ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অপু চৌধুরী

চট্টগ্রামে মহাজলাবদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৩১ মে ২০১৮

চট্টগ্রামে মহাজলাবদ্ধতা

বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা আর তা নিঃসরণে কোন কর্তা ব্যক্তির বা ভবিষ্যৎ প্রতিনিধিত্বকারী কোন জনপ্রতিনিধির মুখ নিঃসৃত কোন প্রতিজ্ঞা আজ বড়ই বেমানান। বহুকাল ধরে জনপ্রতিনিধিগণ বিশেষ করে ভোট আসার আগে গলা ফাটিয়ে এমন ধরনের ইস্যু পুঁজি করে ভোট আয়ত্বে আনার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন সময়ে সফলও হয়েছেন। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। জলাবদ্ধতা কমেনা বরং বাড়ে। এ জলাবদ্ধতার জন্য বিশেষ কোন ব্যক্তিকে বা জনপ্রতিনিধিকে একক ভাবে দায়ী করলে হবে না। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও ঢাকার মত ঘনবসতি পূর্ণ এলাকাগুলোর জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী সামগ্রিক নেতিবাচক মানসিকতা। কেউ কাজ করলে কেউ বাধা দেবে কেউ নির্জীবের মতো থাকবে, আর কেউ কেউ ত্রিপক্ষীয় খেলা উপভোগ করবে। আর সুযোগ বুঝে নিজের স্বার্থটা হাসিল করে নেবে। এমনটি হলে জলাবদ্ধতাই শুধু নয় কোন সমস্যার কখনও স্থায়ী সমাধান হবে না। আমি চট্টগ্রামের কথাই বলবো, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সুখ্যাত কর্ণফুলি নদী ও তার শাখা-প্রশাখা ছোট ছোট নদী-খালগুলো চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিঃসরণের একটি ভালো মাধ্যম ছিল, যা আমরা জন্ম থেকেই দেখে আসছি। তা সময়ের পরিক্রমায় সংকুচিত হয়ে আসছে। আর তা হচ্ছে এ সমাজেরই কিছু মানুষের কালো থাবায় শুধু নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই ঘেঁষে নতুন ব্রীজ পর্যন্ত যে মেরিন ড্রাইভ রাস্তা তৈরি হয়েছে তা পুরোপুরি কর্ণফুলি নদীর অংশ। নদী সংস্কার না করে নদী-বুকে রাস্তা নির্মাণ যাতায়াতের সুব্যবস্থা হলেও লাভ-ক্ষতির পাল্লা কোনদিকে ভারী তা ভেবে দেখা খুবই জরুরী ছিল। তাছাড়া রাস্তা আরো উত্তর পাশে করা যেত এতে করে নদীও ঠিক থাকত রাস্তাও তৈরি হত। বর্তমানে সে রাস্তার কোল ঘেঁষে নদীগর্ভে জেগে উঠেছে আবার বিশাল নতুন চর, সে চরে গড়ে উঠেছে প্রচুর ভাসমান মানুষের বাস। এতে করে শাখা নদীগুলো কিংবা খালগুলোর মুখ সংকুচিত হয়ে গেছে খুব বেশি। আর এত্তসব যা কিছু হচ্ছে তা সবই প্রশাসন সহ জনপ্রতিনিধিগণের চোখের সামনেই।অন্যদিকে কর্ণফুলি নদী প্রশস্ততা হারিয়েছে এক চতুর্থাংশ। আমার মনে হয় জলাবদ্ধতা নিঃসরণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট যেসব সরকারি-বেসরকারী এবং সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসবের মধ্যও একরকম সমন্বয়হীনতা কাজ করে চলছে। যেমন সিটি কর্পোরেশন, সি.ডি.এ, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং জেলাপ্রশাসন। তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় জলাবদ্ধতা সহ বহু অনিয়মতান্ত্রিকতা মুহুর্তেই নির্মূল করা সম্ভব। সারা বছরই দেখা যায় কোন না কোন প্রতিষ্ঠান রাস্তা খনন করে চলে যা দ্রুতগতিতে পুনঃনির্মাণ কওে না। যার ফলে মাটিগুলো গিয়ে পাশের নালা নর্দমাতে পড়ে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে বড় বড় নালা-খালগুলোর অংশ বিশেষ দখল করে স্থায়ী ভাবে দালান নির্মাণ করেছে অনেক স্বার্থন্বেষী মহল। এসবের বিরুদ্ধে তেমন কোন জোরালো স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। সুতরাং সামগ্রিক চিন্তা চেতনা থেকে বলা যায়, জলাবদ্ধতা নিঃসরণের বিষয়ে একক ভাবে কারো প্রতিশ্রুতি কখন সফলতা আনতে পারবেনা।জনসাধারণকে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি ভাবে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি এবং শায়ত্ত্বশাসিত সকল প্রতিষ্ঠানকেও দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত হতে হবে। কোতোয়ালি, চট্টগ্রাম থেকে
×