ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ বড়াল কেমিক্যালের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১৭ জানুয়ারি ২০২০

বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ বড়াল কেমিক্যালের বিরুদ্ধে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এক কোম্পানির নামে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করে অন্য নামে ভ্যাট দিয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ভবনে মরিচারোধে রাসায়নিক আমদানি ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বড়াল কেমিক্যাল। শুধু কর ফাঁকি নয়, দেশের বাইরে অর্থ পাঁচারের অভিযোগও রয়েছে কোম্পানির বিরুদ্ধে। ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশন বরাবর এ সংক্রান্ত অভিযোগ আসার পর তদন্তে নেমেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি বড়াল কেমিক্যালের সাভারের কারখানায় অভিযান চালিয়েছে ভ্যাট ও কাস্টমস কর্মকর্তারা। জানা গেছে, ভবনে মরিচারোধে ২০০১ সালে থেকে কেমিক্যাল উৎপাদন করে আসছে বড়াল কেমিক্যাল লিমিটেড। গত ১৯ বছর ধরে কেমিক্যাল ব্যবসার আড়ালে অর্থ পাচার এবং কোটি কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে প্রতিমাসে ২ লাখ লিটার কেমিক্যাল উৎপাদন ও বিক্রি করে। অথচ ভ্যাট প্রদান করে মাত্র দুই থেকে তিন হাজার লিটারের। আবার প্রতি লিটার বিক্রি করে ২৪৫ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা। কিন্তু ভ্যাট পরিশোধ করে মাত্র আড়াই টাকা থেকে তিন টাকা। অনুসন্ধানে জানা যায়, বড়াল কেমিক্যাল লিমিটেডের মালিক চিত্তরঞ্জন বড়াল ও পাপিয়া বড়াল দু’জনেরই ভারতীয় আইডি (আধার) কার্ড রয়েছে। দু’জনের নামেই কলকাতায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ভারতের এগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেডের মালিকানায়ও এই দু’জনের নাম রয়েছে। ঢাকায় তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বড়াল কেমিক্যাল কংক্রিটের দেয়ালে নোনা ধরা প্রতিরোধের বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল তৈরি ও বাজারজাত করে থাকে। জানা গেছে, চিত্তরঞ্জন বড়াল জয়েন স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত ‘বড়াল কেমিক্যাল কোং লিমিটেড’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পাপিয়া বড়াল এই প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শেয়ারের অংশীদার হিসেবে পরিচালক। বড়াল কেমিক্যাল কোং লিমিটেডের পণ্যের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন থাকলেও মেসার্স বড়াল কেমিক্যাল কোম্পানির ভ্যাট নিবন্ধন নাই। এক কোম্পানির নামে উৎপাদন করে অন্য কোম্পানির পণ্য বিক্রি হয় সারাদেশে প্রায় ৪০টি অফিস ও শোরুমের মাধ্যমে। জানা যায়, বড়াল কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের কারখানা সাভারের জহুরচন্দা এলাকায়, আর রেজিস্ট্রার্ড অফিস রাজধানীর ঢাকার ৩/২/১ লিয়াকত এ্যাভিনিউ। কর্পোরেট অফিস উত্তরার ৯নং সেক্টরের ৩নং সড়কের ৯নং বাড়িতে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের কারখানায় উৎপাদিত সামগ্রী ফোমলুব, ডিসল্ট, কনলুব ইত্যাদি বাজারজাত করে বড়াল কেমিক্যাল কোম্পানির নামে। একটি প্রতিষ্ঠানের নামে উৎপাদন হচ্ছে এবং অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে নামমাত্র ভ্যাট দেয়া হচ্ছে। এরমধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে কোম্পানিটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটি কোটি টাকা মাসিক আয় হলেও সরকারকে নামমাত্র আয়কর পরিশোধ করেন তিনি। পুরান ঢাকা ৩/২/১ লিয়াকত এ্যাভিনিউ যে বাড়িতে চিত্ত বড়াল থাকেন সে বাড়িটিও টাকা না দিয়ে ৩০ ধারা মামলার মাধ্যমে ইনজেংসন জারি করে দখল করেন। উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরের ৯নং বাড়ির ৩/সি বর্তমানে তার আছে বিলাসবহুল অফিস। এগুলোর কিছুই আয়কর নথিতে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া সাউথইস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকে হিসাব পরিচালনা করলেও আয়কর নথিতে তা উল্লেখ করেননি তিনি। আবার ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে শুরু করে বড়াল কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের হিসেবে মাত্র ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার বিক্রি দেখানো হয়েছে। বাস্তবে বড়াল কেমিক্যালের নামে বিক্রি করা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকার পণ্য। সম্প্রতি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত অভিযোগ করে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ সাভার। অভিযোগের পর ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশন তদন্ত শুরু করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার ড. মইনুল খান জনকণ্ঠকে বলেন, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এদিকে সম্প্রতি বড়াল কেমিক্যালের সাভারের কারখানায় অভিযান চালিয়েছে ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিত্তরঞ্জন বড়ালের ব্যবহৃত দুটি ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। কোম্পানিটির অফিসের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় চিত্তরঞ্জন বড়াল বর্তমানে দেশে নেই।
×