ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমাকে স্বৈরাচার বলেন, কিন্তু কেন-প্রশ্ন এরশাদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমাকে স্বৈরাচার বলেন, কিন্তু কেন-প্রশ্ন এরশাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর গণ আন্দোলনে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দাবি করেছেন, তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে চাননি। তাকে কেন স্বৈরাচার বলা হয়, তাও তিনি বোঝেন না। স্বৈরাচার বলায় তিনি কষ্ট পাওয়ার কথাও জানান। শনিবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এরশাদ এসব কথা বলেন। স্বৈরাচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, অনেকে আমাকে স্বৈরাচার বলেন, কিন্তু কী স্বৈরাচারী করেছি আমি খুঁজে পাই না। এমন কী করেছি যে আমাকে স্বৈরাচার বলা হয়? আমি কখনই স্বৈরাচার ছিলাম না। রাজনৈতিক কারণে আমাকে এই উপাধি দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, কেউ যদি আমাকে স্বৈরাচার বলে তবে তার প্রমাণ আমার সামনে হাজির করুক। আমি প্রমাণ করতে পারব স্বৈরাচার ছিলাম না। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালে আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা নিয়েছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ, যা অবৈধ ছিল বলে পরে আদালতের রায় এসেছে। যদিও এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন এরশাদ নিজেই। তবুও বারবার যেন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চালান তিনি। অর্থাৎ রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজ সৃষ্টির চেষ্টা প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের। ক্ষমতা নেয়ার পর সংবিধান নিয়ে যথেচ্ছার করেন এরশাদ। দেশ পরিচালনাও করেন তার ইচ্ছা অনুযায়ী। বিক্ষোভ দমন করেন গুলি দিয়ে। ছাত্র-জনতার দাবি উপেক্ষা করে ক্ষমতায় বসে থাকার জন্য ‘বিশ্ববেহায়া’ কথাটিও শুনতে হয়েছিল তাকে। এরশাদ বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়ার কোন ইচ্ছা তার ছিল না। জাস্টিস সাত্তারের অনুরোধে দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তিনি তখন দেশ চালাতে অপারগ ছিলেন। আমি নির্বাচন দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কেউ নির্বাচনে আসেনি, আমাকে বাধ্য হয়ে দল গঠন করতে হয়েছে। এ ছাড়া কোন উপায় ছিল না। কারণ দল গঠন না করলে একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হতো। আমি সচেতন মানুষ হিসেবে এ ধরনের ক্ষতি করতে পারি না। কারণ আমি দেশপ্রেমিক। দেশকে ভালবাসি। কথিত আছে বিভিন্ন দলের নেতাদের ভাগিয়ে এনে জাতীয় পার্টি গড়েন এরশাদ। এই দলটি ছেড়ে যাওয়া অনেকে পরে দল পরিচালনায় এরশাদের স্বেচ্ছাচারী আচরণের কথাও বলেছিলেন। তাছাড়া এরশাদের দল ভেঙ্গে এখন জাতীয় পার্টি খ- খ- হয়ে চার ধারায় বিভক্ত। দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন দলে যোগ দিয়েছেন। কিছু নেতা নিজ থেকেই বিভিন্ন নামে দল গঠন করেছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদাতা দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের রেষারেষিতে এখনও দেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব নিয়ে থাকা পতিত সামরিক শাসক এরশাদ দাবি করেন, দেশের মানুষ এখন তাকেই ক্ষমতায় চায়। কারণ বড় দুই দল দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই জাতীয় পার্টি ছাড়া দেশে শান্তি ফিরে আসবে না। শান্তির জন্য জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আসা ছাড়া বিকল্প নেই বলেও মনে করেন এরশাদ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি নিরাপদ নয়, বিএনপির কাছে আওয়ামী লীগ নিরাপদ নয়। মানুষ শান্তিতে থাকতে চায়, নিরাপদে থাকতে চায়। আমি বলতে চাই, আমার কাছে সবাই নিরাপদ। আগামী নির্বাচনের জন্য জাতীয় পার্টির ৩০০ প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত এরশাদ। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কারণ আমাদের দল গণতন্ত্রে ও শান্তিতে বিশ্বাসী। আমরা মনে করি নির্বাচনই হলো সরকার পরিবর্তনের একমাত্র শান্তিপূর্ণ পথ। আশা করি আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ আমাকে ভোট দেবে। জাতীয় পার্টি সে দিনের অপেক্ষার প্রহর গুণছে। একুশের মাসে এই আলোচনা অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেন, ইংরেজী সাইনবোর্ডের নিচে বাংলা চালু আমিই প্রথম শুরু করি। আমিই অগ্রদূত। আমি ক্যালেন্ডারে ইংরেজীর নিচে বাংলা চালু করাও বাধ্যতামূলক করেছিলাম। কিন্তু ভাল ইতিহাস অনেকেই মনে রাখে না। কিন্তু দেশের মানুষ এই ইতিহাস ভুলে গেছে বলে আমি মনে করি না। শনিবারের যোগদান ও জাতীয় পেশাজীবী সমাজের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার কথা তুলে ধরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, বাংলা ভাষার জন্য অনেকে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু কেউ সর্বস্তরে বাংলা চালু করেনি, আমি চালু করেছি। এর জন্য ১৯৮৭ সালে সংসদে আইন পাস করেছি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সুনীল শুভরায়, জে অব খালেদ আখতার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ডাঃ ফাহিম আল ফয়সাল ও ডাঃ জাফর মিয়ার নেতৃত্বে ৫৬জন পেশাজীবী জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় পেশাজীবীদের আহ্বায়ক কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশ দেন পার্টি প্রধান এরশাদ।
×