ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনা

প্রকাশিত: ০৮:২২, ১৭ জুলাই ২০১৯

বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট দলীয় চার নারী কংগ্রেস সদস্যকে ‘নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়ার পর বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ট্রাম্পের এ মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। ডেমোক্র্যাট পার্টির পাশাপাশি তার সমালোচনা করেছেন কিছু রিপাবলিক সদস্যও। ট্রাম্পের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিদায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুুডো। এছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রত্যাশী দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস জনসন ও জেরেমি হান্টও ট্রাম্পের বর্ণবাদী মন্তব্যের কড়া সমালোচনা এবং নিন্দা জানিয়েছেন। এদিকে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা আমাদের দেশকে ঘৃণা করেন।’ ডেমোক্র্যাট দলীয় চার নারী কংগ্রেস সদস্যের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘যদি তোমরা খুশি না হও, তোমরা চলে যেতে পারো।’ ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু আল-কায়েদাপ্রীতির অভিযোগ আনেন। এদিকে ট্রাম্পের বর্ণবাদী মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলন করেন ডেমোক্র্যাট দলীয় চার কংগ্রেস নারী সদস্য পুয়ের্তোরিকোর আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, সোমালীয় বংশোদ্ভূত ইলহান ওমর, ফিলিস্তিন-মার্কিন বংশোদ্ভূত রাশিদা তালিব ও আফ্রিকান-মার্কিন বংশোদ্ভূত আইয়ানা প্রেসলি। ট্রাম্পের বর্ণবাদী মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে প্রেসলি বলেন, ‘আমরা চুপ থাকব না।’ ওমর বলেন, চার কংগ্রেস সদস্যের বিরুদ্ধে চরম বর্ণবাদী আক্রমণ করেছেন ট্রাম্প। এটা শ্বেতাঙ্গদের মুখ্য বিষয় বলে অভিহিত করেন তিনি। এ সময় ওমর ও তালেব ট্রাম্পকে অভিশংসন করার আহ্বান জানান। ট্রাম্পের সমালোচনা করে টেরেসা মে বলেন, ‘ট্রাম্পের বক্তব্য একেবারেই মেনে নেয়া যায় না’। বিশেষ করে ওই নারী সদস্যদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে ট্রাম্প যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলেই মে মন্তব্য করেছেন। সোমবার এ কথা জানিয়েছেন তার কার্যালয়ের মুখপাত্র। চার নারী কংগ্রেস সদস্য নিউইয়র্কের আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, মিশিগানের রাশিদা তালিব, ম্যাসাচুসেটসের আইয়ানা প্রেসলি ও মিনেসোটার ইলহান ওমরকে ‘নিজ দেশে ফিরে যেতে’ বলে এরই মধ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতাদের কাছ থেকে বর্ণবাদের অভিযোগের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করা এবং শ্বেতাঙ্গময় করাই ট্রাম্পের উদ্দেশ বলেও তারা সমালোচনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে’র সমালোচনা বিরল ঘটনা। ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করলেও মে তাকে বর্ণবাদী আখ্যায়িত করেননি। তবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এবারই মে খোলাখুলিভাবে সবচেয়ে কড়া সমালোচনা করলেন। ক্যারিশম্যাটিক তরুণ নেতা, ট্রাম্পবিরোধী হিসেবে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমে প্রশংসিত নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন রেডিও নিউজিল্যান্ডকে বলেন, ‘আমি সাধারণত অন্য কারও রাজনীতিতে নাক গলাই না। কিন্তু এটা অনেকের কাছে পরিষ্কার হবে যে, আমি তার (ট্রাম্প) সঙ্গে পুরোপুরি ভিন্নমত পোষণ করছি। তিনি বলেন, তিনি নিউজিল্যান্ডের বৈচিত্র্যতায় গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে নিউজিল্যান্ডবাসী বৈচিত্র্যকে স্বাগত জানায়। ট্রাম্পের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘কানাডায় আমরা যেটা করি, এটা সে রকম নয়। একজন কানাডীয় কানাডীয় এবং কানাডীয়। উটাহ থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি বলেন, ‘আমার মত হচ্ছে, যা বলা হয়েছে এবং যা টুইট করা হয়েছে তা ধ্বংসাত্মক, অবমাননাকর, বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং খোলাখুলিভাবে বলতে হয়, খুবই অন্যায়।’ আলাস্কা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর লিসা মুরকোওয়াস্কি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের বাজে মন্তব্যের কোন অজুহাত নেই- এগুলো পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য এবং এটা বন্ধ হওয়া উচিত।’ প্রতিনিধি পরিষদে (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) রিপাবলিকান একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ সদস্য টেক্সান উইল হার্ড সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্পের আচরণ মুক্ত বিশ্বের নেতার মতো নয়। ট্রাম্প যে চার নারী কংগ্রেস সদস্যকে দেশে ফিরতে বলেছেন, তার মধ্যে প্রথম তিনজনের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে, একমাত্র ইলহান ওমরই শিশু অবস্থায় শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং সেখানে বেড়ে ওঠেন। এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রগতিশীল এসব ডেমোক্র্যাট নারী সদস্য এমন সব দেশ থেকে এসেছেন, যাদের সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ, বিশ্বে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অদক্ষ। অথচ এরাই এখন জোর গলায় যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে তথা, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশকে জোরগলায় বলছেন, সরকার কীভাবে পরিচালনা করতে হবে। সেটি না করে বরং তাদের উচিত যার যার দেশে ফিরে যাওয়া। সেখানকার অবস্থা বদলানোর পর তারা ফিরে এসে দেখাক, কীভাবে আমাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।’ ট্রাম্প সরাসরি চার নারীর নাম না বললেও তার কথার পটভূমি এবং বিশেষ করে তিনি ডেমোক্র্যাটিক হাউস স্পীকার ন্যান্সি পেলোসির নাম উল্লেখ করায় কোন চার নারীকে বোঝাতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট ধরা পড়েছে। এক সপ্তাহ আগে ওই চারজনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন পেলোসি। ট্রাম্প তার টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘পেলোসি খুশি হয়ে চারজনকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দেবেন।’ তবে ট্রাম্পের ওই টুইট বার্তার পর প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার পেলোসি কার্যত চার নারীর পক্ষ সমর্থন করেই কথা বলেছেন। ট্রাম্পের টুইটকে ‘বিদ্বেষমূলক’ অভিহিত করে এর সমালোচনা করেছেন তিনি। তাছাড়া, সাংবাদিকসহ অন্যান্য শ্রেণী-পেশার মানুষেরাও ট্রাম্পের টুইটের কড়া সমালোচনা করেছেন। -এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ান
×