ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাবিহা রহমান

ঘরেই স্পা

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

ঘরেই স্পা

ব্যস্ত শহর, ব্যস্ত গাড়ি, ব্যস্ত করিডর, এত কিছুর ভিড়ে হায় হয় না অবসর এই লাইনগুলোর মতোই আমরা আজ ব্যস্ত। আর মেয়ে হলে তো কথাই নেই। ব্যস্ততা যেন আরও একটু বেশি। প্রতিদিন হাজার কাজের ভিড়ে নিজের দিকে একটু তাকানো হয় না, একটু সময় দেওয়া হয় না। তবু কাজের ভিড়ের মাঝেও একটুখানি সময় নিজেকে দিলে প্রতিটি দিন হয়ে উঠবে আরও আনন্দময়। প্রতিদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে ঘরে বসেই করে ফেলতে পারেন স্পা। পার্লারে যাবার সময় নেই, তো কি হয়েছে? হাতের কাছে যা আছে তাই নিয়ে সময় করে একদিন বসে পড়ুন। কি হয় স্পা করলে? এই যে আপনি সারাদিন বাইরে থাকেন, নানা রকম কাজ করেন, আবার ঘরেও কাজ করতে হয়, এতে করে আপনি অনেক ক্লান্ত হয়ে যান। প্রতিদিনের কাজ করতে করতে হয়ত একঘেয়েমিতে পেয়ে বসে। কোন কোন দিন হয়তো মাথা আর কাজ করছে না মনে হয়। ভর করতে পারে বিষণœতা। এগুলো থেকে মুক্তি পেতেই করে ফেলুন স্পা। শরীর এবং মনের দুই ধরনের ক্লান্তি দূর করতে স্পা এর জুড়ি নেই। এর সঙ্গে নিজের কিছু যতœও নেয়া হলো। ১৫ দিন পর পর অথবা যদি না পারেন মাসে অন্তত একবার হলেও স্পা করুন, দেখবেন সবকিছুই ভাল লাগছে। কি আছে স্পা-তে? অনেক ধাপ আছে স্পা-তে। একসঙ্গে মুখ, চুল, হাত, পা সবকিছুর যতœ আর নিজের জন্য কিছুটা সময়। মুখের জন্য ঝটপট ফেসিয়াল, চুলের জন্য ট্রিটমেন্ট, হাতে ম্যানিকিউর, পায়ে পেডিকিউর আর একটা ওয়ার্ম বাথ। পার্লারে করালে বাড়তি ম্যাসাজ অপশনটা পাবেন। ঘরে যদি করেন, সেক্ষেত্রে নিজে করতে পারবেন না, কিন্তু অন্য কারও সাহায্য নিতে পারেন। কী কী লাগবে? ফেসিয়াল কিট মার্কেট থেকে কিনে নিতে পারেন অথবা ঘরে বসেই তৈরি করতে পারেন। এজন্য লাগবে কলা, অ্যালোভেরা, মধু, লেবু, অলিভ অয়েল অথবা বাদাম তেল, আগুর এর জুস, ডিমের সাদা অংশ আর কিছু অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট। আরও লাগবে ক্লিনজিং মিল্ক, পুদিনা পাতা, টোনার, ময়েশ্চারাইজার। স্ক্রাব স্টিক, ভ্রু তোলার চিমটা। পেডিকিউর কিট ফুট ফাইল, ফুট স্ক্রাব ম্যাসাজ লোশন, কিউটিকল স্টিক, নেইল ক্লিপার, নেইল ফাইল আর ফুট লোশন। ম্যানিকিউর কিট নেইল পলিশ রিমুভার, নেইল ফাইল, নেইল ক্লিপার, কিউটিকল স্টিক, লোশন। উষ্ণ গরম পানি, নেইল পলিশ, আর একটা বেইজ কোট- এগুলো পেডিকিউর এবং ম্যানিকিউর দুটোতেই লাগবে। হেয়ার কিট শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, তেল, আর প্যাকের জন্য ডিম, দই আর লেবু। রিলাক্স এর জন্য আপনার প্রিয় গান, মিউজিক প্লেয়ার, সুগন্ধি, মোমবাতি। কীভাবে করবেন? প্রথমে নিজের জন্য একটি দিন বের করুন। সেদিন সব কাজ থেকে ছুটি নিন। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। আপনার প্রিয় গানগুলো মিউজিক প্লেয়ারে চালিয়ে দিন আর সুগন্ধি মোমবাতিগুলো জ্বেলে দিন। এবার রিলাক্সড থাকুন, সব টেনশন থেকে দূরে। এবার আপনার গোসলের জন্য রাখা বাথরোবটি পরে নিন। প্রথমেই আপনার পছন্দের তেল হাত দিয়ে ঘষেঘষে মাথায় লাগিয়ে নিন। নারিকেল তেল, বাদাম তেল, অলিভ অয়েল যে কোনটা। আমার ব্যক্তিগত পছন্দ সব একসঙ্গে মিক্স করে লাগানো। এবার আসুন মুখে। প্রথমেই মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিন। হালকা করে মুছে তাতে ক্লিনজিং মিল্ক একটু তুলায় নিয়ে ম্যাসাজ করুন। নিয়ম হলো মুখের বাইরের দিক থেকে ভেতরের দিকে বৃত্তাকারে ম্যাসাজ করা। তারপর স্ক্রাব দিয়ে একই-ভাবে ম্যাসাজ করুন। এটা করতে করতে গরম পানি করে ফেলুন আর তারপর একটা বোলে গরম পানি নিয়ে আপনার মুখটা বোলের উপর রেখে তোয়ালে দিয়ে মাথাসহ মুখ ঢেকে ফেলুন। আপনার যদি ব্রণ থাকে তাহলে এই ভাপটা নেয়ার দরকার নেই। কিছুক্ষণ পর আপনার মুখের পোরগুলো খুলে যাবে, তখন স্ক্রাব স্টিক দিয়ে নাকের, থুতনির ব্ল্যাক হেডস তুলে ফেলুন, ভ্রু তোলার চিমটা দিয়ে ভ্রু তুলে আপনার পছন্দ মতো করতে পারেন। এটা করা হয়ে গেলে এখন প্যাক লাগিয়ে ফেলুন, কলা, মধু, কয়েক ফোঁটা বাদাম তেল, ডিমের সাদা অংশ, অল্প একটু আঙ্গুরের জুস মিক্স করে প্যাক বানাতে পারেন। চাইলে এস্পিরিন ট্যাবলেট দিতে পারেন, কিন্তু বার বার না দেয়াই ভাল। এই প্যাক না দিতে চাইলে চন্দন আর মুলতানি মাটি গোলাপ জল দিয়ে মিক্স করে লাগাতে পারেন। সব প্যাক-ই শুকানোর অল্প কিছু আগে ১৫-২০ মিনিট রেখে তুলে ফেলতে হয়। তোলার সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। এই ফাঁকে মাথায় শ্যাম্পু করে মাথার প্যাকটাও লাগিয়ে ফেলুন। ডিম, দই আর লেবু মিক্স করে লাগান, যদি আপনার চুল তৈলাক্ত হয় তাহলে ডিমের সাদা অংশ আর শুস্ক চুলের জন্য ডিমের কুসুম দিয়ে তৈরি করুন। প্যাক হাত বা ব্রাশ দিয়ে লাগাতে পারেন। চুলের গোঁড়ায় লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে কন্ডিশনার লাগান। এবার আসুন হাত ও পায়ে। যদি নেইল পলিশ থাকে রিমুভার দিয়ে তুলে ফেলুন। নেইল ক্লিপার দিয়ে নখ কেটে পছন্দমতো শেপ দিন। ফাইল দিয়ে সমান করে নিন। উষ্ণ পানিতে কিছুটা শ্যাম্পু দিয়ে হাত ও পা ডুবিয়ে রাখুন। ৫-১০ মিনিট পর কিউটিকল স্টিক দিয়ে নখের চারপাশে, গোড়ালিতে, হাত ও পায়ের চারপাশে মৃত কোষগুলো তুলে ফেলুন। ফুট ও হ্যান্ড স্ক্রাবার দিয়ে হাত ও পা স্ক্রাব করুন। এই জিনিসগুলো আপনি মার্কেটে কিনতে পাবেন। এগুলো করা হয়ে গেলে আপনার বাথটাবে উষ্ণ গরম পানি ঢেলে নিন। তাতে ইচ্ছে করলে ফোমিং সোপ দিতে পারেন। আর দিতে পারেন গোলাপের পাপড়ি। গোলাপের গন্ধ আপনাকে সতেজ করে তুলবে। আপনার চুল ধোয়ার জন্য ঠা-া পানি ব্যবহার করুন। বাথটাবে আপনি আপনার ইচ্ছেমতো ৩০-৪৫ মিনিট রিলাক্স করতে পারেন। বাথটবে ছাড়াও আপনি উষ্ণ পানির একটা শাওয়ার নিতে পারেন। এরপর খুব ভাল একটি ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বকে লাগান। হাত এবং পা এর ক্ষেত্রে এরপর আপনি নখে প্রথমে বেইজ কোট লাগাতে পারেন, এতে নখ হলুদ হয়ে যায় না। এরপর আপনার পছন্দ মতো নেইল পলিশ। আপনার দিনগুলোকে এভাবে আরও সুন্দর এবং রঙিন করে তুলুন।
×