ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেউ গ্রেফতারও হয়নি

বোমা উদ্ধার ঘটনার রহস্য এখনও তদন্তের জালে

প্রকাশিত: ১১:০১, ১৬ আগস্ট ২০১৯

বোমা উদ্ধার ঘটনার রহস্য এখনও তদন্তের জালে

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশকে টার্গেট করে বোমা হামলা এবং পল্টন ও খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের সামনে থেকে দুইটি বোমা উদ্ধার করার ঘটনার রহস্য এখনও তদন্তের জালে আটকা পড়ে আছে। রাজধানীর গুলিস্তান, মালিবাগ, পল্টন, খামারবাড়ি-এই চারটি বোমা হামলা ও পুঁতে রাখার ঘটনারই টার্গেট করা হয়েছিল পুলিশকে। পুলিশকে টার্গেট করা ঘটনাগুলো কে বা কারা কি উদেশে ঘটিয়েছে তা উদঘাটন করতে পারেনি তদন্তকারী পুলিশ। গ্রেফতারও করতে পারেনি কাউকে। তদন্তের অবস্থা যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, প্রায় তিন মাস আগে গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশকে টার্গেট করে পৃথক দুইটি ঘটনা কে বা কারা কি উদেশে ঘটিয়েছে সেই রহস্য উদঘাটন না হতেই আবারও রাজধানীর পল্টন ও খামারবাড়ি পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখা হয়। গুলিস্তান, মালিবাগ, পল্টন, খামারবাড়ির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের করার পর তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু তদন্তে কোনই অগ্রগতি নেই। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশকে টার্গেট করে পৃথক দুইটি ঘটনা কে বা কারা কি উদেশে ঘটিয়েছে, এখনও সেই রহস্য উন্মোচন করার আগেই আবারও দুই পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখার পর তা উদ্ধার করার ঘটনায় মনে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশই টার্গেট। বোমা রাখার ঘটনাটিকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই বলে মনে করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার পর আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠী স্টেটস আইএস দায় স্বীকার করলেও পুলিশ বক্সের সামনে রাখার বোমার ঘটনার বিষয়ে এখনও কেউ দায় স্বীকার করেনি। তবে পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখার ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্যই পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার পর পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখা হতে পারে। গত ২৯ এগ্রিল রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল আইএস। গত ২৬ মে রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে বিস্ফোরণে পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ তিনজন আহত হওয়ার ঘটনারও একই কায়দায় দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। পুলিশের ওপর হামলার দুইটি ঘটনায় দায় স্বীকারের বিষয়টি জানিয়েছে জঙ্গীগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স। এই দুইটি পৃথক ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় দুইটি মামলা দায়েরের পর তদন্তভার দেয়া হয় জঙ্গী গোষ্ঠী বিষয়ক তদন্ত সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে (সিটিটিসি)। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল রাত পৌনে আটটার দিকে রাজধানীর গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় আততায়ীরা। ওই হামলায় ট্রাফিক পুলিশের দুই কনস্টেবল ও কমিউনিটি পুলিশের এক সদস্য আহত হন। ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আইএস হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম প্রচারকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স জানায়, হামলাটি ছিল দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে পুলিশের ওপর আইএসের চালানো প্রথম হামলা। প্রথমে ককটেল বলা হলেও পরে পুলিশ জানায়, যে বস্তুটি দিয়ে হামলা চালানো হয়, সেটি ইমপ্রুভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা বোমা। গুলিস্তানে পুলিশের ওপর বোমা হামলাকারীদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারী পুলিশ। তবে কাজটি যে কোন জঙ্গী অথবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর, সে বিষয়ে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত। গত ২৯ মে রাত পৌনে নয়টার দিকে মালিবাগ মোড়ে পেট্রোলপাম্পের উল্টো দিকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভ্যানের পেছনের অংশে আগুন ধরে যায়। ভ্যানটির পাশে তখন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশের একজন নারী কর্মকর্তা। বিস্ফোরণে তিনি পায়ে আঘাত পান। পথচারী এক নারী এবং এক রিক্সাচালকও আহত হন। বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন তিনজন। তাদের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের এএসআই রাশেদা আক্তার এবং রিক্সাচালক লাল মিয়াকে প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনার আগে পুলিশের ওপর বোমা হামলা হয়েছে গুলিস্তানে। গুলিস্তান ও মালিবাগের দুইটি বোমা বিস্ফোরণের পর পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান এবং আলামত সংগ্রহ করেন। যে গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে, তা পুলিশের এসবির একটি পিকআপ। এর পেছনের অংশের বসার জায়গার এক পাশ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া পিকআপের পেছনের দিকের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বোমা হামলা করে মোটরসাইকেলযোগে বোমা হামলাকারীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে বলে তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা দুইটির বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে যান কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের কর্মকর্তারা। সিআইডির প্রধান এডিশনাল আইজিপি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, দাতাদের কাছ থেকে ফান্ড পাওয়ার জন্য পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে হামলাকারীরা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটানোর পর এখন আবার পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখার ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে মালিবাগের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার কোন যোগসূত্র রয়েছে কি না সেটাও রহস্যাবৃত। আবার দুই পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রাখার ঘটনার রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। আবারও জঙ্গী হামলা করা হতে পারে সে সময়ই এমন তথ্য ছিল গোয়েন্দা সংস্থার। নব্য জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা করছে সেই তথ্য পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার জন্য বলেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গুলিস্তান ও মালিবাগে পুলিশকে টার্গেট করে যারা দুটি বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল তারাই আবারও দুই পুলিশ বক্সের সামনে বোমা রেখেছিল কিনা তা তদন্ত করে বের করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বোমা হামলাকারী ও বোমা পুঁতে রাখার চক্রটি একই সূত্রে গাঁথা মনে করেই তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছে। এই চক্রটিকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার জন্য তদন্তকারী সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে বলে তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তার দাবি।
×