ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালী চরিত্র

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৯ এপ্রিল ২০১৮

বাঙালী চরিত্র

শনিবার জনকণ্ঠে ‘রাজধানীর ১১ হাজার মিনি ডাস্টবিন উধাও’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যা পড়ে প্রথমে পাঠক বুঝে উঠতে পারবেন না যে, হাসবেন না কাঁদবেন। বাঙালীর পক্ষেই বোধ হয় সম্ভব হাজারে হাজার ডাস্টবিন ‘গিলে ফেলা’। বলা দরকার, পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে রাজধানীর সড়কগুলোতে প্রায় ১১ হাজার মিনি ডাস্টবিন বসিয়েছিল সিটি কর্পোরেশন। তবে এসব ডাস্টবিনের প্রায় সবই উধাও। এর মধ্যে বেশির ভাগ ডাস্টবিন চুরি হয়ে গেছে, আর কিছু ডাস্টবিন ব্যবস্থাপনার অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। টিকে থাকা ডাস্টবিনগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। মেরামত বা পুনঃস্থাপন করলে কয়েকদিন পরই আবার ভেঙ্গে যায় বা চুরি হয়ে যায় এসব মিনি ডাস্টবিন। এগুলোতে ফেলা ময়লা পরিষ্কারও করা হয় না। ফলে ডাস্টবিনগুলো কোন কাজেই আসছে না। বরং মেরামত আর পুনঃস্থাপনে খরচ বেড়েই চলেছে এসব ডাস্টবিনের পেছনে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, মেরামত করে ডাস্টবিনগুলো ব্যবহারের উপযোগী করা হবে। দেখা যাচ্ছে বাঙালী তার অর্জন বা প্রাপ্যকে ধরে রাখতে ব্যর্থ, কিংবা নিজেই তা বিনষ্ট করে ফেলে। সুরক্ষা, মেরামত, যথোপযুক্ত ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভবত বাঙালী চরিত্রে নেই। বাংলার ইতিহাস বেশ পুরনো। বাংলা শাসন করেছে মগ, ফিরিঙ্গি, সেন, মুঘল, ইংরেজ, পাকিস্তান ও বাঙালী নিজে। বাঙালীর সমালোচনার শেষ নেই। একদিকে বাঙালীর সমালোচনা করেছেন বিদেশী শাসক, গবেষক, সাহিত্যিক ও পর্যবেক্ষক, অন্যদিকে অনেক বাঙালীও বাঙালী আর বাংলাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্ব করেছে দুই শ’ বছর। ব্রিটিশরা বাঙালীকে মোটেও পাত্তা দেয়নি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এত বড় ছিল যে, তাদের উপনিবেশের মধ্যেই সূর্য উদিত হতো, অস্ত যেত। তবু স্ববিরোধিতা ও সভ্যতার নির্মম পরিহাস হলো ইংরেজরা সভ্য জাতি হিসেবে দাবি করে। কিন্তু বিশ্ব-ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সাম্রাজ্য বিস্তার করে লুণ্ঠন করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। বাঙালী সম্পর্কে ব্রিটিশ শাসকদের এমনও মন্তব্য শোনা যায়, ‘বাঙালী চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মিথ্যা বলা।’ বাঙালী সম্পর্কে এমনও মন্তব্য প্রচলিত আছে, বাঙালী ভীরু, মামলাবাজ, প্রবঞ্চক। এ ছাড়াও বাঙালীর চরিত্রে আরও অনেক বাজে বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়। অন্যদিকে বাঙালী চরিত্রে সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাস-ঐতিহ্যও কম নয়। সুতরাং এমন সরলীকরণ করে বাঙালীকে বিশ্লেষণ করা যুক্তিযুক্ত নয়। প্রয়োজনে বাঙালী জ্বলে উঠতে পারে। বিচার-বিশ্লেষণ করলে বাঙালীর চারিত্রিক দুর্বলতা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি বাঙালীর আন্দোলন-সংগ্রাম ইতিহাসও কম নয়। বিশ্বে বাঙালীই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে জেল খেটেছেন ও রক্ত দিয়েছেন। তবু বাঙালীর সমালোচনাই বেশি প্রাপ্য বলে মনে হয়। বিশেষ করে নাগরিক শিক্ষিত বাঙালীর। ডাস্টবিনের গুরুত্ব বুঝেও তা যথোপযুক্ত ব্যবহার না করা এবং এর বেশির ভাগ ‘লোপাট’ করে দেয়া কোন কাজের কথা নয়। অপচয় ও অপরাপর চারিত্রিক দুর্বলতা থেকে বাঙালী বের হয়ে আসুক। রবীন্দ্রনাথের বাণী- ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী/রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করোনি’Ñ মিথ্যে প্রমাণ করে বাঙালী সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠুকÑ এটাই কামনা।
×