ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর ঐক্যের ডাক মেনে নেয়ার কারণ নেই ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর ঐক্যের ডাক মেনে নেয়ার কারণ নেই ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জাতীয় ঐক্যের যে ডাক দিয়েছেন তা মেনে নেয়ার কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমি শুনেছি। তার বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে তিনি একটা ‘গিল্টি কনসেন্স’ থেকে বক্তব্য দিয়েছেন। কেন জানি না তার মনে হয়েছে, নির্বাচনটা ঠিক হয়নি তাই একটা ব্যাখা দেয়া প্রয়োজন। সেই ব্যাখাটি তিনি দিয়েছেন। ফখরুল বলেন, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের সঙ্গে সংলাপ করেছেন তখন তিনি যেসব কথা বলেছিলেন, তা কি রাখতে পেরেছেন? একটাও রাখতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন, কোন গ্রেফতার হবে না, নতুন কোন মামলা হবে না। এর একটা কথাও তিনি রাখেননি। নির্বাচনের একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার কথা ছিল, তাও করেননি। একইভাবে তিনি আজকে যেসব বলছেন, তাও কথার কথা। কথাগুলো তিনি সব সময় বলেন। আমরা তো নির্বাচনের ফলই প্রত্যাখ্যান করেছি। সেখানে নতুন করে শপথ নেয়া বা সংসদে যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ঐক্যের ডাক মেনে নেয়ারও কোন কারণ নেই। ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিএনপি কেন ভাল করতে পারল না, কেন আওয়ামী লীগ এত ভাল করল। সাধারণত আমরা কি দেখি? একটা নির্বাচনের পরে এই ধরনের কথা কেউ আনে না যে প্রতিপক্ষ কেন পরাজিত হলো। তিনি বিএনপির ব্যাপারে অনেক কথা বলেছেন তার চিন্তা-ভাবনা থেকে। তবে আসল ঘটনায় কেন কেউ যেতে চাচ্ছে না। কারণ, ভয়। এ কারণে মিডিয়াও বলছে না। কিন্তু ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন পলিটিক্যাল এরিয়া থেকে যে বক্তব্য এসেছে, যেসব রিপোর্ট এসেছে, তাতে প্রমাণিত, এই নির্বাচন কোন নির্বাচনই হয়নি। এটা জাতির সঙ্গে তামাশা হয়েছে। ফখরুল বলেন, আমার কাছে মনে হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের বড় রকমের ক্ষতি করে দিয়েছে দীর্ঘস্থায়ীভাবে। এই নির্বাচনের ফলে মানুষের নির্বাচন প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে আস্থা চলে গেছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর থেকেও আস্থা চলে গেছে। এ নির্বাচনে বিভিন্ন এজেন্সিকে ব্যবহার করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে রাষ্ট্রকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। ফখরুল বলেন, শুধু আমি নই, দেশের সব ধরনের সচেতন মানুষ মনে করে, এই নির্বাচন কোন নির্বাচনই হয়নি। যে কারণে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা পুনরায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন দাবি করেছি। সেই নির্বাচনে জনগণ যেন তাদের রায় দিতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি। ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে ইশতেহার এবং কাজের ফিরিস্তি দিয়েছেন, সেখানেও বিরাট রকমের গড়মিল রয়েছে। আমরা এর আগেও বলেছি, যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে এটা পুরোপুরি একটা ধোঁকার উন্নয়ন। কিছু মানুষ অত্যন্ত ধনী হচ্ছে, পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে যে দেশে ধনীর সংখ্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে। আর গরিব আরও গরিব হচ্ছে। ফখরুল বলেন, প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নিচে চলে যাচ্ছে। জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। বিনিয়োগের কোন নিরাপত্তা নেই। ব্যাংকে যারা টাকা রাখছেন তারা দেখছেন বিভিন্নভাবে তাদের টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে। দুর্নীতি এমনভাবে বেড়েছে, যা নিয়ে কেউ কোন প্রশ্নও করতে পারে না। পুরোপুরি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ। জাফরুল্লাহ বিএনপির কেউ নাÑরিজভী ॥ তারেক রহমানকে দুই বছর রাজনীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রচ- ক্ষুব্ধ হয়েছেন মন্তব্য করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জাফরুল্লাহ বিএনপির কেউ না, তিনি দলের একজন শুভাকাক্সক্ষী মাত্র। তিনি বলেন, জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুধু বিএনপি নয়, সাধারণ জনগণও প্রত্যাখ্যান করেছে। রিজভী বলেন, তারেক রহমান সম্পর্কে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন সে ধরনের বক্তব্য তিনি মিডিয়ায় না দিয়ে দলীয় ফোরামে বলতে পারতেন। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি সুসংগঠিত এবং ঐক্যবদ্ধ আছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তো ভেতর থেকে ভেঙ্গে চুপসে গেছে। সে কারণে তাদের পুলিশের ওপর নির্ভর হতে হয়। কারাগারে অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বসবাসের জায়গাটির কোন পরিবর্তন হয়নি অভিযোগ করে রিজভী বলেন, অস্বাস্থ্যকর, স্যাঁতসেতে, ধুলাবালিতে আকীর্ণ কক্ষে তাকে বাস করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা বার বার দাবি জানানো সত্ত্বেও তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, দলের নেতা মুনীর হোসেন, বেলাল আহমদ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
×