ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দোতলা কৃষিতে সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৪ মার্চ ২০১৮

দোতলা কৃষিতে সম্ভাবনা

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সূর্যালোকের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ভিত্তিতে পরিচালিত গবেষণালব্ধ ফলাফলে একই জমিতে একই সময়ে ভিন্ন উচ্চতায় দুই ভিন্ন ধরনের ফসল ফলানোর প্রক্রিয়াই ‘দোতলা কৃষি’। এ ক্ষেত্রে, উদ্ভিদের ২৪ ঘণ্টার খাদ্য উৎপাদনের জন্য ন্যূনতম ৮ ঘণ্টাব্যাপী সূর্যালোকের প্রয়োজনীয়তার কৃষি-তাত্ত্বিক সূত্রকেই মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৩ লাখ জনসংখ্যার একটি করে জেলা যোগ হয়। ২০১৭ সালে যোগ হয়েছে পাবনা জেলা। প্রতি বছরে ৭৫৮ বর্গকিলোমিটারের একটি জেলা বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়। এই লক্ষ্যে ২০০৮ সালের মে মাস থেকে ২০০৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১৪ মাসব্যাপী প্রাথমিক গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণার ফলাফলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বাংলাদেশের যে কোন স্থানে যে কোন আকারের জমিতে ঠিক উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ভূমি থেকে ৫ ফুট উঁচুতে, ৪ ফুট চওড়া এবং ১৩ ফুট পর পর মাচা নির্মাণ করলে ভূমিতে অনাধিক আড়াই ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ফসলের গাছ এবং মাচায় লতা জাতীয় গাছ আবাদ করা সম্ভব। এতে করে একই জমি হতে একই সঙ্গে দুটো ফসল পাওয়া সম্ভব; একটি ফসল মাটিতে যেমন : ধান, গম, যব, তিল, সরিষা, ডাল, ছোলা, মটর, আলু, বেগুন, টমেটো, ধনে, ডাঁটা, পালং, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, বীট, বিভিন্ন প্রকার শাক, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, কচুমুখী, মিষ্টি আলু ইত্যাদি প্রধান ফসল হিসেবে যাকে আমরা বেসক্রপ বলতে পারি এবং লতা জাতীয় ফসল মাচায় যেমন : লাউ, চালকুমড়া, শশা, পটল, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, শিম, বরবটি ইত্যাদি করা যেতে পারে, যাকে আমরা কভারক্রপ বলতে পারি। দোতলা কৃষি ক্ষেত্রে পরিচালিত গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় এর মাধ্যমে আবাদি জমির পরিমাণ (ব্যবহার) বৃদ্ধি, ফলন বৃদ্ধি, সবজি ফসলের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং মূল্য হ্রাস, কৃষকের আয় এবং অর্থনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেকারত্ব হ্রাস করা সম্ভব। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দোতলা কৃষি প্রযুক্তির প্রভাব দোতলা কৃষি পদ্ধতিতে যে কোন ভূমিখ-ে মাচার ক্ষেত্রফল জমির মোট পরিমাণের প্রায় ২৫%। কাজেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে কোন প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই সমগ্র দেশে (বনাঞ্চল, পাহাড়ী ও হাওড় অঞ্চল বাদে) আবাদি জমির পরিমাণ (ব্যবহার গত দিক হতে) সরাসরি ২৫% বেড়ে যাবে। এই হিসেবে বাংলাদেশের মোট ৮২.৯০ লাখ হেক্টর আবাদি জমির ২৫% বা ২০.৭৩ লাখ হেক্টরে বার্ষিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৪,০০০ কোটি টাকার বাড়তি আয় সম্ভব। সনাতন ও দোতলা কৃষি পদ্ধতিতে সৌর প্যানেল স্থাপনে পার্থক্য সনাতন পদ্ধতিতে ২৪টি সৌর প্যানেলের একটি পাম্প স্থাপনে প্রায় ১.৫ শতাংশ জমির প্রয়োজন হয় যেখানে প্যানেলের ছায়ার কারণে কোন ফসল চাষ করা সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে দোতলা কৃষি পদ্ধতিতে ২৪ টি সৌর প্যানেল স্থাপনে প্রায় ৭.৫ শতাংশ জমির প্রয়োজন হয়, যেখানে পুরো জমিতেই ফসল চাষ করা সম্ভব।
×