ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৌভাত হলো না ডাঃ তনিমার

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

বৌভাত হলো না ডাঃ তনিমার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ দুই মেয়েকে হারিয়ে আহাজারি করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন মা রেহেনা আক্তার হিরা। বিলাপ করছেন, ‘ও আল্লাহ, তুমি আমারে কেন রেখে গেলে। আমাকে মা ডাকার তো আর কেউ থাকল না। তুমি আমারে কেন নিলে না...!’ খাটের ওপরে তাকে ঘিরে থাকা স্বজনরাও অশ্রুসিক্ত। হিরাকে সান্ত¡না দেয়ার ভাষা তাদের নেই। শুক্রবার রাত ১টার দিকে যশোর শহরের বিমান অফিস মোড়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন রেহেনা আক্তারের দুই মেয়ে তানজিলা ইয়াসমিন ইয়াশা (৩০) ও ডাঃ তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশা (২৫)। শনিবার বিকেলে ইয়াশা ও পিয়াশাদের বাড়ি যশোর শহরের ঢাকা রোড বারান্দিপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ। অশ্রুসিক্ত স্বজনরা একে অপরকে সান্ত¡না দিচ্ছেন। বাড়ির দ্বিতীয় তলায় খাটের ওপর শুয়ে বিলাপ করছেন ইয়াশা ও পিয়াশার মা রেহেনা আক্তার হিরা। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। চেতনা ফিরলে বিলাপ করে বলছেন একই কথা, আমার মা ডাকার তো আর কেউ থাকল না। স্বজনরা জানান, তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশা যশোর আদ-দ্বীন সকিনা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী ছিলেন। গত ১৩ জানুয়ারি তার চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। যশোর শহরের লোন অফিসপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয় ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই। ২৩ জানুয়ারি তাদের আনুষ্ঠানিক বৌভাতের অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত ছিল । শুক্রবার রাতে বৌভাতের দাওয়াত দিতে এবং শহর ঘুরতে বেরিয়েছিলেন তারা। প্রাইভেটকারে ছিলেন দুই বোন তানজিলা ইয়াসমিন ইয়াশা, ডাঃ তনিমা ইয়াসমিন পিয়াশা ও তাদের খালাত ভাই মনজুর হোসেনের স্ত্রী তিথী (৩৫), তিথীর মেয়ে মানিজুর মাশিয়াব (৪), তাদের আত্মীয় হৃদয় (২৫) ও শাহিন (৩৫)। গাড়ি চালাচ্ছিলেন ডাঃ তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার স্বামী শফিকুল ইসলাম জ্যোতি (৩২)। নিহতদের স্বজন ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে বর শফিকুল ইসলাম জ্যোতি নিজেই গাড়ি চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মীয়দের বাড়ি দাওয়াত দিতে বের হন। রাত ১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে শহরের বিমান অফিস মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকারটি রাস্তার পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা দিয়ে একটি দেয়াল বিধ্বস্ত করে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ইয়াশা, পিয়াশা ও তিথী নিহত এবং বাকি চারজন আহত হন। ইয়াশা ও পিয়াশার স্বজনরা জানান, ইয়াশা ও পিয়াশার বাবা মোহাম্মদ ইয়াসিনের যশোর বড়বাজারে আড়ত আছে। তাদের বাবা-মায়ের দুটি মাত্র মেয়ে। কয়েক বছর আগে ইয়াশার বিয়ে হয়েছিল। ইয়াশার একটি সন্তান হওয়ার দু’দিনের মাথায় মারা যায়। এ দুর্ঘটনায় দুই সন্তানকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে পরিবারটি।
×