ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার মানুষ বাঁচাতে-

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঢাকার মানুষ বাঁচাতে-

মহানগরী ঢাকার দূষণরোধে দেরিতে হলেও সরকার উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব শিল্প-কারখানা পরিবেশ দূষণ করছে সেগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে নতুন করে দেশের কোন মহানগরীতে আর শিল্প স্থাপনের অনুমোদন দেবে না সরকার। মূলত পরিবেশ এবং পানি দূষণরোধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রবিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নদী দূষণরোধে গঠিত টাস্কফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকার মানুষ বাঁচাতে এসব পদক্ষেপ প্রত্যাশিত ছিল। এই ভয়ঙ্কর সত্য বার বার উচ্চারিত হয়েছে যে, ঢাকাকে ঘিরে বুড়িগঙ্গা এবং শীতলক্ষ্যাসহ নদীগুলোর দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব দূষণের জন্য ঢাকার শিল্প-কারখানাই দায়ী। শহরের হাজারীবাগের চামড়া শোধনাগার সাভার সরিয়ে নিলেও নদীর দূষণ কমছে না। শুধু ঢাকাই নয়, ঢাকার পাশের দুই নগরী গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও ঢাকার পরিবেশে বিষ ছড়াচ্ছে। অনেক দিন থেকেই শহুরে শিল্প সরিয়ে নেয়ার দাবি ছিল। খোদ রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠাও প্রতিরোধ করা যাচ্ছিল না। শুধু রাজধানী ঢাকাই নয়, অন্য বড় শহরের উপকণ্ঠেই শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছিল উদ্যোক্তারা। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, কেবল ঢাকার চার নদীতে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন বিষাক্ত তরল ও কঠিন বর্জ্য পড়ছে। এসব বর্জ্যরে ৬০ ভাগই ট্যানারি ও স্যুয়ারেজের, ৩০ ভাগ নানা শিল্প-কারখানার এবং বাকি ১০ ভাগ বর্জ্য অন্যান্য উৎসের। রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে ছোট বড় মিলে প্রায় আড়াই লাখ শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানার ৯৯ ভাগেরই তরল বর্জ্যরে পানি শোধনাগার নেই। রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকা তার জনসংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বহু বছর আগেই। এখন পৌনে দু-কোটি লোকের এই মহানগরীতে মানুষের গায়ে গা লাগার মতো দশা। ভুলে গেলে চলবে না মানুষই একমাত্র প্রাণ যার বেঁচে থাকা তথা সুস্থ থাকার জন্য শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই চলে না, মনের আহারও চাই তার। সে জন্য মানুষ নিজে কিছু সৃষ্টি করে, তা না হলে অন্যের সৃষ্টি উপভোগ করে। তার চাই নির্মল বিনোদন। এই আনন্দ উপভোগ আবার ঠিক ঘরে বসে পুরোপুরি লাভ করা যায় না। যদিও আধুনিক যুগ তার হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে নানা বিনোদনের অজস্র উপকরণ ও সম্ভার। তবু তার চাই ঘরের বাইরে যাওয়া, দল বেঁধে বিনোদন লাভ করা। ঢাকা মহানগরীতে মানুষের তুলনায় বিনোদন কেন্দ্রের বিরাট ঘাটতি রয়েছে। একটি আধুনিক শহরের আয়তন অনুসারে সহনীয় সংখ্যক নাগরিক থাকা যেমন সমীচীন, তেমনি পার্ক ও উদ্যান থাকাও বাঞ্ছনীয়। বিষয়টি নগর পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত। আর সেই নগর যদি মহানগর বা রাজধানী হয়, তবে তার পরিকল্পনা হতে হয় দূরদর্শী। খোলামেলা স্থান ও পার্ক একটি নগরের ফুসফুস হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ফুসফুস আক্রান্ত হওয়া মানে প্রাণটাই বিপদাপন্ন হয়ে ওঠাÑ সেকথা বলাই বাহুল্য। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে রাজধানী ঢাকার পার্কের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে এসেছে। হাতে গোনা যে কয়টি উদ্যান রয়েছে সেগুলো নানা কারণে কলুষিত হয়ে পড়ছে। ঢাকা এবং ঢাকার মানুষকে বাঁচাতে হলে এখনও করণীয় রয়েছে প্রচুর। সরকার এ বিষয়ে সচেতন। এখন চাই বিশেষ সক্রিয়তা।
×