ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারী

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৪ আগস্ট ২০১৮

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারী

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড হঠাৎ করে সংঘটিত কোন ঘটনা নয়। দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের ফল এই নৃশংসতম হত্যাকান্ড। এটি ভাবা ভুল হবে যে, গুটিকয় সামরিক অফিসারের ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। এই ভয়ঙ্কর ঘটনায় দেশী ষড়যন্ত্রীরা যেমন জড়িত ছিল, তেমনি সক্রিয় ছিল বিদেশী সুবিধাভোগীরা। আজ কালক্রমে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ছিল পাকিস্তান, আমেরিকা, চীন, সৌদি আরব এবং দেশীয় সুবিধাভোগী, পাকিস্তানপন্থী ও আওয়ামী লীগ বিরোধীদের সম্মিলিত একটি ষড়যন্ত্রের ফল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিশোধ গ্রহণ ও তাঁবেদারি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা; আমেরিকা, চীন ও সৌদি আরবের স্বার্থ ছিল বৈশ্বিক রাজনীতির অংশ; আর দেশীয় দালাল- মুশতাক গং, ফারুক-রশীদ-ডালিম গং, আওয়ামী লীগবিরোধী ও পাকিস্তানপন্থীদের স্বার্থ ছিল নিজেদের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করা। সেখানে জেনারেল জিয়ার ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত এবং ষড়যন্ত্রে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা লেখক সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বুধবার বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রচিত ‘বঙ্গভবনের শেষ দিনগুলি’ গ্রন্থ নিয়ে আয়োজিত আলোচনায় এ দাবি তোলা হয়। আমরা মনে করি এই দাবি অবশ্যই যুক্তিযুক্ত। বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করতে জাতীয় কমিশন গঠিত হলে বিলম্বে হলেও ইতিহাসের কলঙ্কমুক্তির শেষ ধাপটি সম্পন্নের সুযোগ মিলবে। ইতিহাসের সত্য উদঘাটনের ওপর জোর দিয়ে উল্লিখিত অনুষ্ঠানের বক্তারা যথার্থই বলেছেন, জিয়াউর রহমান ও তার কয়েক সহযোগী যেসব চক্রান্ত করেছেন বিচারপতি সায়েমের গ্রন্থে তার কিছু চিত্র মেলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে যারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করতে চেয়েছে, আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চেয়েছে, এর পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় দেশ-বিদেশের স্বাধীন গণমাধ্যমগুলো এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছিল। এটা বিশ্বের নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর অন্যতম। বিশ্বের বিরাট একটা অংশ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানের মদদ পাওয়া এবং তদানীন্তন খুনী সরকারের প্রেসনোট যারা ছেপেছে এ রকম কিছু গণমাধ্যম বিষয়টাকে অন্যভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখনকার মতো যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থাকত তাহলে এই কাজের দুঃসাহস তাদের হতো না। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে আনতে একটা সেল গঠন করা হয়েছিল বহু আগেই। কানাডায় বঙ্গবন্ধুর খুনীকে আশ্রয় দেয়া এবং বাংলাদেশের কাছে না ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি মানুষের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা আইএসের বিরোধিতা করে, জাতিসংঘে শান্তির কথা বলে অথচ তাদের দেশে একজন খুনীকে ঠাঁই দিয়ে রেখেছে। আমাদের দেশের আদালত যাকে অপরাধী খুনী চিহ্নিত করে রায় দিয়েছে তাকে তারা আশ্রয় দিল। তাদের আইনের শাসনের এমন নমুনা বিস্ময় জাগায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যারা ছিল তাদের মুখোশ উন্মোচন করার লক্ষ্যে জনতাগিদ থাকলেও এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বহু বাধার পর বিলম্বিত বিচারের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে হত্যাকারীদের আইনানুগ শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জাতির কলঙ্ক মোচনের বড় ধাপটি সম্পন্ন হয়েছে। এখন বাকি কাজটুকু সম্পন্ন হওয়া জরুরী।
×