
ছবি: জনকণ্ঠ
দীর্ঘ ১৭ বছর পর রংপুরে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর জেলা স্কুল মাঠে বিভাগীয় জনসভা বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবার (৪ জুলাই) জুমার নামাজের পরই সভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সমাগমে কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে রংপুর জিলা স্কুল মাঠ। লোকসমাগম মাঠ ছেড়ে উপচে পড়েছে সড়কে।
রংপুর বিভাগের আট জেলার নীলফামারী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলাসহ আশপাশের উপজেলা থেকে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সরব উপস্থিতিতে শুরু হওয়া এই জনসভায় নারীদের জন্য বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা রয়েছে। জনসভায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত হয়েছে। আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। এদিকে সকাল থেকেই বিভিন্ন স্লোগানে জনসভাস্থল মুখরিত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে জিলা স্কুল মাঠ।
১৭ বছর পর রংপুরে জামায়াতের জনসভা, নেতাকর্মীদের ঢল. জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব খুনির বিচার, প্রয়োজনীয় সব সংস্কারের পর নির্বাচনসহ চার দফা দাবিতে আজ শুক্রবার (৪ জুলাই) রংপুরে জনসভা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
এই জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। দূর-দূরান্ত থেকে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে জনসভায় জড়ো হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বিভাগীয় এই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। প্রধান বক্তা থাকবেন সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম।
বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত আছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিন আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। এছাড়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন জনসভায়।
রংপুর মহানগরী ও জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিভাগীয় এই জনসভা উপলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। মাঠের ভেতরে প্রবেশের জন্য নতুন দুটি প্রবেশপথ রয়েছে। রয়েছে নারীদের পর্দার সঙ্গে বক্তব্য শোনার জন্য আলাদা ব্যবস্থা।
পাশাপাশি রংপুর নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। বড় বড় বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে শহরের বিভিন্ন স্থানে। সেইসঙ্গে পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। বিভাগীয় জনসভা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে ১৩টি উপ-কমিটি কাজ করছে। এ ছাড়া মেডিকেল টিম, নিজস্ব ভলান্টিয়ার রয়েছে মাঠজুড়ে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম জানান, রংপুর বিভাগীয় জনসভায় দুই লক্ষাধিক লোক সমাগম ঘটছে। যা মাঠ ছেড়ে সড়ক পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। এই স্পিরিটকে কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে ফলাফল ঘরে তোলা হবে। নির্বাচনের জন্য রংপুরের এই জনসভা টার্নিং পয়েন্ট হবে বলেও জানান তিনি। এই বিভাগীয় জামায়াতের বিশাল জনসভা ঘিরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহত্তর রংপুরের ৩৩টি আসনে জেতাতে দলকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি বিভাগের মানুষেরমধ্যে দেশকে নিয়ে জামায়াতের পরিকল্পনার বিষয়ে বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
এদিকে জামায়াতের বৃহৎ এই সমাবেশকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। রংপুর নগরির পুলিশ কমিশনার মজিদ আলীসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা রেখেছেন জনসভা ঘিরে।
এর আগে আওয়ামী লীগ জোটের পতনের পর প্রথম নীলফামারী বড় মাঠে সমাবেশ করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। এরপর জলঢাকা, ডোমার ও সৈয়দপুরে পথসভা করেছিলেন তিনি। বলতে গেলে দলটির নীলফামারীতে বৃহৎ সমাবেশ হয়েছিল। এছাড়া রংপুরের পাগলাপীর, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও গাইবান্ধা,পঞ্চগড় এবং লালমনিরহাটে স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ করেছিলেন।
এদিকে বিভাগীয় জনসভার প্রধান বক্তা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন।
এদিকে এই জনসভায় শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার এখনো আমি পাই নাই। আমাদের পরিবার শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা কখন আবু সাঈদ হত্যার বিচার পাব। রমজান আলী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো মানুষ স্বৈরাচার সরকারের পতনের জন্য জীবন দিয়েছে। সবার চাওয়া হত্যার বিচার ও আহতদের খোঁজখবর নেওয়া। কারণ একমাত্র শহীদ ভাইদের কারণে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
আবির