ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ পাকিস্তানের দৃশ্যপট ॥ বিএনপির লাভ লোকসান

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩০ জুলাই ২০১৮

সিডনির মেলব্যাগ ॥ পাকিস্তানের দৃশ্যপট ॥ বিএনপির লাভ লোকসান

বিষয়টা ভাল করে ভাবা দরকার। তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে যে আমেজ উন্মাদনা বা উত্তেজনা সেটা জাতীয় রাজনীতিতে নেই। কেন নেই? এসব নির্বাচনে বাংলাদেশের দুই বড় দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপি মাঠে। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনকে ম্যাড়ম্যাড়ে করে তুলেছে বিএনপির বিরোধিতা। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে নৌকা জিতলে বলা হবে কারচুপি। আর বিএনপি জিতলেও কিন্তু কোন সাধুবাদ বা অভিনন্দন পাবার আশা করবেন না। বলা হবে, চেষ্টা করেছিল, জনগণ প্রতিহত করে দিয়েছে। ভাল কথা। এটাই তো আমরা চাই তাই না? অন্যায় হলে যেন জনগণ প্রতিরোধ করে। তাহলে আপনারা স্থানীয় নির্বাচনে তা যদি পেয়ে থাকেন জাতীয় নির্বাচনে কেন পাবেন না? জাতীয় নির্বাচনে মাঠে নেমে আসুন। দেখুন জনগণ কি করে? সে বিশ্বাস বা আস্থা হারিয়ে বিএনপি এখন আসলে দুর্বল একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে বলেই শিশুদের মতো খালি কান্নাকাটি আর অভিযোগে ব্যস্ত। বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে সুবিধাভোগী দল। তাদের এই সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দিনকাল পাল্টে যাওয়াতে যত দুঃখ। যে কথা লিখব বলে কলম ধরেছি, বিএনপি যখন ভারতের দিকে ঝুঁকছে বা আবার ভারতপ্রেমী হওয়ার পথ ধরছে তখন নাকি সংলাপের কথা উঠছে। এমন একটা অভিযোগ দেখলাম খবরে। যতদূর মনে পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বার বারই দরজা খোলা রাখার কথা বলে এসেছেন। আপনারাই বরং মুখের ওপর দুয়ারে তালা বন্ধ করে তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আপনাদের আপোসহীন নেত্রী কত ধানে কত চাল সে হিসাব না করেই ধানে ভোট চাইতেন। তাই ধানের তোয়াক্কা না করে ফোনালাপে যা তা বলে পরিবেশ বিষিয়ে তুলেছিলেন। আপনাদের সমস্যা হলো আপনারাও আওয়ামী লীগের নিম্ন শ্রেণীর নেতাদের মতো নিজেদের সমস্যা সম্ভাবনার কথা এড়িয়ে খালি আওয়ামী সমালোচনা আর নিন্দা নিয়ে থাকেন। অথচ দেশের মূল সমস্যা নিয়ে আপনাদের এজেন্ডা বা মতামত নেই। থাকলে যতগুলো ইস্যুতে সুশাসন হারছে বা হচ্ছে না সেগুলো নিয়ে কথা বলতেন। সেগুলো আপনাদের গায়ে না লাগার কারণ আপনাদের নেতাদেরও হয়ত ভাগ আছে এতে। কে না জানে বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ বলে এখানে সবাই সবার আত্মীয় বা পরিচিত। সে সুযোগের ব্যবহার করে কতজন আপদ বিপদ এড়িয়ে নেতা হয়ে থাকে বা থাকতে পারে সে কি আমাদের অজানা? বলছিলাম আপনাদের ভারত কানেকশন নিয়ে এখন কি ভাববেন? কারণ বিএনপির পরম মিত্র রাষ্ট্র পাকিস্তানে তো পালাবদল হয়ে গিয়েছে। আর সে পালাবদলে সামনে এসেছেন একদা ক্রিকেট তারকা ইমরান খান। খান সাহেব যে কি চিজ সে আমাদের চাইতে ভাল আর কে জানে? আমরা তখন যৌবনের শেষ দিকে। চট্টগ্রামে এসেছিল পাকিস্তান দল। আমাদের ভেতর রেখে যাওয়া তাদের রক্তবীজ আর দালালদের সংখ্যা কম নয়। সবাই জানেন মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে পাকি সেনা নায়কেরা নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আর যা হোক বা না হোক তারা আমাদের মা-বোনদের ধরে নিয়ে গিয়ে গর্ভবতী করবে। তাতে ঘরে ঘরে পাকি জারজের জন্ম নিশ্চিত করবে পাকিস্তান থাকবে কি থাকবে না। সে অপকৌশল কতটা ভয়ঙ্কর ছিল সে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তারের যে গবেষণা আছে তা পড়লেই ভাল বুঝতে পারবেন। রেখে যাওয়া আর নব্য দালালদের এক অংশ গিয়েছিল ইমরান খানদের বন্দনা জানাতে। তাদের ফুলের মালা দিতে। সে মালা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন ইমরান খান। নিয়াজীর ভাইপো পরাজয় ও আত্মসমর্পণের গ্লানি ভুলতে পারেননি বলেই বার বার বলেন, আমরা যেন ভারতকে বাদ দিয়ে আবার তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করি। তা হলেই নাকি বুঝিয়ে দেবে কার কত শক্তি। এই শক্তি বা অপশক্তি নিয়ে ইমরানের মতো মানুষের আসলে কোন ধারণা নেই। থাকলে হিটলার মুসোলনি এমনকি স্টালিনের ইতিহাস পড়ে জানত আস্ফালন ইতিহাস কখনও বরদাশত করে না। ইমরান খান সে সময় আমাদের জাতীয় পতাকাকে অপমান করেছিলেন। মানুষ তা নিতে পারেননি। চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের সেই মেঘলা বিকেলটি আমার স্মৃতিপটে এখন জাগরূক। বিকেল গড়াতে না গড়াতে জাতীয় পতাকা হাতে আমাদের এক বন্ধু সারা স্টেডিয়াম ঘুরতে শুরু করলে যে পরিবেশ তৈরি হয় তাতেই বিপদ নেমে আসে। পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের অশ্লীল দেহ ভঙ্গি আর তাদের অপমানকর মন্তব্যে তেতে ওঠা আমাদের সাহসী মানুষেরা সেদিন বেধড়ক মার লাগাতেও দ্বিধা করেনি। সে অপমানও ভোলেননি খান সাহেব। তাই সুযোগ পেলেই আমাদের ক্রিকেট নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। এমনকি সেমিফাইনাল বা ফাইনালে গেলে খেলার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা দেখান। আর এই মানুষের দল ও নেতাকে সমর্থন করে বিএনপির এক বিরাট অংশ। কারণ, ইমরানের কার্যক্রম আওয়ামী লীগ বা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী। এখন আমাদের প্রশ্ন, আপনারা কি করবেন? ভারতকে গলানো না ইমরানের প্রতি বিশ্বাস রেখে গদি লাভের চেষ্টা? পাকিস্তান স্টাইলে নির্বাচন বিএনপির অন্তর্গত কামনা থাকলেও এখন আর মুখ ফুটে বলতে পারে না। কারণ, পাকিস্তানে ইমরান খান সেনাবাহিনীর ক্রীড়নক। তার জঙ্গী কানেকশন নিয়েও কথা আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আগের মতো বিএনপির দিকে ঝুঁকে নেই। তাদের হাতে অনেক কাজ। তারা বিদেশে শান্তি বাহিনীতে নিজেদের ভূমিকা রাখছে। দেশের উন্নয়নেও আছে বলিষ্ঠ ভূমিকা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের আস্তার মানুষ। কারণ তিনি কাজ বোঝেন। কাজ করেন। আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে তাঁর ভূমিকা বা নেতৃত্ব বিশ্ব প্রশংসিত। সেখানে শুধু ষড়যন্ত্র দিয়ে তাঁকে দমানো যাবে না। সে কারণে বিএনপি তেমন ভাবে এগুতে পারছে না। বিএনপির রাজনীতির এটাই সমস্যা। আমাদের আজগুবি সমাজে তারা কথিত গণতন্ত্রের দল হলেও তাদের ভরসার জায়গা বন্দুকের নল বা গ্রেনেড। সে দল পাকিস্তানের বর্তমান দৃশ্যপটে কি ভূমিকা নেবে বলা মুশকিল। বাংলাদেশের এখন যে পরিবেশ তার গায়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির যে হাওয়া তাতে পাকিস্তান নিয়ে চিন্তার সময় আমাদের নেই। আমাদের ভারত নিয়ে ভাবনাও যৌক্তিকতার দাবি রাখে। নিন্দুকরা যতই বলুক না কেন মূলত শেখ হাসিনাই ভারতের কাছ থেকে অনেক কিছু আদায় করে নিয়েছেন এবং নিতে পারবেন। ভারতও জানে বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল-প্রগতিশীল সরকার না থাকলে তাকে আবারও পাকিস্তানের মোকাবেলায় শক্তি অপচয় করতে হবে। তাই বিএনপির উচিত সরকারের কথা মেনে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া। ইমরান খান বা আর কেউ এসে জেলের ফটক খুলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবে না। সে কাজটা যারা আন্দোলন করে জনগণের কাছে নিতে ভয় পায় বা জানে যে কাজ হবে না তারা কোন দেশে লবিং করল আর কার সঙ্গে দাসখত দিল তাতে দেশ-জনগণের কিছু যায় আসে না। আমরা বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু কন্যা, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতাই আমাদের কবজ। সে সব শক্তিই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। আগামীতেও বাঁচাবে।
×