ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফির শেষ দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ!

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মাশরাফির শেষ দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ!

মিথুন আশরাফ ॥ নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বাংলাদেশ দল বেহাল অবস্থায় পড়ে গেছে। একেতো হারের পর হার হচ্ছে। আবার দলে ইনজুরি এমনভাবে ঘিরে ধরেছে, একাদশ গঠন করাই কঠিন হয়ে পড়ছে। কি বিপদেই না পড়েছে মাশরাফিবাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি ওয়ানডে সিরিজ শেষ হয় ততই যেন ভাল। সেই প্রতীক্ষাই যেন করা হচ্ছে। আজ সেই প্রতীক্ষা শেষ হচ্ছেও। ডানেডিনে ভোর ৪টায় ম্যাচ শুরু হয়ে দুপুরের আগেই শেষ হয়ে যাবে। দলের কী অবস্থা, তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেও কী হার হলো? সেই উত্তর মিলে যাবে। তবে ম্যাচটির আগে কিন্তু জয়ের ক্ষুধায় কাতর বাংলাদেশ। যদি বিশ্বকাপের পর মাশরাফি অবসর নিয়ে নেন তাহলে বিদেশের মাটিতে এটিই হয়তো তার দ্বিপক্ষীয় শেষ ওয়ানডে সিরিজ। তাহলে আজ তার শেষ ম্যাচও। এই ম্যাচটিতে এখন বাংলাদেশ জিততে পারে কিনা সেদিকেই নজর থাকছে। টানা দুই ম্যাচ হার হয়েছে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও এক ম্যাচ হাতে রেখে ২-০ ব্যবধানে হার হয়ে গেছে। আজ তৃতীয় ওয়ানডে হার মানে আবারও নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হার হওয়া। হোয়াইটওয়াশ হওয়া। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১৩টি ওয়ানডে ম্যাচের সবকটিতে হারা। কিন্তু বাংলাদেশ দল এবার আর হারতে চায় না। তারা চায় শেষ ওয়ানডেটি জিতে নিতে। পেছনে প্রেরণাও আছে। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাওয়ার আগে আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডও ছিল। সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এই হারে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তাতে করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও নিউজিল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। আজও সিরিজের শেষ ওয়ানডে। দুর্দশাগ্রস্ত বাংলাদেশ দল যদি কোনভাবে দটাড়িয়ে যায় তাহলেই তো জয় ধরা দিতে পারে। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও সেদিকেই নজর দিতে চেয়েছেন। বলেছেন, ‘গত বছর (২০১৭ সালে) আয়ারল্যান্ডে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলাম। আমরা কিন্তু ম্যাচটা জিতেছি। আবার আয়ারল্যান্ড থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গিয়েও আমরা নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম। অনুভূতিটা অসাধারণ ছিল। আমরা আবারও এটাই করতে চাই। কিন্তু সবসময়ই যেটি বলি, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোটা সবসময়ই কঠিন। তবে ভাল লাগছে যে উইকেট কিন্তু বেশ ভাল। আশা করছি কাল (আজ) আমরা এখানে ভাল খেলব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি অবশ্যই জয়ের কথা বলব। ২০১৭ সালে আমরা আয়ারল্যান্ডে শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম। আসলে সবসময় যেটি আশা করা হয় সেটি কিন্তু হয় না। এ দেশের মাটিতে ম্যাচ জেতাটা অনেক কঠিন হয়তো, সেটি আমরা জানি। তারপরও আমরা জিততে চাই।’ মাশরাফির কথায় অবশ্য বোঝা যাচ্ছে আবার তিনি এখন নিউজিল্যান্ড সফর নিয়ে নন, বিশ্বকাপ নিয়েও ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘এই সিরিজে আমরা যেভাবে খেলতে চেয়েছিলাম সেটি খেলতে পারিনি। অনেক পরিকল্পনাই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এর মানে এই না যে সামনে এগোনোর সুযোগ নেই। এই সফরে অনেক দুর্বল দিকগুলো বেরিয়ে এসেছে। বিশ্বকাপের ১০০ দিন বাকি আছে। এই দুর্বল দিকগুলো নিয়ে তো কাজ করার অনেক সুযোগ থাকছে।’ নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগেই নিউজিল্যান্ডে অন্তত একটি ম্যাচ জেতার আশার কথা অধিনায়ক ও কোচ স্টিভ রোডস জানিয়েছিলেন। কখনই যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোন ফরমেটের ক্রিকেটেই জেতা যায়নি। জিততে হলে ওয়ানডে ফরমেটের কোন ম্যাচকেই টার্গেট করতে হতো। টেস্টে জেতাতো আরও কঠিন। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশতো পাত্তাই পেল না। দুই ওয়ানডেতেই ৮ উইকেটে হেরেছে। উড়ে গেছে বাংলাদেশ। যদি কোনভাবে আজ জেতা যায় তাহলে নিউজিল্যান্ডে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো জেতার কৃতিত্ব জমা হবে। কিন্তু তা কী আদৌ সম্ভব? মোহাম্মদ মিঠুন টানা দুই ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। দুই ম্যাচেই তিনি বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান করেছেন। তিনি ইনজুরিতে আজ খেলতে পারবেন না। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট মিঠুনকে প্রথম টেস্ট থেকেও দূরে সরিয়ে দিতে পারে। মিঠুনের সঙ্গে মুশফিকুর রহীমও ইনজুরিতে পড়েছেন। পরাজরের একপাশে ব্যথা অনুভূত হয়েছে। পুরনো চোট এটি। তবে মুশফিক খেলতে পারেন। কিন্তু খেললেও কী পুরো মনোযোগ দিতে পারবেন? সমস্যা হতেই পারে। মিঠুন নেই। মুশফিকের কাছ থেকে শতভাগ পাওয়ার আশা কমে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তামিম, লিটন, সৌম্য, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বিরই ভরসা। মুমিনুলও তাতে যোগ হতে পারেন। কিন্তু দল যখন মিঠুন, মুশফিককে নিয়েই কিছু করতে পারেনি। মিঠুনতো নেই-ই। মুশফিকের এ ব্যথা নিয়ে খেলায় কী দুই ম্যাচের চেয়ে বেশি জৌলুস ছড়ানো যাবে? বোঝাই যাচ্ছে খুব ভাল কিছু না হলে, দিনটি নিজেদের না হলে, তৃতীয় ওয়ানডেতে আরও কাহিল অবস্থা হতে পারে বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এখন পর্যন্ত এর আগে তিনটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সবকটিতে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রথমবার, ২০১০ সালে দ্বিতীয়বার ও ২০১৬ সালে তৃতীয়বার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। প্রতিবারই তিন ম্যাচের সিরিজ হয়। কোন সিরিজেই একটি ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ হয়েছে প্রতিবার। এবার চতুর্থবারের মতো তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে গিয়েও একই দুঃস্মৃতির মুখে পড়েছে। আজ ডানেডিনে হারলেই সেই দুঃস্মৃতি ঘাড়ে চেপে বসবে। এখন দেখা যাক নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ক্ষুধায় কাতর হয়ে ওঠা বাংলাদেশ সেই অধরা জয়টি পায় কিনা।
×