ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনোদনের নবরূপ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৯ মার্চ ২০১৮

বিনোদনের নবরূপ

বিনোদন মানুষের হৃদয়ে মনকে চাঙ্গা করে। বিনোদন অনেক সময় অসুস্থ মানসিক রোগীকে সুস্থ করে তোলে। চিকিৎসা শাস্ত্রের যখন তেমন উন্নতি হয়নি তখন সমুদ্র ভ্রমণ বিনোদন অসুস্থ যক্ষ্মা রোগীকেও সুস্থ করে তুলছে। এখন অবশ্যই উন্নত চিকিৎসার উপায় বের হয়েছে- আবিষ্কার হয়েছে নতুন নতুন দূরারোগ্য ব্যাধির ওষুধের। তারপরেও বিনোদন অনেক অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করে তুলছে। সময়ের বিবর্তনে এক সময় টেলিভিশন রেডিও এর পরিবর্তে চিত্র বিনোদনের উপায় হয়ে দাঁড়ায়। এখন আবার টেলিভিশন থেকে ইউটিউব আর ফেসবুকে চিত্র বিনোদনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক চিত্র বিনোদনের সুফল ও কুফল দুটিই রয়েছে। যখন ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে বিনোদন শুরু হয়েছে তখন এর ভাল আর মন্দ এই দুটি দিকই কিন্তু রয়েছে। ‘ব্লু হোয়েল’ এর মতো মারাত্মক খেলা এসব জায়গায় এসে বাসা বেঁধেছে। ফলে বিনোদন এখন অপবিনোদনে বা বিকৃত আনন্দে পরিণত হয়েছে। সংস্কৃতি, সভ্যতা, ঐতিহ্যের অংশ বিশেষ। এই সভ্যতাকে ধরে রাখতে হলে দেখতে হবে অপসংস্কৃতি যেন এর মাঝে ঢুকে না পড়ে। একবার অপবিনোদন কিংবা বিকৃত আনন্দ বিনোদনের মধ্যে ঢুকে পড়লে বিনোদনের মূল উদ্দেশ্য বন্ধ হবে, এতে কোনই ভুল নেই। কোমলমতি শিশু কিশোররা যদি ইউটিউব আর ফেসবুকে অপবিনোদন কিংবা বিক্রিত আনন্দ নিয়ে সারাক্ষণ মেতে থাকে তাহলে তাদের ভবিষ্যত একে বারেই বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। ইদানীং লক্ষ করা গেছে কিছুসংখ্যক শিশু-কিশোর সারাক্ষণ মোবাইল ফোন নিয়ে এই অপসংস্কৃতির চর্চা করছে- এটা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক। আর এটা শিশু কিশোরদের মানসিক অবস্থাকে একেবারেই বিকল করে দিচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য তাদের অভিভাবকদের প্রায় সকলই এ বিষয়ে একেবারেই উদাসীন। এই উদাসীনতার হাত থেকে সমগ্র জাতিকে বাঁচাতে হবে- কারণ শিশু-কিশোররাই জাতির ভবিষ্যত। ওরা ভালভাবে বেড়ে না উঠলে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার। চিত্র বিনোদনের জন্য যেসব পথ খোলা আছে এ কাজের জন্য সেই ভাল পথগুলো বেছে নিতে হবে। বই পড়ে, সিনেমা দেখে, খেলাধুলা করে মানুষ চিত্র বিনোদন করে থাকে। শিশু কিশোররাও বই পড়ে, ছবি এঁকে, গান গেয়ে নৃত্য চর্চা করে চিত্র বিনোদন করতে পারে। চিত্ত বিনোদন করতে গিয়ে জীবন নষ্ট হোক এটা আমরা কেউ চাই না। চিত্র বিনোদনের নামে অপকর্ম সংগঠিত হোক এটাও আমরা চাই না। ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে আর ওই একই ফুল থেকে মাকড়শা বিশ সংগ্রহ করে। এ কথাটা শিশু কিশোরদের, অভিভাবকদের মাথায় রেখে তাদের চিত্ত বিনোদনের পথ বাতলিয়ে দিতে হবে। অর্কেস্ট্রা, গিটার, বেহালা অনেক সময় বিনোদনের উপকরণ হতে পারে। আবার নৌ ভ্রমণ, প্রমোদ তৈরি ভ্রমণ, বিলাস বহুল জাহাজে করে সমুদ্র ভ্রমণ চিত্র বিনোদনের উপায় হতে পারে। মানুষের চিত্ত আকর্ষণ করে এমন নতুন নতুন সমুদ্র তীরবর্তী স্থান, বন কিংবা পাবত্য ভূমি, পাহাড় ও চিত্ত বিনোদনের কারণ হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিক দৃশ্য ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ মানুষকে আকর্ষণ করছে। চিত্ত বিনোদনের জন্য করেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্ত বিনোদনের জন্য বোট নিয়ে গঙ্গাসহ এতদ অঞ্চালের অনেক নদীতে নৌবিহার করেছেন- সাহিত্য ও কাব্য চর্চা করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিকগণ চিত্ত বিনোদনের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যম-িত দেশ ও স্থানসমূহ পরিভ্রমণ করেছেন। কাশ্মীর, দার্জেলিং, সুইজারল্যান্ডের মতো যেসব স্থানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ চিত্ত বিনোদনের জন্য ওইসব স্থান অতি খাটি। যদিও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে আজকের বিনোদন তথাপি এর খারাপ দিক মাথায় রেখে নির্মল নির্দোষ বিনোদন প্রক্রিয়া চালু না করলে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় অবশ্যই হবে- তাই অপসংস্কৃতি রোধকল্পে প্রকৃত বিনোদনমূলক ব্যবস্থা অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। লেকসার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা থেকে
×