ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের জন্য স্মার্ট প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ৪ মে ২০১৯

শিশুদের জন্য স্মার্ট প্রযুক্তি

প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও স্মার্ট প্রযুক্তির যুগে আধুনিককালের প্রতিটি ঘরেই স্মার্ট ডিভাইসের উপস্থিতি দেখা যায়। এখন হাত বাড়ালেই শিশুরাও পেয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোন, ট্যাবসহ আধুনিক সব মোবাইল ডিভাইস। এসব স্মার্ট পণ্য শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলছে কিনা এ নিয়ে অনেক কথা আছে। রং আজকের ফিচারের লেখাটা সাজানো হয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের শিশুরা। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও প্রযুক্তি ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, এটা কিন্তু এখন বিশ্ব গবেষণায় সবাই স্বীকার করছেন। তবে এক্ষেত্রে শিশুদের ওপর নজরদারি রাখার কথা বলা হয়েছে। শিশুর মানসিক বিকাশ যখন থেকে শুরু হয় সেই সময় অর্থাৎ শিশুর বয়স দুই বছর পেরুলেই তারা স্মার্ট ডিভাইস থেকে জ্ঞান নিতে পারে। আর্কাইভস অব ডিজিজেস ইন চাইল্ডহুড গবেষণায় মোট ৮২ জন শিশু অংশগ্রহণ করে। ২ থেকে তিন বছর বয়সের ওই শিশুদের পিতামাতা প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে তথ্য দেন। অংশগ্রহণকারীদের ৮২ শতাংশই বাসায় থাকা পিতামাতার স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করতে পারে। সেখানে তারা এ্যাপগুলো নিয়মিত খুঁজে পায়। স্মার্ট ডিভাইসগুলো ব্যবহারের পর ওই সব শিশুর মধ্যে অন্য শিশুদের তুলনায় বিশেষ কিছু পরিবর্তন খেয়াল করেন গবেষকরা। স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করা ২৯ মাসের শিশুদের দিয়ে ১ বছর নিয়মিত টাচ স্ক্রিন ব্যবহার করিয়ে চারটি দক্ষতা সঞ্চালন করা সম্ভব যেগুলো তার সামাজিকীকরণে ভূমিকা রাখে। শিশুদের জন্য কয়েকটি প্রযুক্তি : অভিভাবকদের সঙ্গেই নিরাপদে যোগাযোগ করার উপযোগী শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা স্মার্টফোন কিংবা শিশুদের শিক্ষণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বিশেষ বিশেষ এ্যাপ্লিকেশনসহ প্রযুক্তিগুলো দেখেছে বিশ্ব। এর বাইরেও বড়দের জন্য যেমন বৈচিত্র্যময় সব গ্যাজেট রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুবিধার্থে, শিশুদের জন্যও তেমনি প্রযুক্তির ছোঁয়া নিয়ে উপস্থিত হয়েছে কয়েকটি প্রযুক্তি। ই-স্কিন থার্মোমিটার : বিভিন্ন ধরনের এ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের জন্য ট্যাটু নির্মাতা হিসেবে ভিভালিংক সুপরিচিত প্রযুক্তিবিশ্বে। এবারের সিইএসএ তারা ট্যাটুর মতোই দেখতে বিশেষ একটি গ্যাজেট হাজির করেছে শিশুদের জন্য। শিশুদের প্রিয় টেডি বিয়ারের মুখের আকৃতিতে তৈরি ট্যাটুর মতো এই গ্যাজেটটি মূলত একটি স্মার্ট থার্মোমিটার। জ্বর বা অন্যান্য অসুস্থতায় শিশুর শরীরের তাপমাত্রা মনিটর গুরুত্ব বহন করে। সেই কাজটি নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে ভিভালিংকের ই-স্কিন থার্মোমিটার। পাতলা ও নমনীয় এই থার্মোমিটারকে শিশুর কপাল বা শরীরের অন্য কোন স্থানে লাগিয়ে দেয়া যাবে। আর তারপর এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই শিশুর শরীরের তাপমাত্রা মনিটর শুরু করবে। এর সঙ্গের স্মার্টফোন এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এরপর সহজেই এই তাপমাত্রার রেকর্ড সংরক্ষণও করা যাবে। শরীরের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেলে সতর্কও করে দেবে এই এ্যাপ্লিকেশন। তবে এর দাম সম্পর্কে কোন তথ্য জানানো হয়নি এখনও। প্যাসিফ-আই স্মার্ট প্যাসিফায়ার : শিশুর শরীরের তাপমাত্রা মনিটর করার জন্য আরেকটি গ্যাজেট হলো ব্লুমায়েস্ত্রোর তৈরি প্যাসিফ-আই স্মার্ট প্যাসিফায়ার। তবে আগের থার্মোমিটারের সঙ্গে এর মূল পার্থক্য হলো এর সাহায্যে শিশুর তাপমাত্রা গ্রহণ করতে হলে একে শিশুর মুখের মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে। নিপলের আকৃতিতে তৈরি এই প্যাসিফায়ারকে অবশ্য মুখের মধ্যে প্রবেশ করানো খুব কঠিন কাজ হবে না বলেই জানিয়েছে বুমায়েস্ত্রো। ব্লুটুথ সমর্থিত এই থার্মোমিটারটি শিশুর শরীরের তাপমাত্রা গ্রহণের পর ব্লুটুথের মাধ্যমে তা জানিয়ে দিতে পারবে স্মার্টফোনে। আইওএস ও এ্যান্ড্রয়েডের প্ল্যাটফর্মের জন্যই রয়েছে এর এ্যাপ্লিকেশন। এই এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে শিশুর তাপমাত্রার রেকর্ড রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরামর্শও পাওয়া যাবে। এর দাম রাখা হয়েছে ৪০ মার্কিন ডলার। দ্য বেবি গিগল : শিশুর খাবার বোতলেও প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। ফ্রান্সের কোম্পানি স্লো কন্ট্রোল তৈরি করেছে এই স্মার্ট বোতল বা ফিডার। শিশু খাওয়ার জন্য কতটুকু সময় ব্যয় করছে কিংবা কী পরিমাণ খাচ্ছেÑ এসব তথ্য খুব সহজেই মনিটর করতে সক্ষম হবে বেবি গিগল নামের এই স্মার্ট ফিডার। স্মার্ট এই ফিডারের সঙ্গে কাজ করার জন্য একটি এ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে। এই এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেই ফিডারে কতটুকু খাবার শিশু খেল কিংবা খাওয়ার জন্য কতটুকু সময় লাগল, এমন সব তথ্য সংরক্ষিত হবে। শুধু তাই নয়, ফিডারটি কতটুকু কৌণিক বিন্যাসে শিশুর হাতে ধরা রয়েছে এবং এর ফলে খাবারের সঙ্গে সঙ্গে শিশু বাতাস খেয়ে নিচ্ছে কি না, সেই তথ্যও জানাবে বেবি গিগল। ফলে শিশুর খাদ্যাভ্যাস মনিটর করার জন্য এক বেবি গিগলই যথেষ্ট। এর দাম রাখা হয়েছে ১০০ ডলার। স্মার্ট ক্লিপ : চিপ জায়ান্ট ইন্টেল শিশুদের জন্য তৈরি করেছে এই বিশেষ স্মার্ট ক্লিপ। এটি মূলত সিটবেল্টের সঙ্গে লাগিয়ে রাখার উপযোগী একটি ক্লিপ। বিভিন্ন ধরনের সেন্সরে সমৃদ্ধ এই স্মার্ট ক্লিপ ব্লুটুথের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে পারে স্মার্টফোনের সঙ্গে। শিশুকে নিয়ে ভ্রমণে বের হলে শিশুকে সিটবেল্টে বেঁধে তার ওপর সংযুক্ত করতে হবে এই ক্লিপ। এরপর শিশু কোনভাবে ক্লিপটিকে খুলে ফেললে ব্লুটুথের মাধ্যমে সতর্ক সঙ্কেত প্রদান করা যাবে অভিভাবকের স্মার্টফোনে। ফলে শিশুকে গাড়িতে রেখে বের হলেও শিশু সিটেই নিরাপদে রয়েছে কি না, তা জানা যাবে এই স্মার্ট ক্লিপের মাধ্যমে। আবার শিশুকে গাড়িতে ভুল করে রেখে বের হয়ে গেলেও এটি সতর্ক করে দেবে। সেই সতর্ক সঙ্কেত বন্ধ করে তবেই শিশুকে গাড়িতে রেখে বের হওয়া যাবে। গাড়িতে শিশুকে রেখে যাওয়ায় যে ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তা প্রতিরোধ করতে এই স্মার্ট ক্লিপ কার্যকরী হবে বলে আশা করছে ইন্টেল। মামার : ফোরমমসের তৈরি মামারুকে বিশেষ ধরনের একটি দোলনার সঙ্গে তুলনা করা যায়। একে বলা হচ্ছে স্মার্ট দোলনা। শিশুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি এই স্মার্ট দোলনাতে শিশুকে আরামদায়কভাবে বসানো যাবে। আর তারপর এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পাঁচটি বিশেষ বিশেষ ভঙ্গিতে দুলতে পারবে। বাবা-মা শিশুকে কোলে নিয়ে যে বিশেষ ভঙ্গিতে দুলিয়ে থাকে কিংবা কোলে নিয়ে হাঁটার সময় যে ছন্দ তৈরি হয়, এই স্মার্ট দোলনাটি ঠিক তেমন ছন্দে দুলতে পারবে। ব্লুটুথ সমর্থিত মামারুর জন্য রয়েছে বিশেষ স্মার্টফোন এ্যাপ্লিকেশন যার মাধ্যমে দূর থেকেও স্মার্টফোন দিয়েই এই মামারর দুলুনি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বাড়তি সুবিধা হিসেবে এতে বিল্ট-ইন স্পীকারও রয়েছে। ফলে প্রয়োজনে শিশুর জন্য উপযোগী গানও বাজানো যাবে মামারুতে। ২৭০ ডলার দামের এই দোলনাটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। গ্র্রাস : শিশুদের জন্য এর আগেও বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের ব্রাশ। তবে এগুলোর যে কোনটির চাইতেই একটু ভিন্ন রকম গ্রাস। এটি একাধারে স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট পিসির সঙ্গে ভিডিও কন্ট্রোলার হিসেবে কাজ করতে পারবে, আবার গেম প্যাডের সঙ্গেও গেম কন্ট্রোলার হিসেবে কাজ করতে পারবে। এ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস প্ল্যাটফর্মের অনেক গেমের সঙ্গেই কাজ করবে গ্রাস। এতে করে গ্রাস দিয়ে ব্রাশ করার সময় সেই গেমের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পাশাপাশি ব্রাশ করার কলাকৌশলও ভিডিওর মাধ্যমে শেখানো হবে এই ব্রাশের এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। গ্রাসের ক্লাউড সার্ভিসের মাধ্যমে শিশুদের ব্রাশ করার হিসাবও সংরক্ষিত হয়। ফলে অভিভাবকরা গ্রাস এ্যাপ্লিকেশন থেকেই শিশুরা ব্রাশ করেছে কি না, সেটি নিশ্চিত হতে পারবেন। ৬০ ডলারের এই ব্রাশটি বছরের শুরুর দিকেই বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে নির্মাতারা। এটি জনপ্রিয়তা পেলে হয়ত শিশুদের উদ্দেশ্যে বলতে হবে ‘গ্রাস ইওর টিথ’। হেয়ারও জিপিএস ট্র্যাকিং ঘড়ি : শিশুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এই জিপিএস ট্র্যাকিং হাতঘড়ি। বড়দের জন্য বিভিন্ন স্মার্ট হাতঘড়ির মতোই বিভিন্ন ফিচার রয়েছে এতে। সময় দেখার সুবিধা ছাড়াও এই ঘড়ির জন্য অভিভাবক শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। শিশু এই নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করলে ঘড়ি থেকে সরাসরি নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে অভিভাবকের কাছে। এতে সিমকার্ড ব্যবহারের সুবিধাও রয়েছে। আর জিপিএস সমর্থিত হওয়ার এর মাধ্যমে সর্বক্ষণিকভাবে শিশুর অবস্থানটি জেনে নেয়ার সুবিধাও রয়েছে। লোকেশন শেয়ারিং এ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবারের সকলের তৎক্ষণাৎ অবস্থানও পরস্পর জেনে নেয়া যায় এই ঘড়ি থেকেই। টেম্পট্র্যাক : শিশুর শরীরের তাপমাত্রা মনিটরের আরও একটি গ্যাজেটের নাম টেম্পট্র্যাক। ব্লুস্পার্ক নামের একটি কোম্পানি তৈরি করেছে এই থার্মোমিটারটি। চারকোণা আকৃতির এই ডিজিটাল থার্মোমিটার চলে ব্লুটুথে যাতে করে ৪০ ফুট দূর থেকেও এটি শিশুর শরীরের তাপমাত্রা জানিয়ে দিতে পারবে স্মার্টফোনে। আরেকটি বিশেষত্ব হলো এটি শিশুর শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে রাখলে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত নিয়মিত বিরতিতে তাপমাত্রার পরিমাণ জানাতে পারে। ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইটের কম তাপমাত্রা থাকলে এটি সবুজ রং প্রদর্শন করবে, ১০০.৪ ডিগ্রীতে তাপমাত্রা পৌঁছালেই এটি দেখাবে কমলা রং।
×