ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাধ্যতামূলক বিনামূল্যের বিদ্যুত সংযোগ

যশোরে আলো জ্বালাতে পারেনি ১৫০ স্কুল

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৩ মে ২০১৮

যশোরে আলো জ্বালাতে  পারেনি ১৫০ স্কুল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে আলো জ্বালাতে পারেনি ১শ’৫০ প্রাইমারী স্কুল। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। তদারকি করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে, স্কুল কর্তৃপক্ষ এক প্রকার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। আর এ কারণে সরকারের বাধ্যতামূলক বিনামূল্যে বিদ্যুত সংযোগ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর। বর্তমান সরকার সারাদেশে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলো জ্বালানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে বিদ্যুত সুবিধাবঞ্চিত না হয় সেই লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বিদ্যুতবিহীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণকে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে। প্রত্যেকটি স্কুলের বিদ্যুত বিল পরিশোধ করে থাকে সরকার। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি সকল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সিদ্ধান্তটি জানানোর যে পত্র দেয়া হয়। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ বিষয়টি পল্লী বিদ্যুত ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণকে নিয়মিত অবহিত করবেন। একই সঙ্গে উপজেলা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা বিদ্যুত সংযোগ প্রদানের বিষয়টি নিয়মিতভাবে ফলোআপসহ প্রধান শিক্ষকগণকে সহযোগিতা প্রদান করবেন।’ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তটি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়নি যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। সেই সময়ের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার বনিক গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্তটি ‘গুরুত্বহীন’ বিবেচনা করায় যশোর জেলায় ১শ’৮৭ টি স্কুলে বিদ্যুত সংযোগ স্থাপিত হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে গত ৩ মে পাওয়া তথ্যানুযায়ী সদর উপজেলায় ৪৫ টি, বাঘারপাড়ায় ১২ টি, অভয়নগরে ২৭ টি, মনিরামপুরে ৩৯ টি, কেশবপুরে ২৫ টি, ঝিকরগাছায় ১০ টি, চৌগাছায় চারটি ও শার্শায় ২৫ টি স্কুলে বিদ্যুত সংযোগ নেই। যদিও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এ তথ্যটি সঠিক না। তথ্যটি দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ করা হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ১শ’ ৮৭ টি স্কুলের পরিসংখ্যান নিয়ে ৩ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে এটি পরিষ্কার হয়। ৩ মে থেকে তথ্যটি যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। প্রথমে কথা হয় বিভিন্ন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হন। সেখান থেকে ফিরে আবারও যোগাযোগ করা হয় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কিন্তু তাতে সর্বশেষ অবস্থা জানা সম্ভব হয়নি। ফের যোগাযোগ করা হয় উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাদের কাছ থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তালিকায় থাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সর্বশেষ, ১০ মে জেলার আটটি উপজেলার ১৬ জন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন বাধ্যতামূলক প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। কথা বলার পর স্পষ্ট হয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে থাকা পরিসংখ্যানটি সঠিক নয়। বিদ্যুত সংযোগ নেই বলে তালিকায় থাকা সদর উপজেলার দেয়াড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বলেন, তার স্কুলে বিদ্যুত সংযোগ রয়েছে। একই উপজেলার শরশুনাদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যুত সংযোগ নিয়ে ঠিকাদার টালবাহানা করছেন। যে কারণে এখন পর্যন্ত সংযোগ স্থাপিত হয়নি। তালিকায় থাকা অভয়নগর উপজেলার গোপিনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বললে তিনি কোন জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেন। কথা হয় তালিকায় থাকা চৌগাছা উপজেলার রায়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার বিদ্যালয়ে বিদ্যুত সংযোগ থাকার পরও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের না থাকার তালিকায় নাম রয়েছে। একই উপজেলার বাঘারদাঁড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সরকারের বাধ্যতামূলক প্রকল্পের কাজটি আজও হয়নি কেন? তার জবাবে তিনি বলেন, ‘একটু গাফিলতি হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি করে নেব।’ অবাক করা বিষয় হচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এনামুল কাদের খান ৩০ এপ্রিল বিদ্যুত সংযোগের হালনাগাদ তালিকা ১০ মের মধ্যে প্রেরণের জন্যে সকল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে পত্র দেন। অথচ ১০ মে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সরেজমিনে গিয়ে এ ধরনের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। বরং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উল্টো এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান এ তালিকা নিয়ে কী হবে! ১০ মে যে শিক্ষা অধিদফতরে তালিকা পাঠাতে হবে সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। টানা এক সপ্তাহের অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর জেলায় এখনও পর্যন্ত ১শ’ ৫০টির মতো প্রাইমারী স্কুলে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়নি। এসব বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ত্রিপক্ষীয় কাজ। এ কারণে একটু সময় লাগছে। তবে, যতদ্রুত সম্ভব সমাধান হয়ে যাবে। তথ্য এলোমেলো সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি। হালনাগাদ আগেই হওয়ার কথা। যেটি হয়নি।
×