ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ইভিএম হ্যাক করার কোন সুযোগ নেই ॥ ইসি

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ইভিএম হ্যাক করার কোন সুযোগ নেই ॥ ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ইভিএম মেশিন হ্যাক করার কোন সুযোগ নেই। ব্যালট পেপারের মতো কেউ ইচ্ছা করলেও ইভিএমে ভোট জালিয়াতিও করতে পারবে না। এমনকি কোন ভোটার যদি ভোট দিতে কেন্দ্রে না যান, তাহলেও তার ভোট অন্য কেউ দিতে পারবে না। এর মধ্যে এমন ধরনের সফটওয়্যার রয়েছে যার ভোট কেবল সেই দিতে পাররে। একবার ভোট হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার ভোট দেয়ার কোন সুযোগ থাকছে না। ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট অথবা এনআইডি অথবা ভোটার নম্বরের মাধ্যমে যাচায়ে ভোটার শনাক্ত হওয়ার পরই কেবল একজন ভোটার ভোট দিতে পারবেন। ভোটাররে এই শনাক্তকরণ ডিসপ্লেতে পোলিং অফিসার বা এজেন্টরা দেখতে পাবে। মোট কথা একজন ভোটার শনাক্ত হওয়ার পরই কেবল ইভিএমে ভোট দিতে পারবেন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম প্রদর্শনী (মেলা) উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইভিএমে ভোট গ্রহণের এসব সুবিধার কথা তুলে ধরা হয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মেলার উদ্বোধনের আগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ইভিএমর ভোট গ্রহণের এসব সুবিধার কথা আগত দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষে পক্ষ থেকে বলা হয় ইভিএমে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগ নেই বিধায় হ্যাকিং করার কোন সুযোগ নেই। জালভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল করে ভোট প্রদান, একজনের ভোট অন্যজনের পক্ষে কোনভাবেই দেয়া সম্ভব নয়। ভোটের নির্ধারিত সময়ের আগেও ইভিএম চালুর করার কোন সুযোগ নেই বিধায় ভোটগ্রহণের আগে ভোট দিয়ে ব্যালট ভরার কোন সুযোগ নেই। পাসওয়ার্ড প্রোটেকটেড হওয়ায় অনুমোদিত কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে এটি অপারেট করার সুযোগ থাকছে না। ইভিএম ছিনতাই করে নিয়ে অবৈধ ভোট দেয়াও সম্ভব হবে না। ভোটদানের ক্ষেত্রে বায়োম্যাট্রিক ভেরিফিকেশন ও ব্যক্তির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বিধায় কেন্দ্র দখল করেও ভোট দেয়া সম্ভব হবে না। এতে আরও উল্লেখ করা হয় একজন ভোটার যাচাই-বাছাইয়ের পরই তিনি কেবল ভোট দেয়ার জন্য বুথে প্রবেশ করতে পারবেন। বুথে প্রবেশের পর প্রতীক নির্ধারণের সাদ বাটনে চাপ দেয়ার পরই ভোট নিশ্চিত করতে সবুজ বাটনে চাপ দিতে হবে। সবুজ বাটতে চাপ দেয়ার পর ভোট সম্পন্ন হয়েছে বলে ধন্যবাদ সূচক শব্দ হবে। এরপর হাজারবার বাটন চাপলেও কারও পক্ষে দ্বিতীয়বার ভোট দেয়া সম্ভব হবে না। ভোট শেষে অতিদ্রæত ভোট গণনা করা সম্ভব হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সোমবার দুপুরের ইভিএম প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম সীমিত পরিসরে ব্যবহার করা হবে। জনগণের মধ্যে সচেতন করে তুলতে দেশের ৬৪ জেলায় ইভিএম মেলার আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্তে¡ও এখানে প্রযুক্তির ব্যবহার কাক্সিক্ষত মাপকাঠিতে পৌঁছায়নি। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রও যেমন শুরু হয়েছিল। আজ তা বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। তেমনি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার একদিন বাস্তবতায় রূপ নেবে। প্রযুক্তি ব্যবহার কখনও থেমে থাকে না। আজ পর্যন্ত ইভিএম নিয়ে কেউ আপত্তি করেনি। আপনারা যাচাই করে দেখতে পারেন। ইভিএমে যদি ভুল ত্রæটি থাকে তাহলে ধরিয়ে দিন। সংশোধন করা হবে। তিনি বলেন, এটি ব্যবহারের আগে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে। কেন্দ্রের বাইরে অন্য কেই এসে ইভিএমে ভোট দিতে পারবে না। তিনি ইভিএম ব্যবহারে রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। বলেন, এটা থেকে পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটাকে নিয়ে সামনে এগোতে হবে। ইভিএম নিয়ে এখনই আমাদের শুরু করতে হবে। মানুষ ভোট দিতে চায়। নির্বাচন কমিশন ভোটারদের জিম্মাদার। নির্বাচন কমিশনের ওপর ভোটারদের ভোট প্রয়োগের মেকানিজম পরিচালনা নির্ভর করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, কোন গোয়ালা তার দইকে খারাপ বলে না, একইভাবে ইভিএম ব্যবহারকে আমরাও খারাপ বলি না। আপনারা খেয়ে দেখেন, যদি খারাপ হয় তাহলে কেউ খাবেন না। তখন আমরা এমনিতেই ফেলে দিব। আমরা ইভিএমে কোন ভুল ত্রæটি দেখিনি। যদি কেউ কোন ভুল ত্রæটি ধরতে পারেন তাহলে এই মেশিন আমরা বর্জন করব। কমিশনার কবিতা খানম বলেন, নির্বাচন কমিশনে আমরা শপথ নিয়ে এসেছি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য। এখানে কারও কোন সন্দেহের ক্ষেত্র আছে বলে মনে করি না। আমরা যদি আইনগুলো ঠিকমতো প্রয়োগ করি এবং সবাই মেনে চলি তাহলে যে কোন বিতর্কের উর্ধে উঠা সম্ভব। তিনিও বলেন, ইভিএমে ভোট দিয়ে কেউ যদি এর কোন ভুল ত্রæটি বের করে প্রমাণ দিতে পারে তাহলে আমরা এ মেশিন বর্জন করব। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য দেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ইভিএম বিষয়ে আপনারা রাজনৈতিক দলগুলোকে আবার ডাকেন। প্রয়োজনে ধরে নিয়ে আসুন। তাদেরকে দেখান। আগে আস্থা অর্জন করুন। ইভিএমর মাধ্যমে ভোট দেয়ার বিষয় দেখাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই মেলার আয়োজন কর হয়। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা আঙ্গুলে চাপ দিয়ে ইভিএমে ভোট দেন। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনার এবং ইসি সচিবালয়ে কর্মকর্তারাও প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
×