ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মৌলভীবাজারের চার রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৮ জুলাই ২০১৮

মৌলভীবাজারের চার রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের রাজনগর থানার মোঃ আকমল আলী তালুকদারসহ চার রাজাকারকে মুত্যুদণ্ড প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। এটি ট্রাইব্যুনালের ৩৩ তম রায়। চার আসামির বিরুদ্ধে দুই ধরনের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে। গণহত্যার প্রথম অভিযোগে চার জনের প্রত্যেককে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। হত্যা ও অপরাধ সংঘটনের দ্বিতীয় অভিযোগে তাদের আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে আকমল আলী তালুকদার কারাগারে রয়েছেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক। বাকি তিন আসামি আব্দুর নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া (৬২), আনিছ মিয়া (৭৬) ও আব্দুল মোছাব্বির পলাতক রয়েছেন। মঙ্গলবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিনসদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সমস্ত অপরাধের শীর্ষ অপরাধ হলো গণহত্যা। আর রাজনগরে গণহত্যাসহ যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা কেবল একটি জায়গায় কয়েকজন মানুষকে হত্যা করা নয়, পুরো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যারা এ অপরাধ করেছে তারা মানবতার শত্রু। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর হায়দার আলী, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন ও প্রসিকিউটর শেখ মুশফেক কবীর। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। পলাতকদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন আবুল হোসেন। ১৬০ পৃষ্ঠা রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করেন বিচারপতি মোঃ আবু আহমেদ জমাদার। দ্বিতীয় অংশ পাঠ করেন বিচারপতি আমির হোসেন এবং রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৩৩ তম রায়। অন্যদিকে আরেকটি মামলা সিএভি রয়েছে। ৩০ মে একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পটুয়াখালীর রাজাকার ইসহাক সিকদারসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছে ট্রাইব্যুনাল। অর্থাৎ যে কোন দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। ইসহাক সিকদার ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আব্দুল গণি হাওলাদার, আব্দুল আওয়াল ওরফে মৌলবী আওয়াল, আব্দুস সাত্তার প্যাদা ও সুলাইমান মৃধা। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে আরও ৩৩টি মামলায় ১৩৯ রাজাকার বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে। ৩৩ মামলায় মোট ৭৩ আসামিকে দ- প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে ৪৭ জনকে, আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে ২৪ জনকে। আর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান , একজনকে ৯০ বছরের দ- একজনকে ২০ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে ৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। একজনকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে আপীল বিভাগে আপীলে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে ২২টি মামলা। রায়ের পর এ মামলার প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মামলার চার আসামির বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। মঙ্গলবার তার রায় হয়েছে। প্রথম অভিযোগটি ছিল গণহত্যার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মৌলভীবাজারে রাজনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫৯ জনকে বেঁধে পিটিয়ে, গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ওই গ্রামে যতগুলো বাড়িঘর ছিল তার সবগুলোই জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং ওই গ্রামের যে কজন মহিলা ছিল সবাইকে ধর্ষণ করেছিল। এই ঘটনায় প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তাতে ঘটনাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকেই মৃত্যুদ- দিয়েছে।
×