম বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে থাকে ঢাকা শহর। অথচ একটু সচেতন হলে বায়ুদূষণ রোধ করা, জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ, অপরিকল্পিত ফ্যাক্টরি-কারখানা নির্মাণ করে একটি শহরের ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করা, একটি শহরকে জ্বলন্ত চুল্লিতে পরিণত করা, এক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে পুরো একটি শহরকে পানির নিচে তলিয়ে দেওয়া, একই রাস্তা অসৎ উদ্দেশে বারবার খোঁড়াখুঁড়ি করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি করা, যানজট, ধুলাবালি, ধোঁয়া আর মশার উপদ্রবকে জনগণের নিত্যসঙ্গী বানানো, পানি-বিদ্যুত-গ্যাস সঙ্কটে শহরবাসীকে ভোগান্তির হাত থেকে অন্ততপক্ষে রক্ষা করা যেতে পারে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে নগরবাসীর প্রত্যাশা। ঢাকার বদনাম ঘোচাতে হবে। ঢাকাকে আতঙ্কিত ও অপ্রস্তুত শহর হিসেবে প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে প্রায়ই রিপোর্ট প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। কিন্তু ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ ও যানজটমুক্ত করতে নানা পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে নিত্যনতুন পরিকল্পনাও তৈরি হয়, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলররাও ভোটের আগে-পরে ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আবার এসব নিয়ে প্রায়ই সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেসব পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কোন উদ্যোগ তেমন একটা দেখা যায় না। ইআইইউর বিগত বছরের জরিপ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ণ টেকসই নয়Ñ যা প্রত্যেক নগরবাসীই উপলব্ধি করতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কেন এত পিছিয়ে? পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায়, তা ঢাকায় নেই। প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা, জনগণ কর্তৃক ট্রাফিক আইন না মানার পাশাপাশি সুষ্ঠু গণপরিবহন ব্যবস্থার অভাবে ঢাকার রাস্তাঘাটে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ঢাকা শহরকে পরিষ্কার রাখতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালকে পরিচ্ছন্ন বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে? আবার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। কিন্তু ঢাকাকে পরিষ্কার রাখতে, বাসযোগ্য নগরী করতে তাঁদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের আন্তরিকতাসহ সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যম, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অংশগ্রহণ আবশ্যক। চট্টগ্রাম থেকে
×