ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাস কূপ খনন নিয়ে বাপেক্স-সকার দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯

গ্যাস কূপ খনন নিয়ে বাপেক্স-সকার দ্বন্দ্ব

রশিদ মামুন ॥ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি-বাপেক্সের সঙ্গে আজারবাইজানের কোম্পানি সকার একিউএস দ্বন্দ্বে দুই গ্যাস কূপ খননের কাজ ভেস্তে গেছে। সকার এবং বাপেক্স নিজেরা দ্বন্দ্ব মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। সকার বলছে দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাবে তারা। এদিকে জ¦ালানি বিভাগ বলছে সঙ্কট নিরসনে আজ রবিবার সকার এবং বাপেক্স’র সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বাপেক্স’র একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে সকার অন্যদের চেয়ে কম দরে গ্যাস কূপ খনন করার চুক্তি করেছিল। কিন্তু তাদের শেষ পর্যন্ত মহল বিশেষের চাপে কাজ করতে দেয়া হয়নি। এখন সকার আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে নতুন করে বাপেক্স ক্ষতির স্বীকার হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে শুনানি পরিচালনায় বাপেক্সকে অর্থ ব্যয় করতে হবে। সূত্র বলছে বাপেক্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ক্ষতিপূরণ আর বকেয়া বাবদ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা দাবি করেছে আজারবাইজানের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি সকার। এ অর্থ আদায়ে বাপেক্সকে দেয়া সবশেষ চিঠিতে সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জানা যায়, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে খাগড়াছড়ির সেমুতাং-১, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ-৪ এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জ-১ তিনটি গ্যাস কূপ খননের জন্য চুক্তি করে আজারবাইজানের সকার একিউএস আর বাংলাদেশের সরকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। অন্যান্য বিদেশী কোম্পানি প্রতিটি কূপ খননে ১৬ থেকে ১৮ মিলিয়ন ডলারে খননের বিপরীতে সকারের ৩৩ মিলিয়ন ডলারে তিনটি কূপ খনন করার চুক্তি করে। এতে করে প্রতিটি কূপ খননে সকারকে দিয়ে কাজ করালে পাঁচ থেকে আট মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হতো। বলা হচ্ছে এটিই সরকারের জন্য কাল হয়েছে। কমদামে গ্যাস কূপ খনন করার চুক্তি করাতে অন্য কোম্পানিগুলো বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেমুতাং-১ ক্ষেত্রে কূপ খনন করে সকার গত জানুয়রিতে। কিন্তু এখানে কোন গ্যাস পাওয়া যায়নি। তদুপরিও বাপেক্স সকারের কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। উল্লেখ্য কূপ খনন করলেই গ্যাস পাওয়া যাবে এ ধরনের কোন নিশ্চয়তা আগে থেকে থাকে না। বাকি দুইটির একটিতে চলছিল খননের প্রস্তুতি। এ অবস্থায় বাপেক্সের বিরুদ্ধে সময়মতো বিল না দেয়ার অভিযোগ এনে বাকি চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায় সকার। কোম্পানিটি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি উপদেষ্টাকে দেয়া চিঠিতে জানায়, বার বার তাগাদা দিলেও বাপেক্স বিলে অনুমোদন দেয়নি। এতে তারা কাজ করতে পারেনি। এরইমধ্যে ফিরে গেছে তাদের লোকবল। এখন তারা চাইছে বন্দরে আটকে থাকা দ্বিতীয় কূপ খননের যন্ত্রপাতি ফিরিয়ে নিতে। একইসঙ্গে বাপেক্সের কাছে ক্ষতিপূরণও চাইছে কোম্পানিটি। সকারের দাবি, শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, ফেরত দিতে হবে পারফরমেন্স গ্যারান্টির টাকাও, যা চুক্তির শর্ত না মেনে ভাঙ্গিয়ে নিয়েছে বাপেক্স। স্থানীয়ভাবে এ বিষয়ে সমাধান না হলে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার হুমকি সকারের। এ বিষয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা। তিনি বলেন, আমার সাম্প্রতিক আজারবাইজান সফরের সময় এই বিষয়ে ওই দেশের জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি অনুরোধ করেছেন, বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার জন্য। আমি এসে কথা বলেছি। যেটা দেখা যাচ্ছে, দায় দুই পক্ষেরই আছে। মূল সমস্যাটা হচ্ছে, কমিউনিকেশন গ্যাপটা বড় হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আমরা চাইছি, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে সব পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করার। তিনি আরও বলেন, এরমধ্যে আমি একবার বাপেক্সকে নিয়ে বসে আলোচনা করেছি। বলেছিলাম একটা ফাইল তৈরি করতে। এখনও তারা তা করেনি। আমি আবার তাদের বলব বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে। যোগাযোগ করা হলে বাপেক্সে পক্ষ থেকে সকারের বিরুদ্ধে সময়মতো কাজ শেষ না করাসহ চুক্তির অন্যান্য শর্তভঙ্গের পাল্টা অভিযোগ তুলে বাপেক্স। বাপেক্সে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হান্নান বলেন, সব দায় যে আমাদের তা কিন্তু ঠিক নয়। চুক্তিগতভাবে সকারেরও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। আমরা এখন চাই, যথাযথ কর্তৃপক্ষের মধ্যস্ততায় বিষয়টি সমাধান হোক আলোচনার মাধ্যমে। এদিকে, সকার যে তিনটি কূপ খননের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, তার জন্য যে টাকা খরচ হচ্ছে, তা দেয়া হচ্ছে গ্রাহকদের গচ্ছিত গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে। তাই এ ধরনের অর্থের ব্যবহারে বাপেক্সে ব্যর্থতা দেখছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে জ¦ালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যখন বিদেশী কোম্পানি ঠিক করি তখন যথাযথ যাচাই-বাছাই করতে পারিনা। এই জায়গাটা ঠিক করতে হবে। নাহলে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে এবং তা বাড়তেই থাকবে।
×