ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খুরশীদ আলমকে ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

  খুরশীদ আলমকে ‘গানে গানে  গুণীজন সংবর্ধনা’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আধুনিক বাংলা গানের এক অনন্য কণ্ঠস্বর খুরশীদ আলম। গায়কির স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছেন দীর্ঘ কয়েক দশক, মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছেন শ্রোতাকে। আপন কণ্ঠমাধুর্যে ঠাঁই করে নিয়েছেন সুররসিকের হৃদয়বন্দরে। সেই সঙ্গীত সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা। এবার তার অর্জনের খাতায় যুক্ত হলো আরেকটি নতুন পালক। আধুনিক ও চলচ্চিত্রে গানের এই কালজয়ী শিল্পীকে সম্মাননা জানাল সিটি ব্যাংক এনএ। শুক্রবার হেমন্তের বিকেলে তাকে প্রদান করা হলো ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের রূপসী বাংলা গ্র্যান্ড বলরুমে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খুরশীদ আলমের হাতে সম্মাননা স্মারক, সম্মাননার অর্থ দুই লাখ টাকার চেক এবং তার আঁকা প্রতিকৃতি তুলে দেন অতিথিরা। প্রতিকৃতি ও সম্মানীর চেক তুলে দেন শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার এবং সিটি ব্যাংক এনএ’র সিটি কান্ট্রি অফিসার এন. রাজাশেকারান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশিষ্ট গীতিকবি রফিকউজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি ব্যাংক এনএ’র উর্ধতন কর্মকর্তা শামস জামান। সংবর্ধনা প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশে খুরশীদ আলম বলেন, একজন শিল্পীর জন্য তার কাজের স্বীকৃতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সম্মাননা পেতে সবারই ভাল লাগে। তবে আমার কাছে ভক্তদের ভালবাসাই সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এটার মাধ্যমে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। তাই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত গান গেয়ে যেতে চাই। গানের মাধ্যমেই শ্রোতাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকতে চাই। নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের উদ্দেশে বলেন, তাদের মধ্যে অনেক মেধাবী শিল্পী আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে শেখার আগ্রহটা কম। শিল্পী হতে হলে সাধনা করতে হয় এবং ক্রমাগত শেখার মাধ্যমেই অর্জিত হয় সেই সাধনা। খুরশীদ আলমকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, সুন্দর গান একটা অনুুভূতি শুধুু নয়, সেটা আত্মা ও মনের খোরাক। এ কারণে ‘তুমি আমি’ ধরনের গান বেশিদিন চলে না। গান এমন হতে হবে সেটা যেন মানুষের মনে গেঁথে থাকে। গানের মাধ্যমেই উঠে আসবে জীবনের প্রতিচ্ছবি। এমন গান গেয়ে শিল্পী খুুরশীদ আলম আজকের এই পর্যায়ে এসেছেন। শিল্পীকে শুভাশীষ জানিয়ে রফিকউজ্জামান বলেন, একসময় দেশের চলচ্চিত্রের গানে একচ্ছত্র আধিপত্য করেছেন খুরশীদ আলম। চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ রাজ্জাকের কণ্ঠ থেকে আসা অধিকাংশ গান গেয়েছেন খুরশীদ আলম। রাজ্জাকই চাইতেন ছবিতে তার কণ্ঠে মেলে ধরা গানগুলো যেন এই শিল্পী পরিবেশন করেন। খুরশীদ আলম এমনই এক শিল্পী যার কণ্ঠের চটুল গান থেকে হৃদয়স্পর্শী গান ছুঁয়েছে শ্রোতার মনন। বাংলা গানের বিচিত্র ধারায় ধাবিত হয়েছে তার কণ্ঠস্বর। এন. রাজাকোরান বলেন, বাংলাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী খুরশীদ আলমকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা গর্বিত। তার কণ্ঠ থেকে যে শক্তি ও উৎসাহ পাওয়া যায় তা বিশ্বজুড়ে বাঙালী সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে পরিবেশিত হয় খুরশীদ আলমের গাওয়া কিছু জনপ্রিয় গান। সেগুলো গেয়ে শোনান খুরশীদ আলম ও মুহিন খান। কয়েকটি গানের শিরোনাম ছিল ‘মাগো মা ওগো মা আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা, ‘এ আকাশকে সাক্ষী রেখে, এ বাতাসকে সাক্ষী রেখে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘ছবি যেন শুধু ছবি নয়’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে সঙ্গী হতে দোষ কি তাতে’, ষাটের দশক থেকে দেশের সঙ্গীত জগতের পরিচিত নাম মোঃ খুরশীদ আলম। ১৯৪৬ সালে জয়পুরহাটে জন্ম নেয়া শিল্পী ১৯৪৯ সালে চলে ঢাকায়। এরপর ঢাকাতেই তার বেড়ে ওঠা। নানান প্রতিকূলতার মাঝে গানের অনুশীলন করে গেছেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম ‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। তারপর শুধুই এগিয়ে চলা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাড়ে চার শ’র বেশি চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন এই শিল্পী। ২০০৪ সাল থেকে নিয়মিতভাবে গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা প্রদান করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোয় এই সম্মাননা পেয়েছেন সান্্জীদা খাতুন, প্রয়াত নিলুফার ইয়াসমিন, প্রয়াত ফিরোজা বেগম, ফরিদা পারভীন, খাতুন, প্রয়াত সোহরাব হোসেন, ফেরদৌসী রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, প্রয়াত সুবীর নন্দী, প্রয়াত শাহনাজ রাহমত উল্লাহ, সৈয়দ আব্দুল হাদী, মিতালী মুখার্জী, রুনা লায়লা, ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং আলাউদ্দিন আলীর মতো গুণী শিল্পীবৃন্দ।
×