ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উপকূলীয় এলাকায় লবণমুক্ত পানি সরবরাহের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

উপকূলীয় এলাকায় লবণমুক্ত পানি সরবরাহের উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উপকূলীয় ও দ্বীপ এলাকায় লবণাক্ততামুক্ত নিরাপদ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে এক হাজার ১৪০টি সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য ‘পরিবেশবান্ধব সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ’ নামে ৪৪ কোটি ৯৭ লাখ ১৬ হাজার টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। গত ২৮ নবেম্বর প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে উপকূলীয় ও দ্বীপ এলাকায় লবণাক্ততামুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পিইসি সভায় বেশকিছু সুপারিশ দিয়ে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করা হলে সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই)। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন ১৬টি জেলা রয়েছে। এই ১৬টি জেলার উপকূলবর্তী উপজেলা ও দ্বীপগুলোতে বর্তমানে অগভীর ও গভীর স্তরে বিদ্যমান পানির উৎসগুলোতে লবণাক্ততা ও আর্সেনিক দূষণের প্রভাব দেখা যায়। ফলে এসব এলাকার জনগণ নিরাপদ পানির তীব্র সঙ্কটে পড়েছে। শুধু তাই নয়, এলাকাগুলো উপকূলবর্তী নদীবেষ্টিত চরাঞ্চল ও সমুদ্রবেষ্টিত দীপাঞ্চল হওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির উৎসগুলো লবণাক্ততার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর সমাধান হিসেবে পরিবেশবান্ধব সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন স্থাপন করে দুর্গত ও অসহায় মানুষের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানির সরবরাহ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার ১৬টি জেলার ৬৬টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ১৪০টি সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিটে পাঁচটি করে সোলার প্যানেল থাকবে এবং প্রতিটি ইউনিট থেকে পাঁচটি পরিবারকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পে যেকোনো উৎস থেকে লবণাক্ততা, আয়রন, আর্সেনিক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদিতে দূষিত হওয়া পানি পরিশোধন করা হবে। এর জন্য সোলার পাম্পের মাধ্যমে দূষিত পানি সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিটে পাঠানোর আগে বিশোধন করে সুবিধাভোগীদের সরবরাহ করা হবে। টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রকল্প এলাকায় সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান আবু মোঃ মহিউদ্দিন কাদেরীর সই করা পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা বলেছে, প্রকল্পের আওতায় মোট এক হাজার ১৪০টি সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিটির একক মূল্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা করে প্রস্তাব করা হয়েছে। এই মূল্য নির্ধারণের ভিত্তি, প্রস্তাবিত যন্ত্রটির ড্রইং, ডিজাইন ও কার্যকারিতা বিষয়ে বিস্তারিত সভায় উপস্থাপন করা যেতে পারে। অর্থাৎ পিইসি সভায় এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তাছাড়া সভায় এসব ইউনিট কেনার জন্য প্রস্তাবিত ১৬টি ইউনিটের পরিবর্তে একটি প্যাকেজেই কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যেসব উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কর হবে সেগুলো হচ্ছে, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা; খুলনার বটিয়াঘাটা, দাকোপ ও কয়রা উপজেলা; সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা; বাগেরহাটের ফকিরহাট, মোড়লগঞ্জ, রামপাল, স্মরণখোলা ও মোংলা উপজেলা; শরিয়তপুরের ডামুডা ও গোসাইরহাট উপজেলা; বরিশালের বরিশাল সদর, বাবুগঞ্জ, বাহেরগঞ্জ, গৌরনদী, মুলাদী, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা; চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুন্ড, হাটহাজারী, সন্দীপ, পটিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলা; কক্সবাজারের কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা; পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলা; পটুয়াখালীর বাউফল, গলাচিপা, কলাপাড়া ও দশমিনা উপজেলা; বড়গুনা জেলার বরগুনা সদর, আমতলি, বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা ও তালতলি উপজেলা; ভোলার ভোলা সদর, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, লালমোহন, চরফ্যাশন, তজুমুদ্দিন ও মনপুরা উপজেলা; নোয়াখালীর নোয়াখালী সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়া উপজেলা; লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা; ফেনীর দাগনভুঁইয়া, ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলা এবং চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা।
×