ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জনদূর্ভোগ চরমে;###;বরিশালে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কারের নামে সরকারী অর্থ লুট

সড়ক নয় যেন মরণ ফাঁদ

প্রকাশিত: ০২:৩৯, ১৭ জুন ২০১৯

সড়ক নয় যেন মরণ ফাঁদ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলা ও পৌর সদরের প্রধান সড়ক গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড থেকে সরিকল বাজার পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৫০ মিটার সড়কটি গত ছয় মাসের অধিক সময় ধরে মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। সড়কটি সংস্কারের জন্য এলজিইডি বিভাগ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যায় করার পরেও সড়কটি খানাখন্দ ও জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। সূত্রমতে, জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির ওপর নির্ভরশীল উপজেলা পরিষদ, পৌর ভবন, মডেল থানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিস, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ব্যাংক ভবন, শপিংমলসহ উপজেলা সদরে আসা মন্ত্রী ও সাংসদসহ সকল ধরনের ভিআইপিদের যাতায়াত। অথচ সড়কটির বেহাল দশায় পরে থাকলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। সম্পূর্ন সড়কটিতে ছোট-বড় কয়েক হাজার গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলে সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পরেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পুরো সড়কটি জলাশয়ে পরিনত হয়। সড়কে অহরহ দূর্ঘটনাসহ ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক যান চলাচল। এ জনদূর্ভোগের শেষ কোথায়? তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ কিছুদিন পর পর কয়েক ভ্যান বালি আর ইটের টুকরা ফেলে গর্ত মেরামতের নামে সরকারী অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছরে ওই সড়কটি পূর্ণ নির্মানের প্রকল্প গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে কার্পেটিং সড়ক নির্মান করা হয়। সড়কটি দিয়ে গৌরনদী উপজেলা সদরের জনগুরুত্বপূর্ন সরকারী দপ্তর সমূহ, উপজেলার নলচিড়া ও সরিকল ইউনিয়ন এবং বন্দরের ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহন করা হয়। ২০০৫ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কটি এলজিইডিকে হস্তান্তর করেন। সেই থেকে সড়কটির রক্ষনাবেক্ষনসহ যাবতীয় দায়ভার এলজিইডি’র। গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১০-২০০১১ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭০ হাজার। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ১৪ লাখ। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে এক কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ১৪ লাখ টাকাসহ সড়কটি সংস্কারে এক কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যায় করা হলেও সড়কের কোন পরিবর্তনই হয়নি। স্থানীয়রা জানান, সড়ক উন্নয়নের জন্য প্রায় দুই কোটি টাকা সংস্কারে ব্যায় করা হলেও সড়কটি খানাখন্দ ও আর জলাশয়ই রয়ে গেছে। সড়ক সংস্কারে নামে সামান্য কিছু খোয়া ও বালু ফেলে পুরো টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। সূত্রমতে, গৌরনদী উপজেলার সকল সরকারী দপ্তরে সেবা নিতে আসা জণসাধারন ও গৌরনদী উপজেলার সরকারী খাদ্য গুদামে মালামাল পরিবহনের একমাত্র সড়ক এটি। এছাড়া ঢাকা-গৌরনদী, নারায়নগঞ্জ-গৌরনদী লঞ্চে ব্যবসায়ীদের অমদানিকৃত পন্য টার্মিনালে নামানোর পরে একমাত্র এ সড়কটি ব্যবহার করেই বিভিন্ন হাট-বাজারে আনা নেওয়া হয়। অপরদিকে গৌরনদী বৃহৎ ব্যবসায়ীক বন্দর সরিকল ও নলচিড়ার যাতায়াতের মাধ্যমও হচ্ছে এ সড়কটি। দীর্ঘদিন থেকে সড়কটি মরন ফাঁদে পরিনত হলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ সড়কটি দিয়ে মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ প্রভাবশালী নেতারা যাতায়াত করলেও জনসাধারনের দূর্ভোগ লাঘবে তাদের কোন কার্যকরী ভূমিকা নেই। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটির বেহাল চিত্র। কয়েকদিনের বর্ষনে পুরো সড়কে সৃষ্টি হয়েছে হাজারও ছোট-বড় গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই গর্তগুলো ডুবে যাওয়ায় সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালকসহ মিনিট্রাক, অটো টেম্পু, নসিমন, মটরসাইকেলসহ যানবাহন চালকরা গর্তগুলো দেখতে না পাওয়ায় দূর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন সিসিডিবি, ক্রাথলিকচার্জ, কারিতাস, উপজেলা পরিষদ গেট, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিস, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে, ভাই ভাই শপিং মল, থানার মোড়, তাকওয়া ভবন, সার্কেল অফিস মোড়, তুলাতলা, টিখাসার, পিঙ্গলাকাঠী, কালনা, কুতুবপুর, কান্ডপাশাসহ অধিকাংশ এলাকার অবস্থা সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। এসব স্থানগুলোর সড়কে ছোট-বড় হাজারো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও গর্তগুলো জলাশয়ে পরিনত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সড়কটি বেহাল দশায় পরে থাকলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে উন্নয়নে দেশ ভাসলেও গৌরনদীর এ সড়কটি পানিতে ভাসছে। গৌরনদী এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাইদুর রহমানও জনসাধারণের চরম দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, সড়কটি সংস্কার ও পুনঃনির্মানের জন্য ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরী করে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ অহিদুর রহমান পূর্বের ন্যায় দায়সারা অফিসিয়াল বক্তব্য দিয়ে বলেন, সড়কটি বাস্তবায়নে দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে দরপত্র আহবান করে ঠিকাদার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে জনদূর্ভোগ দুর করা হবে।
×