ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৫ জুলাই ২০১৮

তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য

ঢাকা সেনানিবাসের সেনা সদরে রবিবার এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে যে বক্তব্য প্রদান করেন তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এতে তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সুসংহতকরণে সেনাবাহিনীর সহায়ক ভূমিকার বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরেন। এছাড়াও সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের অবস্থানের উত্তরণ ঘটানোর প্রয়োজন ও গুরুত্বের বিষয়টিও সামনে তুলে আনেন। তিনি বলেছেন, ‘সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী এরূপ যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে। একটি দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত এবং সুসংহত করতে একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’ গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। গণতন্ত্র বহাল থাকলে উন্নয়ন হয় দেশের, পক্ষান্তরে গণতন্ত্রবিরোধীরা ব্যাহত করে উন্নয়ন। গণতন্ত্রবিরোধীরা হতে পারে সামরিক স্বৈরশাসক, কিংবা ছদ্মবেশী গণতন্ত্রী। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচকদের উদ্দেশ করে একবার বলেছিলেন, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে। এ বক্তব্যে কোন যুক্তিশীল মানুষ দ্বিমত করবেন না। গণতন্ত্রের সুরক্ষা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল সরকারেরও ধারাবাহিকতা বাঞ্ছনীয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরাপর দেশের তুলনায় আরও উন্নত, বহুমুখী ও ব্যতিক্রম হবে এটাই কাক্সিক্ষত। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধকালে প্রতিষ্ঠিত সেনাবাহিনীর কাছে দেশ ও জাতির প্রত্যাশা থাকে বিরাট। আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালে সেনাবাহিনীর অকুতোভয় অবদানের কথা জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। বীরশ্রেষ্ঠগণ যেভাবে আত্মোৎসর্গ করেছেন, মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার জন্য তা চিরকাল বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে খচিত থাকবে। চরম পরিতাপের বিষয়, এই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হয়েছে। সামান্য ক’জন বিপথগামী সৈনিকের চরম হঠকারিতার বিশাল মূল্য দিতে হয়েছে জাতিকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতি হারিয়েছে চিরতরে। যদিও মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবের চেতনা অপরাজেয়, চির অম্লান। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মানোন্নয়নে বেশকিছু গঠনমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। আমাদের দুর্ভাগ্য সেসব বাস্তবায়নের সুযোগ তিনি পাননি। তবে এর বহু বছর পর তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আবারও উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ও বিদেশে নানা কল্যাণমুখী তথা জনমুখী দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবহিনী ফিরে পায় তার হৃত গৌরব। সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হতে পারে প্রকৃত বাতিঘর। সর্বক্ষেত্রে ঐক্যের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং সংবিধানের চার মূল স্তম্ভের আলোকে জাতীয় সংহতি দৃঢ়করণই যাবতীয় সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সদ্য স্বাধীন দেশটির নাম দেয়া হয়েছিল ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ অর্থাৎ বাংলাদেশের জনগণের নিজেদের শাসন করার অধিকারসহ একটি সার্বভৌম ভূমি, যেখানে বাঙালীরা নিজেদের বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা নিয়ে সব ধরনের বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার পরিপন্থী কর্মকা- থেকে মুক্ত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে একজন রাষ্ট্রনেতার পরিকল্পনার দৃঢ়তা, নিজের প্রতি আস্থা এবং সামগ্রিক বিচারে দেশবাসীর জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বিষয়ে তাঁর মনোভাবের পরিচয় মেলে। আত্মবিশ্বাসী, সেনাবান্ধব এবং দিকনির্দেশনামূলক স্পষ্ট বক্তব্যের জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
×