ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিল্প শ্রমিকদের মজুরি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৫ জুলাই ২০১৮

শিল্প শ্রমিকদের মজুরি

শ্রমজীবী মানুষের দু’বেলা দু’মুঠো যোগাড় করা সহজসাধ্য নয়। কঠোর পরিশ্রমের পরও মেলে না যথাযথ পারিশ্রমিক। অর্ধবেলা অনাহারে কাটে কারও কারও। আয়ের চেয়ে ব্যয়ভার বেশি হলে দুঃসহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ‘পরিশ্রমে ধন আনে’ প্রবাদ তাদের জীবনে যেন প্রযোজ্য নয়। উৎপাদনশীলতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত শ্রমিকরা। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে মালিকরা মুনাফা লাভ করে। তুলনায় শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প শ্রমিক আর বেসরকারী খাতের শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বা বেতন ভাতা এক নয়। অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্য রয়ে যায়। বিদ্যমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের হারের উর্ধগতির সঙ্গে বেতন ভাতার সামঞ্জস্য না থাকলে শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনেক মালিক কার্যকর পদক্ষেপ নিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা নয়। বর্তমান শ্রমিকবান্ধব সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে। মন্ত্রিসভা এই প্রস্তাব অনুমোদনও করেছে। সর্বনিম্ন আট হাজার ৩০০ এবং সর্বোচ্চ ১১ হাজার ২০০ টাকা করায় প্রস্তাবটি শ্রমিকদের জীবনধারায় পরিবর্তন আনার পথ সুগম করবে। মূল বেতন ২০১৫ সালের ১ জুলাই এবং ভাতা ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন ২০১৫-এর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি স্কেল ও ভাতা অনুমোদন এবং ‘পণ্য উৎপাদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্রমিক (চাকরির শর্তাবলী) আইন, ২০১৮-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সময়ে সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত শ্রমিকদের বেতন কাঠামো তৈরির জন্য মজুরি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের স্কেল নির্ধারণ করা হয়। এবারও তাই করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মজুরি বোর্ডে বিজিএমইএ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি সমন্বয়ে পুনর্গঠন করা হয়। তারা এই প্রস্তাব পেশ করেছে। ছয় মাসের মধ্যে এই কমিটি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন কাঠামো যাচাই-বাছাই করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো অনুমোদন করেছে। সরকারী কর্মচারীদের ২০১৫ সালের বেতন ও ভাতা স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৫ সালের মজুরি স্কেল প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি এবং বার্ষিক পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে এতে। ২০১০ সালে এক নম্বর স্কেলে চার হাজার ১৫০ টাকা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে আট হাজার ৩শ’ টাকা; দুই নম্বর স্কেলে চার হাজার ২শ’ টাকা থেকে দ্বিগুণ করে আট হাজার ৪শ’ টাকা, তিন নম্বর স্কেলে চার হাজার ২৭৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে আট হাজার ৭শ’ টাকা এবং পাঁচ নম্বর স্কেলে চার হাজার টাকা। এর আগে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর। তিন হাজার টাকা মূল বেতন ধরে পাঁচ হাজার তিনশ’ টাকা ন্যূনতম মঞ্জুরি ঠিক করা হয়েছিল তখন। নতুন কাঠামোয় ওই বেতন তারা পাচ্ছেন ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে। গত কয়েক বছরের মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবি করা হচ্ছিল। শ্রমিক সংগঠনগুলো তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১৬ হাজার টাকা দাবি করে। এটা স্বল্প ব্যয়ে নতুন মজুরি বোর্ড ঘোষণার মধ্য দিয়ে আগামী দিনের সমস্যার সমাধান হবে। শ্রমিকরা ভাল থাকলে উৎপাদন বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে মুনাফা বাড়বে। বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো শ্রমিক সহায়ক হয়ে উঠুক- এই কামনা।
×