ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে সাফল্য

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২৫ মে ২০১৯

  মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে সাফল্য

মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে কুড়িগ্রামের মৎস্য চাষীরা। সময় যত যাচ্ছে গলদা চিংড়ি চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অধিক লাভের আশায় ফসল উৎপাদন না করে চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়েছে এখানকার কৃষক ও সাধারণ মানুষ। ফসলি জমির পাড় বেঁধে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ব্যাপকহারে চিংড়ি উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছে তারা। ইতোমধ্যে জেলায় অর্ধ শতাধিক মৎস্য চাষী পোনা ক্রয় করে চিংড়ি চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে কাজ শুরু করে। গত বছর নিজস্ব খামারে গলদা চিংড়ির রেণু ও পোনা উৎপাদন করে সফলতা পাওয়ায় এ বছরও গলদা চিংড়ির পি.এল (রেণু) উৎপাদন করে কৃষদের মধ্যে বিক্রি শুরু করেছে খামার কর্তৃপক্ষ। এ বছর (২৮-৩৫ দিন বয়সী) পি.এল (রেণু) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখটি এবং (৪০-৫০দিন বয়সী) জুভেনাইল (পোনা) উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬ হাজার। সরকারের দেয়া লক্ষ্যমাত্রার অধিক অর্জিত হয়েছে রেণু ও পোনা। কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার সূত্রে জানা গেছে, মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বরগুনার আমতলী ও পায়রা নদী থেকে মা চিংড়ি এবং পেকুয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার থেকে লবণাক্ত পানি সংগ্রহ করে আনা হয়। এরপর লবণাক্ত পানিতে মিঠা পানি মিশিয়ে সেখানে মা মাছের ডিম ফোঁটানো হয়। পরে সেই ডিম স্বাদু ও লবণাক্ত পানির মিশ্রণে ২৮ থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত প্রক্রিয়াজাত করে পি.এল (রেণু)তে পরিণত করা হয়। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও জেলায় মিঠা পানিতে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রামে মৎস্য বীজ খামারে উৎপাদিত গলদা চিংড়ির পি.এল (রেণু) মৎস্য চাষীদের মাঝে বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে গত বছর জেলায় শতাধিক মৎস্য চাষী পোনা ক্রয় করে চিংড়ি চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী। উলিপুরের চিংড়ি চাষী আসাদুজ্জামান জানান, গত বছর চিংড়ি চাষ ছিল আমার জন্য পরীক্ষামূলক। নতুন হিসেবে অকল্পনীয় সফলতা পেয়েছি। কার্প জাতীয় মাছ প্রতি মণ ৭/৮ হাজার টাকা বিক্রি করি। অথচ একমন চিংড়ির দাম ২৮ হাজার টাকা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কার্প জাতীয় মাছ চাষ কম করে চিংড়ি চাষ বেশি করব। খামার কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক পরামর্শ দেয় তাহলে আমি আশাবাদী চিংড়ি চাষ আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেবে। কুড়িগ্রাম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপক ও মৎস্য গবেষক মোঃ মূসা কালিমুল্লা জানান, বিঘা প্রতি ৭ মনের অধিক গলদা চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। যার প্রতি কেজি গলদা চিংড়ির দাম সর্বনিম্ন ৮শ’ টাকা। প্রতিমণ চিংড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮ হাজার টাকা। অথচ ১ বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন হবে ২০ মণ। যার সর্বোচ্চ মূল্য হবে ১২ হাজার টাকা। কৃষকরা বুঝতে পেরে এখন গলদা চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। আশা করি আগামী ২ বছরের মধ্যে কুড়িগ্রামে গলদা চিংড়ি চাষে বিপ্লব ঘটবে। কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামের পানি, মাটি ও আবহাওয়া চিংড়ি উৎপাদনের জন্য অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আমরা মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা পেতে শুরু করেছি। কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আশা করছি আগামী বছরগুলোতে এ জেলায় ব্যাপকহারে গলদা চিংড়ি চাষ শুরু হবে। -রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম থেকে
×