অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চা-শিল্পের ১৭০ বছরের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করলেও জীবনযাপনের কোন পরিবর্তন হয়নি চা-শ্রমিকদের। ন্যায্য বেতন থেকে আজও বঞ্চিত তারা।
দেশে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে, যেখানে চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ মৌসুমে প্রায় ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে এর আগে কখনও হয়নি। জানা গেছে, ২০১৬ সালে চা উৎপাদন হয়েছিল ৮ কোটি ৬০ লাখ কেজি। চা উৎপাদন রেকর্ড ছাড়ালেও ন্যায্য বেতন থেকে বঞ্চিত চা-শ্রমিকরা। ন্যায্যা বেতন না পেয়ে দুর্ভোগে জীবনযাপন করছেন তারা। এ শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িয়ে রয়েছেন প্রায় ৫ লাখ শ্রমিক তাদের অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। তারা দাবি করেছেন, ১০২ টাকা যে মজুরি পাচ্ছেন সেটা খুবই কম। ২০১৮ সালে ১৭ টাকা বৃদ্ধি করে ১০২ টাকা করা হয়। দেশ স্বাধীনের সময় তাদের মজুরি ছিল মাত্র ৭ টাকা।
চা শ্রমিকরা জানান, তারা সপ্তাহে মাত্র সাড়ে ৩ কেজি আটা পান, থাকার জায়গা পান, কিন্তু অন্য কোন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই ১০২ টাকা দিয়ে বর্তমান সময়ে তাদের জীবনযাত্রা দুরূহ হয়ে পড়েছে। তাদের দাবি, ন্যূনতম পক্ষে ৩০০ টাকা মজুরি করা হলে তারা কোন রকম খেয়েপরে বাঁচতে পারবেন। চা শ্রমিক নেতারা বলেন, চা বাগান মালিকদের (চা সংসদ) সঙ্গে প্রায় ৭ বার বৈঠক করা হয়েছে, কিন্তু কোন মতেই ১০২ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মজুরি তারা করতে পারছেন না। এদিকে, চা বাগান মালিকরা জানান বর্তমানে তারা চায়ের দাম পাচ্ছেন না। এ অবস্থার মধ্যেও ভারত থেকে নিম্নমানের চা দেশের বাজারে আসায় কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ার কথা জানান তারা। এ কারণে মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয় বলেও জানান চা বাগান মালিকরা।
বাংলাদেশে কোম্পানি ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানসহ ছোট বড় মিলিয়ে চা বাগান রয়েছে ১৬৬টি। উৎপাদনে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন, নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, শ্রমিকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণসহ বেশ কিছু কারণে প্রতিবছরই চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু গত বছর (২০১৯) সালে চা-শিল্পের ১৭০ বছরের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ৯৫ মিলিয়ন বা ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। বাংলাদেশ চা বোর্ড এর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ মিলিয়ন বা ৮ কোটি কেজি চা পাতা। চায়ের বাম্পার ফলনের কারণ হিসেবে চা-বাগানগুলোতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত, অনুকূল আবহাওয়া, আর বিশেষ করে পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকা, খরার কবলে না পড়া, সর্বোপরি বাংলাদেশ চা বোর্ডের নজরদারিকে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
শ্রীমঙ্গল জেমস ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের ডিজিএম ও বাংলাদেশ টি এ্যাসোসিয়েশন সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, চায়ের উৎপাদন বেশ ভাল হলেও চায়ের ন্যায্যমূল্য আমরা পাচ্ছি না। ভারত থেকে নিম্নমানের এলসি চা পাতা চোরাইপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে অহরহ। এতে বাজারে চায়ের সার্বিক কোয়ালিটি খারাপ করছে। অন্যদিকে দেশী চা বাগান মালিকরা সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। একই অভিযোগ চা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের। বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. একে এম রফিকুল হক বলেন, ‘আবারও চা উৎপাদনে নতুন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের নবেম্বর পর্যন্ত মোট উৎপাদন ছিল ৯০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৯ কোটি কেজি চা পাতা। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের নবেম্বরে ৭৬ মিলিয়ন অর্থাৎ ৭ কোটি ৬০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এ বছর একই সময়ে ১৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ৪০ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের (বিটিবি) উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমদ বলেন, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত চায়ের উৎপাদন ছিল প্রায় ৯৫ মিলিয়নের ওপরে। এটিই চায়ের ইতিহাসে দেশে সেরা রেকর্ড।
রেকর্ড চা উৎপাদন করেও শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত
প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২৮ জানুয়ারি ২০২০
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: