ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভার্চুয়াল আর বাস্তবের সমন্বয় চাই বন্ধুত্বে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২১ আগস্ট ২০১৮

 ভার্চুয়াল আর বাস্তবের  সমন্বয় চাই বন্ধুত্বে

প্রতিদিন বিকেল থেকে আড্ডা জমে চায়ের দোকান কিংবা এলাকার মাঠে। কখনও বা কোন বাড়ীর ছাদে। আড্ডার মধ্যে সবাই সবাইকে নিয়ে মজা করে, চলে গল্প-গুজব ও পরস্পরকে খোঁচাখুঁচি। আবার কাজের কথাও হয়। নিজেরদের নানা গল্প কিংবা মাঝে মাঝে গানের আসর বসে। ভালই কাটে তাদের আড্ডার সময়। ওদের মধ্যে একজন অবশ্য প্রায় পুরো সময়জুড়েই মাথা নিচু করে থাকে। আড্ডায় অত মনোযোগী না। সহজেই বোঝা যায় একটু বিছিন্ন। তার মন পড়ে থাকে অন্য কোথাও। মাথা নিচু করে সে কি করে? তার কি মন খারাপ? উত্তর অবশ্য জটিল না, খুবই সহজ। সে মাথা নিচু করে অবিরত স্মার্টফোনের স্ক্রিনের দিকেই তাকিয়ে থাকে। বন্ধুদের সঙ্গ কিংবা আড্ডার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোন ওয়েবসাইটে ঢোকা নিয়েই বেশি মনোযোগী সে। সেখানে ঢুকে নোটিফিকেশন চেক করা, ফ্রেন্ডলিস্টের সুন্দরী মেয়েদের প্রোফাইল ঘাঁটা কিংবা ছবি দেখা এসব নিয়েই তার ব্যস্ততা। কেউ মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠালে তার চোখ চকচক করে ওঠে। যার উদাহরণ দেয়া হলো, তার মতো বন্ধুদের সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। আমাদের চারপাশেই এদের বিচরণ। ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আর বাস্তব বন্ধুত্বের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা আসলে পরিণতি কেমন হতে পারে তাও আমরা অনুমান করতে পারি। বন্ধু কাকে বলে তা তো আমরা সকলেই জানি। তবে সামাজিক যোগাযোগের নানা ওয়েবসাইট জনপ্রিয় হওয়ার পর বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে বলা যায়। এখন আমরা ভার্চুয়াল বন্ধু আর বাস্তব বন্ধু- এ দুই ধরনের বন্ধুত্ব দেখে অভ্যস্ত। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আর বাস্তব বন্ধুত্বের মধ্যে পার্থক্যটা আসলে কোথায়? ভার্চুয়াল বন্ধুত্বও এক ধরনের বন্ধুত্বের ধারণা। ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে পরিচয়ের মাধ্যমে সচরাচর ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব হয়ে থাকে। এ ধরনের বন্ধুত্বে অনেক ক্ষেত্রেই এক বন্ধুর সঙ্গে আরেক বন্ধুর বাস্তবে দেখা হয়নি বা হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। এসব ওয়েবসাইটে নিজেদের সম্পর্কে প্রদত্ত নানাবিধ তথ্য দেখে এরা একজন আরেকজনের সম্পর্কে ধারণা পায়। বাস্তবে একজন যদি উত্তরে থাকে তবে লেখে দক্ষিণ, সেটাও বোঝার বা যাচাইয়ের উপায় নেই। অনেক ক্ষেত্রে এমন ভার্চুয়াল বন্ধু একজন আরেকজনকে গুরুত্ব নিয়ে দেখেও না। কেবল সময় পার করার জন্য এমন বন্ধুত্বকে তারা বেছে নেয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব বাস্তব বন্ধুত্বেও রূপ নেয়। আর বাস্তব বন্ধু বলতে যা বোঝাতে চাচ্ছি তাহলো বাস্তব জীবনের বন্ধু, যার সঙ্গে চলার পথে দেখা হয়। এমন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয় শৈশবে, কৈশরে বা আরও পরে, কিন্তু তা অবশ্যই মুখোমুখি পরিচয়। একই এলাকার খেলার মাঠে কিংবা একসঙ্গে পড়ালেখা করার মধ্যদিয়ে কিংবা কোন বন্ধুর মাধ্যমে এমন পরিচয় হয়ে থাকে। যারা একে অপরকে খুব ভাল করেই চেনে। নিজেদের ভাললাগা মন্দলাগা বা চেহারার অভিব্যক্তি দেখেই বুঝতে পারে মানসিক অবস্থা। বন্ধুর বিপদে-আপদে এসব বন্ধুই সবার আগে ছুটে আসে। দেখা যায় এমন বাস্তব বন্ধু একজন আরেকজনের পরিবারের সদস্যদের কাছেও পরিচিত। পারিবারিক অনুষ্ঠানেও এরা যোগদান করতে অভ্যস্ত। আমরা সবাই কমবেশি সময় ইন্টারনেটে ব্যয় করি। ইন্টারনেট বলতে তো আজকাল আমরা সামাজিক যোগাযোগ এর ওয়েবসাইট (বিশেষ করে ফেসবুক) বুঝে থাকি। এ কথা বলার কারণ হচ্ছে, সাধারণ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিছু জানার উদ্দেশ্যে যে সময় ব্যয় করে তার চেয়ে বেশি সময় ফেসবুকেই দেয়। পেশা হয়ত ভিন্ন, শিক্ষার স্তরও আলাদা তারপরও এই আসক্তি যে কারও থাকতে পারে। এখন কথা হচ্ছে, আপনি যখন আড্ডা দিচ্ছেন তখন আপনার বাস্তব জীবনের বন্ধুরা আপনার সঙ্গেই বসা। দিনের চব্বিশটা ঘণ্টার মধ্যে আপনি আড্ডা দিতে এলেন হয়ত দুই-তিন কিংবা চার ঘণ্টার জন্য। ক্ষেত্রবিশেষে তা আরও কম কিংবা বেশিও হতে পারে। তো, আড্ডার সময়ে আপনি যদি আপনার স্মার্টফোনেই সময় দেন তাহলে আপনি বাস্তব জীবনের সুন্দর কিছু মুহূর্তের স্বাদ হারাবেন। যে নোটিফিকেশন কিংবা বার্তা পড়ার জন্য মরিয়া হয়ে যাচ্ছেন তা ফোনেই থেকে যাবে, হারিয়ে যাবে না। তা আপনি পরে বাসায় গিয়ে একা থাকাকালীন পড়তে পারবেন। কিন্তু আপনার সামনে যারা বসে আড্ডা দিচ্ছে, তারা সবসময় আপনার সামনে থাকবে না। তাই সময় থাকতে মাথা তুলে বাস্তব জগতকেই আগে দেখতে শিখুন। ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব গুরুত্বহীন এ কথা অবশ্যই বলছি না। তবে সময় ভাগ করতে শিখুন। সময় ভাগ করে নিতে পারলে ভার্চুয়াল আর বাস্তব জগতের বন্ধুত্ব- দুটোই সুন্দর থাকবে। ডিপ্রজন্ম ডেস্ক
×