ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন গোলে পিছিয়ে থাকা ব্রাদার্সের অবিশ্বাস্য ড্র

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২৩ মে ২০১৯

 তিন গোলে পিছিয়ে থাকা ব্রাদার্সের অবিশ্বাস্য ড্র

রুমেল খান ॥ মধ্যবর্তী দলবদলের পর টানা দুই ম্যাচে জিতে সমর্থকদের মনে আশার সঞ্চার করেছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। রেলিগেশন থেকে রক্ষা পাবে মোহামেডান... এমনটাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন মতিঝিলের এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির সমর্থকরা। বুধবার অনুষ্ঠিত খেলায় তারা নিজেদের চেয়ে পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেডকে অনায়াসেই হারাবে এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের এই খেলায় প্রথমার্ধেই তিন গোলে এগিয়ে গিয়ে নিজেদের সমর্থকদের সেই ধারণাটাই প্রায় সত্যি প্রমাণ করে ফেলেছিল মোহামেডান। এমনকি ম্যাচ শেষ হবার ৮৭ মিনিট পর্যন্ত ৩-২ গোলে গোলে এগিয়েও ছিল তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ের মুখ আর দেখা হয়নি মোহামেডানের। জেতা ম্যাচ ৩-৩ গোলে ড্র করে পয়েন্ট নষ্ট করে তারা। চরম রোমাঞ্চকর-আক্রমণাত্মক ম্যাচটি বেশ উপভোগ করেছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আসা শ’ তিনেক দর্শক। নিজেদের চতুর্দশ ম্যাচে এটা ব্রাদার্সের তৃতীয় ড্র। মাত্র ৯ পয়েন্ট তাদের। পয়েন্ট টেবিলে আছে ১৩ দলের মধ্যে দ্বাদশ স্থানে। রেলিগেশন চোখ রাঙাচ্ছে তাদের। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা মোহামেডানের চতুর্থ ড্র। ১৩ পয়েন্ট তাদের। অবস্থান কিঞ্চিৎ স্বস্তিদায়ক, দশম স্থানে। প্রথম লেগে দু’দলের মোকাবেলায় জিতেছিল ব্রাদার্স ১-০ গোলে। বুধবার খেলার শুরুতে দু’দল খেলে দুই রকম ফর্মেশনে। ব্রাদার্স : ৪-৪-২, মোহামেডান : ৪-১-৪-১। ২৩ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইটরা। ব্রাদার্সের ডি-বক্সের বাইরে বল পান মিডফিল্ডার শেখ গালিব নেওয়াজ। তিনি বল পাস দেন সতীর্থ মালির ফরোয়ার্ড সুলেমানে দিয়াবাতেকে। দিয়াবাতে থ্রু পাস বাড়ান সতীর্থ আগুয়ান আরেক ফরোয়ার্ড তকলিস আহমেদের উদ্দেশে। বল নিয়ে তকলিস ততক্ষণে ঢুকে পড়েন ব্রাদার্সের বক্সের ভেতরে। বিপদ বুঝে ততক্ষণে পজিশন নিয়ে ফেলেছেন গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য। তকলিসকে বাধা দিতে তার দু’পাশে দুই ডিফেন্ডারও ছিলেন। কিন্তু তাদের কাউকেই কোন সুযোগ দেননি তকলিস। দিয়াবাতের বাড়ানো পাসটি ছিল হাওয়ায় ভাসানো। সেই বল পেয়েই ‘হিট এ্যান্ড রান’ স্টাইলে চমৎকারভাবে গোল করেন। দিয়াবাতের বলটি পায়ে লাগিয়ে তা মাটিতে পড়ার আগেই শূন্যেই জোরালো শট মারেন তকলিস, তা আর ঝাঁপিয়ে পড়েও রুখতে পারেননি বিপ্লব (১-০)। ৪২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে সর্বাধিক ১৯ বারের লীগ শিরোপাধারী মোহামেডান। এবারও গোলের নেপথ্য রূপকার দিয়াবাতে। ডানপ্রান্ত দিয়ে বল ধরে ব্রাদার্সের বক্সে ঢুকে পড়েন দিয়াবাতে। ডান পায়ের গড়ানো ক্রস করেন। সেই বলে দৌড়ে এসে ডান পায়ের তীব্র শট নেন মিডফিল্ডার ইউসুফ সিফাত। সেই শট ব্রাদার্স গোলরক্ষক বিপ্লব ফিরিয়ে দিলেও শেষরক্ষা করতে পারেননি। ফিরতি বলে আবারও শট নেন সিফাত। এবার বল ঠিকই আশ্রয় নেয় জালে। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার ছিল না জাতীয় দলের সাবেক এই তারকা গোলরক্ষকের (২-০)। প্রথমার্ধ শেষ হবার সামান্য আগে আবারও মোহামেডানের আক্রমণ এবং তা থেকে তৃতীয় গোল। ম্যাচের তখন ৪৩ মিনিট। ডি-বক্সের ডানপ্রান্ত দিয়ে মিডফিল্ডার শ্যামল ব্যাপারি ডান পায়ের যে গড়ানো ক্রস করেন তা থেকে সিফাত বাঁ পায়ে দুর্দান্ত ফিনিশ করেন (৩-০)। ইনজুরি টাইমে গোলের ‘হালি’ পূর্ণ করতে পারতো সাদা-কালোবাহিনী। অল্পের জন্য তা হয়নি। হয়নি ব্রাদার্স গোলরক্ষক বিপ্লবের কারণেই। বয়স প্রায় চল্লিশের কাছকাছি। বক্সের ভেতরে জটলার মধ্যে লাফিয়ে উঠে দিয়াবাতে জোরালো যে হেডটি করেন তা নিশ্চিত গোলই ছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে সে বল কর্নারের বিনিময়ে বাঁচিয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেন বিপ্লব। আরও আরেকবার প্রমাণ করে দেন, দেশীয় গোলরক্ষকদের মধ্যে শূন্যে বল বাঁচানোর ক্ষেত্রে এখনও তিনিই সেরা। বিপ্লবের এই ‘সেভ’ প্রচেষ্টা দেখে প্রেসবক্সে কর্মরত অনেক সাংবাদিকই একমত হলেন, এই গোলরক্ষা প্রচেষ্টার সঙ্গে ১৯৭০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের পেলের হেড ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক গর্ডন ব্যাংকসের গোলরক্ষা প্রচেষ্টার অনেকটাই মিল আছে। দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ধারা বজায় রাখে মোহামেডান। ৬৬ মিনিটে বক্সের ভেতর বল নিয়ে গোলরক্ষকের একেবারে সামনা সামনি-মুখোমুখি হয়েও গোল করতে পারেননি দিয়াবাতে। তার নেয়া ডান পায়ের গড়ানো শট শুয়ে পড়ে পা দিয়ে প্রতিহত করেন বিপ্লব। ৬৯ মিনিটে এক গোল শোধ করে গোপীবাগের দল ব্রাদার্স। থ্রো ইন থেকে বল ধরে ডানপ্রান্ত দিয়ে মোহামেডানের বক্সে ঢুকে পড়েন ব্রাদার্সের সুদানি জেমস মগা (অনেক বছর পর আবারও বাংলাদেশে খেলতে এসেছেন তিনি)। ডান পায়ের যে গড়ানো ক্রস করেন তা থেকে গোল করতে কোন অসুবিধে হয়নি মিডফিল্ডার মান্নাফ রাব্বির (১-৩)। ৮১ মিনিটে তকলিস বক্সে ঢুকে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে কাটিয়েও বল মারেন পোস্টের বাইরে। গোলবঞ্চিত হয় মোহামেডান। পরের মিনিটেই ব্যবধান কমিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলে ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’ খ্যাত ব্রাদার্স। মান্নাফ রাব্বি ডানপ্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে উঁচু ক্রস করেন। সেই বল হেড করেন ব্রাদার্সের এক খেলোয়াড়। গোললাইন থেকে সেই হেডের বল ফিরিয়ে দেন মোহামেডানের নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার ওরিয়াকু সিরিল। ফিরতি বলে বাঁ পায়ের জোরালো শটে বল জালে পাঠান ব্রাদার্সের মিডফিল্ডার শফিকুল ইসলাম শফি (২-৩)। ৮৮ মিনিটে সমতায় ফিরে তাক লাগিয়ে দেয় ব্রাদার্স। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে মোহামেডানের বক্সে ঢুকে পড়েন ব্রাদার্সের ডিফেন্ডার শাকিল হোসেন। বাঁ পায়ের গড়ানো ক্রস করেন। তা থেকে ডান পায়ের উঁচু শটে মান্নাফ রাব্বি বল পাঠান মোহামেডানের জালে (৩-৩)। রেফারি নাহিদ খেলা শেষের বাঁশি বাজালে ‘জয়ের সমতুল্য’ ড্র করার রোমাঞ্চে মাটিতে সিজদা দেন ব্রাদার্সের সব ফুটবলার। আর ‘হারের সমতুল্য ড্র’র বেদনায় হতাশ মোহামেডানের কয়েক ফুটবলার শুয়ে পড়েন সবুজ ঘাসের ওপর। * ময়মনসিংহে আরামবাগ-সাইফ কেউই জেতেনি ॥ ময়মনসিংহের শহীদ রফিকউদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত অপর ম্যাচে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ১-১ গোলে ড্র করে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে। আরামবাগের ক্যামেরুন ফরোয়ার্ড পল এমিল ম্যাচের ৪৭ মিনিটে এবং সাইফের কলম্বিয়ান মিডফিল্ডার দেনিস কর্দোবা ৬৬ মিনিটে গোলগুলো করেন। লীগের প্রথমপর্বে দু’দলের সাক্ষাতে ১-০ গোলে জিতেছিল আরামবাগ। নিজেদের পঞ্চদশ ম্যাচে এটা তৃতীয় ড্র সাইফের। ৩০ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে আগের চতুর্থ স্থানেই। পক্ষান্তরে ১৪ ম্যাচে এটা দ্বিতীয় ড্র আরামবাগের। ২০ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে সাইফের ঠিক নিচেই, পাঁচ নম্বরে।
×