ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়ার বাজারে ধস

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৭ আগস্ট ২০১৮

 চামড়ার বাজারে ধস

ঈদ-উল-আজহায় সবকিছু ভালয় ভালয় কাটলেও কোরবানি পরবর্তী চামড়ার বাজারে ধস নামার সংবাদটি রীতিমতো উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, প্রতিবছর কোরবানিতে দেশের চামড়া শিল্পের সর্বাধিক চামড়া সংগৃহীত হয়ে থাকে; চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ। তদুপরি চামড়া ও চামড়া শিল্পের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও বিপুল। পোশাক শিল্প ও প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরই এর স্থান। অথচ এই চামড়া নিয়ে তেলেসমাতি কা-কারখানা ঘটতে দেখা গেল এবার। এজন্য দায়ী ট্যানারি মালিক সমিতি, হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনসহ সরকারের এক শ্রেণীর নীতিনির্ধারক। প্রতিবছর ঢাকঢোল পিটিয়ে নির্ধারণ করা হয় চামড়ার দাম। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার চামড়ার দর নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ বছর আগের চেয়ে ৫৫ শতাংশ কম দামে। অথচ এর মধ্যে লবণসহ প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ব্যাংক ঋণের সুদও বেড়েছে, অন্তত কমেনি। অথচ কমেছে চামড়ার দাম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ট্যানারি মালিকদের নানা টালবাহানা। সাভারে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তর নিয়ে তাদের নানা ওজর-আপত্তি ছিল অনেক আগে থেকেই। এক্ষেত্রে সরকার, বিসিক ও সংশ্লিষ্টদের দোষ-দায়িত্বও অস্বীকার করা যাবে না। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ২০০৩ সাল থেকে সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের চেষ্টা চললেও অদ্যাবধি সেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে স্থাপিত পূর্ণাঙ্গ ইটিপিসহ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। এ পর্যন্ত সেখানে হাজারীবাগের প্রায় তিন শ’ কারখানার মধ্যে বড়জোর দেড় শতাধিক কারখানা মোটামুটি উৎপাদনের পর্যায়ে যেতে পেরেছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। অনেক কারখানায় জমির দলিল হস্তান্তর হয়নি, কোন কোনটিতে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির সংযোগ লাগেনি। তদুপরি গড়ে ওঠেনি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও। ফলে ঢাকার বুড়িগঙ্গার মতো সমানে দূষিত হয়ে চলেছে ধলেশ্বরী ও বংশী নদী। আর এ সবের পুরোপুরি সুযোগ নিচ্ছেন ট্যানারি মালিকরা। জানা গেছে, পানির দামে চামড়া বেচতে গিয়ে মহার্ঘ লবণের দাম না ওঠার উপক্রম হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে ৮-১০ কেজি লবণ লাগে। ১ লাখ টাকার চামড়া মাত্র ৮শ’-১ হাজার টাকায় বিক্রির খবরও আছে। বাজার পড়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী দেশে চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবশ্য তা প্রতিরোধে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাখা হয়েছে সতর্কাবস্থায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে শুরু করবে আগামী সপ্তাহ থেকে কারখানাগুলো চালু হলে। তবে প্রশ্ন, তাদের এই বিলম্বিত বোধোদয়ের মাশুল দেবে কে বা কারা? কেননা, ইত্যবসরে ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, বিশেষ করে পাইকারি, মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম ও এতিমখানার মতো দাতব্য সংস্থাগুলোর। এর জন্য প্রয়োজন উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটিসহ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা চামড়া বা ব্লু লেদারের দাম কম। সুতরাং নজর দেয়া বাঞ্ছনীয় ফুটওয়্যারসহ চামড়া শিল্পজাত অন্যবিধ রফতানিমুখী পণ্য উৎপাদনে।
×