
ছবি: সংগৃহীত
“এই শহরে পাখিদের ঘুম ভাঙে বুলির শব্দে / এই শহর নেশায় বোধ বারুদের গন্ধে”—ঢাকার কারফিউপ্রান্ত রাত্রিকে এইভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন তরুণ কবি ঋষিকাব্য, ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই। এর দুই দিন পর, ৩১ জুলাই, মোহাম্মদপুরের ভাড়াবাসায় নিথর অবস্থায় পাওয়া যায় তাকে। মৃত্যুর কারণ আজও অজানা। তবে তার কবিতা হয়ে ওঠে এক উত্তাল আন্দোলনের প্রতীক।
২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের সরকারি প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে। এ রায়ের পরপরই দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হওয়া এ আন্দোলন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে রাজপথে—নিয়ে আসে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন মোড়।
১৪ জুলাই, শেখ হাসিনার একটি বিতর্কিত মন্তব্য আন্দোলনে ঘি ঢালে। তিনি প্রশ্ন তোলেন—
“মুক্তিযোদ্ধা সন্তান-নাতিপুতিরা কেউ মেধাবী না? যত রাজাকার বাচ্চারা নাতিপুতি হল মেধাবী, তাই না?” এই মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা আসে:
“জুলাই শেষ হবে না ততক্ষণ, যতক্ষণ না শেখ হাসিনার পতন ঘটে।”
ক্যালেন্ডারে নতুন পাতা যোগ হয়—৩১, ৩২, ৩৩, ৩৬ জুলাই।
নিহত হন শতাধিক, আহত হয় সহস্রাধিক। তবু শিক্ষার্থীরা দমে না।
তাদের পাশে দাঁড়ায় চিকিৎসক, সাংবাদিক, চাকরিজীবী, শিল্পী, শ্রমিকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। আন্দোলন রূপ নেয় এক গণঅভ্যুত্থানে।
৩৬ জুলাই, অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ঢাকায় কঠোর কারফিউ ভেঙে লাখো মানুষ গণভবনের দিকে অগ্রসর হয়। সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয় ব্যারিকেড। রাজপথে নামে বিজয়ের স্রোত। অবশেষে খবর আসে, ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন।
এই বিদ্রোহ কেবল কোটা সংস্কারের ছিল না। এটি ছিল সমতা, মর্যাদা, এবং ন্যায়ের স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ এক প্রজন্মের আত্মদান।
আবু সাঈদ বুদ্ধরা বলেছিলেন—
“জুলাই শেষ হবে না ততক্ষণ, যতক্ষণ পর্যন্ত না দিতে হয় নতুন সূর্য।”
আর ঠিক সেই সূর্যের উদয় হয় ৩৬ জুলাই, যে দিনে স্বৈরাচারী শাসনের মসনদ পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং জন্ম নেয় এক নতুন বাংলাদেশ।
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মরণ করে জনপ্রিয় সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন সামাজিক মাধ্যমে লেখেন:
“অনেক জীবনের বিনিময়ে একটি জুলাই, ব্যর্থ হতে দিয়েন না।”
ছামিয়া